মোহাম্মদ ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার

ট্র্যাজেডি রাজা, অভিনয়ের দেবতা... এমন অনেক উপাধির মুকুট পেয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। জায়গা করে নিয়েছিলেন সিনেমার পর্দা থেকে মানুষের মনের গভীরে। তাই দিলীপ কুমার শুধু নাম নয়, একটি মালা। যে মালায় গাঁথা হয়েছিল বলিউডের একেকটি সিনেমা। কিন্তু কীভাবে তিনি দিলীপ কুমার হয়েছিলেন?
দিলীপ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

ট্র্যাজেডি রাজা, অভিনয়ের দেবতা... এমন অনেক উপাধির মুকুট পেয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। জায়গা করে নিয়েছিলেন সিনেমার পর্দা থেকে মানুষের মনের গভীরে। তাই দিলীপ কুমার শুধু নাম নয়, একটি মালা। যে মালায় গাঁথা হয়েছিল বলিউডের একেকটি সিনেমা। কিন্তু কীভাবে তিনি দিলীপ কুমার হয়েছিলেন?

জন্মের পর বাবা-মা তার নাম দিয়েছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ খান। বোম্বে টকিজের মাধ্যমে মোহাম্মদ ইউসুফ খানের (দিলীপ কুমার) ক্যারিয়ার শুরু হয়। বোম্বে টকিজের তখনকার প্রধান দেবিকা রানী এই নাম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই তিনি দিলীপ কুমার নামটি ভেবেছিলেন। কারণ এই নামের সঙ্গে ‘রোমান্টিক ভাবমূর্তির’ সামঞ্জস্য থাকবে আবার একটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ আবেদন’ থাকবে। তখন থেকেই তিনি দিলীপ কুমার হয়ে উঠলেন। গতকাল বুধবার ৯৮ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন সেই ইফসুফ খান তথা দিলীপ কুমার।

তিনি কীভাবে ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার হয়েছেন তার বিশদ লিখে গেছেন আত্মজীবনী ‘দ্য সাবস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য শ্যাডো’তে।

কুমার লিখেছেন, ‘একদিন সকালে আমি স্টুডিওতে প্রবেশ করি। তখন বলা হলো- দেবিকা রানী আমাকে তার অফিসে দেখতে চান। আমাকে কেন ডাকা হলো তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আবার অবাকও হলাম। তবে, আমি নিশ্চিত ছিলাম কোনো রকম অস্তুষ্টি প্রকাশ করতে আমাকে ডাকা হয়নি। কারণ, তিনি যখনই আমার সঙ্গে দেখা দেখা করতেন তার আচরণ অনেক সৌজন্যপূর্ণ থাকত। তিনি সবসময় জানতে চাইতেন, আমি কেমন আছি। সুতরাং কী কারণ ডাকা হলো বুঝতে পারছিলাম না।’

দিলীপ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

তারপর দিলীপ কুমার রানীর অফিসে ঢুকলেন। রানি ডেস্কে বসেছিলেন এবং একটু হেসে তাকে বসতে বললেন।

দেবিকা রানী তার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সৌজন্যমূলক কথোপকথন শুরু করেন। তিনি জানালেন, শহরের একটি ইংলিশ স্টোর থেকে কেনা চা পাতা থেকে তার জন্য বিশেষভাবে চা বানাবেন কিনা।

আত্মজীবনী অনুসারে- এরপর দেবিকা রানী মূল কথায় আসেন এবং বেশ সহজভাবে বলেন, ‘ইউসুফ, আমি অভিনেতা হিসেবে শিগগির আপনার অভিষেকের কথা ভাবছি। আমরা ধারণা আপনি যদি পর্দার জন্য আলাদা একটি নাম বেছে নেন তাহলে খারাপ হবে না।’

‘আপনি জানেন, আপনার জন্য এমন একটি নাম দরকার যা সহজেই দর্শক গ্রহণ করবে। একইসঙ্গে যা রোমান্টিক দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। আর পর্দার মাধ্যমেই আপনি সেটি অর্জন করবেন। আমার মনে হয়- দিলীপ কুমার খুবই সুন্দর একটি নাম।’

দেবিকা রানী দিলীপ কুমার নামটি বারবার আওড়াচ্ছিলেন এবং তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘এটা আপনার কাছে কেমন শোনাচ্ছে?’

কুমার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি তখন নির্বাক ছিলাম। তিনি আমাকে নতুন পরিচয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। আমি এজন্য পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিলাম না। আমি বলেছিলাম- এটি ভালো শোনাচ্ছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম- সত্যিই নাম পরিবর্তন প্রয়োজনীয় কিনা।’

‘তিনি মিষ্টি করে হাসলেন এবং আমাকে বলেছিলেন, এটি করা বিচক্ষণতা হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, অনেক ভেবে পর্দায় আলাদা নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

দেবিকা রানী সেদিনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- দিলীপ কুমারের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার সফল এবং দীর্ঘ হবে। রানী বলেছিলেন, ‘এই নামটিই একদিন ইতিহাস হবে।’

তবে, দিলীপ কুমার নাম নিয়ে সেদিনে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি ভাবতে সময় নিলেন।

দিলীপ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

দেবিকা রানী তখন বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে... আপনি ভেবে তারপর আবার এসে সিদ্ধান্ত জানাবেন। কিন্তু, আমরা আপনার অভিষেক শুরু করতে প্রস্তুত। তাই যা করার দ্রুত করতে হবে।’

কুমার সেদিন তার রুটিন অনুযায়ী কাজ করছিলেন। কিন্তু, তার মনে বারবার ‘দিলীপ কুমার’ নামটি বাজছিল। তিনি বেশ চিন্তিত ছিলেন। আর এটি চোখে পড়েছিল এস মুখার্জীর। যিনি দেবিকা রানীর পরে বোম্বে টকিজের কার্যকরভাবে সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন।

মধ্যাহ্নভোজনের পর শুটিং মঞ্চে কাজ শুরু হয়। তখন মুখার্জী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কোনো বিষয়ে বিরক্ত কিনা এবং সেটা বলা যাবে কিনা।

আত্মজীবনীতে কুমার বলেন, ‘দেবিকা রানীর পরামর্শের কথা আমি এস মুখার্জী সাহেবকে বলেছিলাম। তিনি এক সেকেন্ড থামলেন এবং আমার চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে বললেন, ‘আমি মনে করি তার পরামর্শ খারাপ না। তিনি পর্দার জন্য যে নামটির পরামর্শ দিয়েছেন তা নেওয়া আপনার জন্য ভালো হবে। এটি খুব সুন্দর নাম। যদিও আমি সবসময় আপনাকে ইউসুফ নামে চিনব, যেভাবে আপনার ভাই বোন এবং বাবা-মা চেনে।’

মুখার্জীর কথা কুমারের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যা তার সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমার নামে ‘জোয়ার ভাটা’ সিনেমায় আত্মপ্রকাশ হয় মোহাম্মদ ইউসুফ খানের। আর তারপর তো দিলীপ কুমার ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম বড় নাম হয়ে ওঠে।

Comments

The Daily Star  | English

The contradiction of comfort

How comfortable is it to not have clean air to breathe?

7h ago