রাজশাহী

বর্ষায় ভরা পদ্মায় বালির ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড

উজান থেকে বয়ে আসা পানির তোড়ে পদ্মার দুকূল যখন ফুঁসে উঠেছে, তখন ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় বালির ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে রাজশাহীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র টি-গ্রোয়েনে।
বর্ষায় ভরা পদ্মায় বালির ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে রাজশাহীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র টি-গ্রোয়েনে। ছবি: স্টার

উজান থেকে বয়ে আসা পানির তোড়ে পদ্মার দুকূল যখন ফুঁসে উঠেছে, তখন ভেসে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় বালির ব্যাগ ফেলা শুরু হয়েছে রাজশাহীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র টি-গ্রোয়েনে।

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব বালির ব্যাগ ফেলা শুরু করে।

গতকাল থেকে জনগণের নিরাপত্তার জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে পাউবো কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে গ্রোয়েনে প্রবেশের সব পথ।

এরপর, গতকাল থেকে সেখানে জিও বালির ব্যাগ ফেলতে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কর্তৃপক্ষ শুষ্ক মৌসুমে আলসেমি করে। পরে, বর্ষায় পানি বাড়ার পর তারা ভাঙনরোধে বালির ব্যাগ ফেলা শুরু করে। এটা একপ্রকারের অর্থহীন কাজ।

বর্ষায় পানি বাড়ার পর ভাঙনরোধে বালির ব্যাগ ফেলাকে অর্থহীন কাজ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: স্টার

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ সময় ঠিকাদার ও প্রশাসনের লোকজন মিলে অল্প কিছু বালির ব্যাগ ফেলে দেখায় যে প্রচুর ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্নীতি করা সহজ হয়।'

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়দের অভিযোগ সত্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা শুষ্ক মৌসুমেও কাজ করেছি। গত জুন থেকে কংক্রিট ব্লক ও বালির ব্যাগ ফেলা শুরু করেছি। যথাযথ মূল্যায়ন ও জরিপের পর আমরা এখন বালির বস্তা ফেলছি।'

বর্তমানে নদীতে প্রবল স্রোত থাকার কারণে টি-গ্রোয়েন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'চলতি বর্ষা মৌসুমে গ্রোয়েনে কমপক্ষে ১৬ হাজার বালির বস্তা ফেলার পরিকল্পনা ছিল। ইতোমধ্যে সেখানে প্রায় ১৪ হাজার ব্যাগ ফেলা হয়েছে।'

'এখানে অন্যায় বা দুর্নীতির করার কোন সুযোগ নেই' উল্লেখ করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, 'এখানে একটি টাস্কফোর্স আছে। টাস্কফোর্সে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিরা থাকেন। তাদের উপস্থিতিতে বালির ব্যাগ গুনে গুনে নদীতে ফেলা হয়।'

প্রতিটি বালির ব্যাগে ৪৫০ টাকা খরচ হয় বলেও জানান তিনি।

দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদক আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টি-গ্রোয়েনে অবস্থান করেন। সে সময় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন সার্ভেয়ার ও কর্মরত শ্রমিকরা ছাড়া বালির ব্যাগ গুনতে অন্য কাউকে দেখা যায়নি।

সেখানে মাত্র ২০ জন শ্রমিককে একটি নৌকায় করে বালির ব্যাগ ফেলতে দেখা গেছে। শ্রমিকরা নদীর বাম তীর থেকে জিওটেক্সটাইল ব্যাগে বালু ভর্তি করে নৌকায় বহন করে গ্রোয়েন পয়েন্টে নিয়ে ফেলছে।

পাউবোর ঠিকাদার জামাত খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় টি-গ্রোয়েন। এরপর ৯০ এর দশকের শেষের দিকে এটা মেরামত করা হয়েছিল।'

পাউবো টি-গ্রোয়েন সংস্কারের প্রস্তাব দিলেও প্রকল্পটি এখনও অনুমোদিত হয়নি বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান আরও বলেন, 'ইদানিং আমি ঠিকাদারিতে যুক্ত নেই। তবে, আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্য একজন ঠিকাদার বালির ব্যাগ ফেলার কাজটি করছে।'

Comments