মহামারির আগের অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে আমদানি ব্যয়

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় মহামারির আগের অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তীব্র পতনের মধ্যে যা শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ।
export_3sep21.jpg

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় মহামারির আগের অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তীব্র পতনের মধ্যে যা শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুলাই ও আগস্ট মাসে ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট) নিষ্পত্তির হার (যা প্রকৃত অর্থে আমদানি ব্যয় নামে পরিচিত) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১০ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যয় করেছিল ৮ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পণ্য জাহাজীকরনের ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকভাবে। যা আমদানি খরচকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমানের মতে, আমদানি বৃদ্ধি এই ইঙ্গিত দেয় যে, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি সঠিক পথে আছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ব্যবসায়ীরা ৬৩৯ মিলিয়ন ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেছেন। আগের বছরের তুলনায় যা ১১ শতাংশ বেশি।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়ার বিষয়টি একটা ভালো লক্ষণ। এর মানে হচ্ছে ব্যবসা বাড়ছে।

'কিন্তু আমাদের বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের প্রভাবের বিষয়টাও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ আমদানিকৃত পণ্যের দামও বাড়তির দিকে।'

বৈশ্বিকভাবে পণ্যের চাহিদা বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ সংকটপূর্ব সময়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ফরস্বরূপ এখনই কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুল্যস্ফীতির চাপ দেখা যাচ্ছে। যা সামনের দিনগুলোতে আরও তীব্র হতে পারে।

সিপিডির সম্মানীয় এই ফেলোর ভাষ্য, 'আয় না বাড়লে এটা সাধারণ মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'

জ্বালান দাম বৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতি বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকার রাখতে পারে।

জুলাই-আগস্টে জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক শূণ্য ৪ বিলিয়ন ডলারে। গত বছরের তুলনায় যা ৭১ শতাংশ বেশি।

অবশ্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদের মতে, বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি এখনও দেশের ওপর বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি।

তিনি বলেন, ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানির চাহিদা হঠাৎ করে বাড়ার কারণে এর আমদানির পরিমাণও উচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে সামনের মাসগুলোতে জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ আরও বাড়বে। 

গত ৮ অক্টোবর প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ২ ডলারে। আগের বছরের একই সময়ে এর দাম ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডলার।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চলার কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণও বেড়েছে।

এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে মন্তব্য করে এমরানুল হক আরও বলেন, 'এখনও বেসরকারি খাত তাদের কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে চলেছে। অর্থনীতির জন্য এটা ভালো লক্ষণ।'

বৈশ্বিক বাজারে স্ক্র্যাপ মেটাল ও তুলার মতো শিল্প কাঁচামালের দামও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

জুলাই ও আগস্টের মধ্যে ব্যবসায়ীরা ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করেছেন। আগের বছরের তুলনায় যা ৩৭ শতাংশ বেশি।

আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ আনুপাতিক হারে না বাড়লে সামনের মাসগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।

তাই বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়তে শুরু করেছে।

গত অর্থবছরে রেকর্ড ৭ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার কেনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ৯৪৬ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। কারণ আমদানি বৃদ্ধি, আশানুরূপ রপ্তানি না হওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ধীরগতির মধ্যে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার সঙ্কটে ভুগছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য, বেশিরভাগ দেশ তাদের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশও মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সুতরাং আমদানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুলাই-আগস্টে ঋণপত্র খোলার হার ৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে।

অনুবাদ করেছেন মামুনুর রশীদ

Comments