চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মহামারির আগের সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মহামারির আগের সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।

করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পশ্চিমের অর্থনীতি আবার গতি পাচ্ছে এবং এ ধরনের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণেই মূলত রপ্তানি বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদকরা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৭১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করেছেন। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ২২৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময়ে ২৫৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এ বছরের অর্জন তারচেয়ে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৩২৪ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছিল, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কিন্তু পরবর্তী কয়েক বছরে ভোক্তাদের আকর্ষণ কমে যাওয়া এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ সংক্রান্ত নীতিমালার সঙ্গে মানিয়ে চলার ব্যর্থতার কারণে রপ্তানি কমতে থাকে। মহামারিতে বিপুল ক্ষতির মুখে পরে এই খাত। রপ্তানির পরিমাণ তলানিতে এসে দাঁড়ায়।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার তৈরি ফুটওয়্যার পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে চালানের পরিমাণ বাড়ার কারণে চলতি অর্থবছরে চামড়া খাতের রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি এখনো বাড়েনি।'

যেসব রপ্তানিকারকরা উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্য বিক্রি করেন, তারা গত প্রান্তিকে বড় ধরণের প্রবৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, এই ধারা আগামীতে অব্যাহত থাকতে পারে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর মনে করেন, উৎপাদনকারীরা মহামারির সময়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং তাদের কারখানা ও কর্মীদের সুরক্ষিত রাখার জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। এই প্রচেষ্টার ফল হিসেবে প্রথাগত বাজারের বাইরে রাশিয়া ও মরক্কোর মতো নতুন বাজারের খোঁজ পাওয়া গেছে।

তিনি যোগ করেন, 'এতে রপ্তানি বাড়ছে।'

নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানিকারকরা মহামারির পুরো সময়ে চামড়া পণ্য রপ্তানিকারকদের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। কারণ স্বল্পমূল্যের সিনথেটিক উপকরণ দিয়ে তৈরি ফুটওয়্যারের চাহিদা বৈশ্বিক বাজারে অনেক বেড়েছে।

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর মনে করেন, পশ্চিমের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়তে শুরু করলে এই খাতের পুনরুদ্ধার গতিশীল হবে।

লেদারেক্স ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ নাজমুল হাসান সোহেল জানান, মূল বাজারগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য আরোপিত লকডাউন শিথিল হওয়াতে চামড়ার তৈরি ফুটওয়্যার ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

তিনি জানান, মহামারির কারণে রাজস্ব কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ২০২০ সালে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। 'ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন', বলেন তিনি।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সহ-সভাপতি সোহেল জানান, বিক্রি কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের খুচরো দোকানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

তিনি বলেন, 'আমরা ২০২০ এ ভয়াবহ সময় কাটিয়েছি। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং রপ্তানি বাড়ছে। যদি মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে রপ্তানি থেকে আয় ২০২২ অর্থবছরে আরও বাড়বে।'

এই খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, মহামারির ভয়াবহ প্রভাব কমে আসায় ভোক্তাদের আয় বাড়ছে এবং তারা বেশি পরিমাণে চামড়ার তৈরি পণ্য কিনছেন।

ডিজাইন বাই রুবিনা নামের একটি চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী রুবিনা আখতার মুন্নী জানান, দেশ ও দেশের বাইরের সম্ভাব্য ক্রেতারা পণ্য নিতে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

এই উদ্যোক্তা তার ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নয়ন হতে থাকলে আগামী ২ মাসে ব্যবসা আরও বাড়বে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

1h ago