সুনামগঞ্জে ৬৫০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে
'প্রথমে হাওর জুড়িয়া পানি আইলো, তাড়াহুড়া করিয়া গিয়া ধান কাটলাম, এখন গেল ২ দিনের মেঘে ঘরেও পানি আইয়া কাটা ধানও নষ্ট করি দিসে, আমরা বিপদও পড়ছিরে বাবা এখন এই ভিজা ধান কিলান কিতা করতাম বুঝিয়া উঠতে পাররাম না।'
এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সুনামগঞ্জের লালপুর এলাকার কৃষক শফিক।
টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি প্রবেশ করছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাওরের মানুষ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গৌরারং, সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে ডুকে পড়েছে পানি। এছাড়া নিম্নাঞ্চল হওয়ায় কাঁচা রাস্তা পানিতে ভেসে গিয়েছে। এখন যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা। আর সেই নৌকা করে ধান নিয়ে রাস্তায় শুকাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যদিকে যাদের ধান আর ঘর দুটোই পানিতে তলিয়ে গেছে তারা পড়েছেন মহাবিপদে। কী করবেন সামনের দিনগুলোতে সেটি নিয়েই বেশি চিন্তিত হাওর এলাকার মানুষ।
লালপুর এলাকার জামিলা বেগম বলেন, 'ধান সব নিসে পানি। ১০ কেয়ার জমিত করছিলাম মাত্র দুই কেয়ার তুলতে পারছিলাম। এখন এই ধানগুলাও ভিজা, ৩ দিন ধরি ধানগুলা পানিত ভিজেছে কিছু করার ছিল না। আজকে রোদ উঠেছে তাই রাস্তার নিয়ে শুকাচ্ছি। এই ধান বেচতাম কিলান আর বেচলে এই টাকা দিয়া আমার সংসার কয়দিনইবা চলব।'
সিলেটের শাহপরান থানায় কাজ করেন হোসেন মিয়া, ধান কাটা ও ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। তবে বাড়িতে এসেই মাথায় হাত তার।
তিনি বলেন, বড় শখ করে ধান করছিলাম। আমরার ধানটা বৈশাখ মাসের ধান। কিন্তু পাকা ধান মাঠ আছিন আইলাম বাড়ি ধানটা কাটতাম। একটাদিম বাড়িত রেস্ট নিতে পারছি না ।এক রাইতের মেঘে পাকা ধান সব নষ্ট করি দিসে। মন মেজাজ খুব খারাপ ভাই এখন।'
বাজারে পণ্যের দামে দিশেহারা হাওরের ক্ষতিগ্রস্তরা
ধানে চাষে ক্ষতির পর হাওরে পানি, আবার বাজারে পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি। এতে করে বিপাকে পড়েছেন হাওরের কৃষক। চাল ঘরে থাকলেও তেল নুন আর সবজির কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
গৌরারং এলাকায় ঘরে পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নুর আলী। তিনি বলেন, 'আমার ধান করার জমি নাই। মানুষের লগে ধান কাটিয়া কিছু ধান পাইছলাম ইকান থকি চাল পাইছি। কিন্তু খালি চাল দিয়া কিতা করতাম। তেল নুন সবজিওতো লাগে। তেলের দাম ২০০ টাকা। ইটা গরিব মারার নতুন ফন্দি।'
রথি দাশ নামে এক কৃষক বলেন, 'ধানের দাম সরকার ঠিক করিয়া দিলেও আমরা এই দামে ধান দিতে পারি না। আর যে দামে ধান দেই এই দামে ১ মাস ভালা করি খাওয়া যাইতো না। বাজারে যাইতে ভয় লাগে। এর মাঝে পানি আইছে। ছোট ছেলেয় জাল নিয়া গেছে হাওর মাছ মারতো। হে মাছ আনলে তো গিয়া ভাত খাইতাম।'
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, 'গেল ৩ দিনের বৃষ্টিতে হাওরে পাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আজকে পর্যন্ত ৬৫০ হেক্টর জমির পাকা ধান নিমজ্জিত হয়েছে।'
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, 'সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়েই বইছে। তবে যদি পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত তাকে তাহলে পানি আরও বাড়তে পারে।'
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে তাদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।'
Comments