‘তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের মুখপাত্র’
কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীরের মৃত্যুর খবর শোনার পর বারবার মনে হচ্ছে তার নামের সঙ্গে মেহনতি মানুষের গভীর যোগসূত্র আছে। তাদের জন্য হয়তো তিনি কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন গান। মে দিবসের অনুষ্ঠানে তার কণ্ঠে গানের ঝড় উঠত। পরিচিতি পেয়েছিলেন গণসংগীত শিল্পী হিসেবেই।
গণ মানুষের গুণী এই শিল্পীর মৃত্যুর পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরিচয়। ঢাকায় নিয়মিত থাকার আগে ১৯৭৭ সাল থেকে পরিচয়। তার সঙ্গে গিটার বাজিয়েছি আমি। ফিরোজ সাঁই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীর একসঙ্গে যখন গান করতেন তখন থেকেই গভীর জানাশোনা হয়েছিল। বাঙালির প্রতিটা আন্দোলন, সংগ্রামে সোচ্চার হয়ে গান গাইতে দেখেছি তাকে। গণসংগীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব একজন ছিলেন। মাটি মানুষের গান করতেন। আমাদের বিপদে সবকিছু ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়েতে দেখেছি। অসম্ভব পরোপকারী মানুষ ছিলেন। মাথার ওপর থেকে বড় ভাইয়ের ছায়া সরে গেল আমার।'
ফেরদৌস ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। ১৯৭৩ সাল থেকে আমাদের পরিচয়। ওর বিয়েতে অনেক মজা করেছি। একসঙ্গে গানের অনুষ্ঠান করেছি। কত মজার গল্প আছে। তার কণ্ঠের গণসংগীত মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখবে। আমার বন্ধুর স্মৃতি বুকের ভেতর থাক।'
কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একজন টগবগে যুবকের প্রাণশক্তি ভরা মানুষ ছিলেন তিনি। করোনার ভয়াল থাবা তাকে নিয়ে গেলো। এই দুঃখ প্রকাশের ভাষা আমার নেই। সারাজীবন গণসংগীত নিয়ে একরকম যুদ্ধ করে গেছেন। যুদ্ধ করতে করতে নিজের একটা অটল পাহাড় সমান দুর্গম দুর্গ তৈরি করেছিলেন, করতে পেরেছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের মুখপাত্র।'
ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান।
তার কণ্ঠে কালজয়ী গানগুলো হলো- সান্তাহার জংশনে দেখা, বনমালী তুমি, কালো কালো মানুষের দেশে, মায়ের একধার দুধের দাম, আহারে কাল্লু মাতব্বর, জুলেখা এবং ও সখিনা গেছোস কি না ভুইল্যা আমারে।
Comments