বনের বানর ধরে ভ্যাকসিন ট্রায়াল!
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে বানর ধরতে গিয়ে জনরোষের মুখে লাঞ্ছিত হয়েছেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তারা বানর ধরতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
লাঞ্ছনার শিকার গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মিডিয়া কনসালটেন্ট মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘করোনা টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে প্রাণীদেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাই করা প্রয়োজন। সরকারের অনুমতি নিয়েই আমরা বানর ধরতে গিয়েছিলাম।’
বরমী বাজার এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেন তারা। কিন্তু, স্থানীয় কিছু মানুষ বানরের জন্য টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এসময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সাসহ বানরগুলোও ছিনিয়ে নিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে বরমী বাজারে কয়েকজন আসেন বানর ধরতে। তারা খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয়দের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মোট ১৪টি বানর ধরে ফেলেন। কিন্তু, তাদের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এলাকাবাসীর সন্দেহ বেড়ে যায়। পরে তাদেরকে বরমী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তারা আরও জানান, বরমী বাজারের বাসিন্দারা দীর্ঘকাল ধরেই বানরের নানা অত্যাচার সহ্য করেও তাদের যত্ন করে আসছে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকার পরও বানরগুলোকে বরমী বাজারবাসীরা অভুক্ত রাখেনি। বরমীর বানরই বরমী বাজারের ইতিহাসের অংশ। বানরগুলোকে খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে খাঁচায় বন্দি ও অজ্ঞান করায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘বানর ধরতে যারা এসেছিলেন, তাদের কেউ লাঞ্ছিত বা তাদের কাছ থেকে কিছুই ছিনিয়ে নেয়নি। এসব মিথ্যা অভিযোগ। বরং তারাই নিয়ম না মেনে, স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে সন্দেহপ্রবণভাবে বরমীর ঐতিহ্য বানর ধরতে এসেছিলেন।’
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য ৫৬টি বানরের প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে গত ২৬ জুন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তাদেরকে বানর ধরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা গত ২৯ জুন থেকে তিন দিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছেন। বাকি বানর ধরার জন্য রোববার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের অবগত না করেই শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে স্থানীয়রা তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এ ঘটনায় পুলিশ তাদের উদ্ধার করলেও বানর ধরে নিয়ে যেতে পারেননি।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, ‘স্থানীয়রা তাদেরকে পাকড়াও করে বানরগুলো ছেড়ে দেয়। এর মধ্যে অজ্ঞান করায় দুটি বানর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্লোব বায়োটেক ফার্মাসিউটিক্যালসের আট কর্মকর্তাকে ক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে তাদের কাছে থাকা বন মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
Comments