চলে গেলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়
চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাদ প্রতিম এই সঙ্গীতশিল্পী। পর দিন তাকে গ্রিন করিডোর করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল।
তার দু'দিন আগেই পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে মুগ্ধ কয়েক প্রজন্ম। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ভাষার সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি। সিনেমার গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন তিনি।
'কে তুমি আমারে দেখো', 'তুমি না হয় রাখিতে কাছে', 'ঝিকিমিকি তাঁরা', 'ওগো মোর গীতিময়' কিংবা 'তীর বেঁধা পাখি', 'হয়ত কিছুই নাহি পাব', 'আয় বৃষ্টি ঝেপে ধান দেব মেপে', 'মায়াবতী মেঘে এল তন্দ্রা', 'শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি', 'চম্পা চামেলি গোলাপেরই' এর মতো অসংখ্য গান গেয়ে আজও বাঙালির মনে-অস্তিত্বে মিশে আছেন তিনি।
বড়ে গুলাম আলি খাঁর শিষ্যা ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সঙ্গীতে শিক্ষার মূলে ছিলেন দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন 'অঞ্জনগড়' সিনেমায়।
১৯৫০ সালে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন আধুনিক গানের সম্রাজ্ঞী সন্ধ্যা। মোট ১৭টি হিন্দি সিনেমায় প্লেব্যাক করেন তিনি। রাইচাঁদ বড়াল, শচীন দেব বর্মন থেকে শুরু করে সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়সহ সেই সময়ের সমস্ত দিকপাল সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। উত্তম সুচিত্রার লিপে তার ও হেমন্তের রোমান্টিক গান আজও সমান জনপ্রিয়।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৭১ সালে 'জয়জয়ন্তী' ও 'নিশিপদ্ম' ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান পান তিনি। ২০২২ সালে তাকে 'পদ্মশ্রী' দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এতদিন পরে এ সম্মান দেওয়ায়, অভিমানে পদ্মশ্রী নিতে অস্বীকার করেন তিনি।
Comments