আকস্মিক বন্যায় তিস্তাপাড়ের কৃষকের বড় ক্ষতি

নির্বাক হয়ে আছেন তিস্তাপাড়ের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৬২)। মাত্র আর কয়েকদিন পর খেতের আমন ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল। আশা ছিল এবার আমন ধানে গোলা ভরে যাবে। মোসলেমের স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যায় তার ৭ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার চোখে আশার বদলে শুধু অশ্রু।
আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তিস্তাপাড়ের কৃষক। ছবি: এস দিলীপ রায়

নির্বাক হয়ে আছেন তিস্তাপাড়ের কৃষক মোসলেম উদ্দিন (৬২)। মাত্র আর কয়েকদিন পর খেতের আমন ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল। আশা ছিল এবার আমন ধানে গোলা ভরে যাবে। মোসলেমের স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যায় তার ৭ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার চোখে আশার বদলে শুধু অশ্রু।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড় কালমাটি এলাকার মোসলেম উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাবতেই পারছি না ধান ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। নিরুপায় হয়ে আছি। কিভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে সার ও কীটনাশকের দোকানের বাকি টাকা শোধ করবো?'

তিনি আরও বলেন, 'জীবনে এমন আকস্মিৎ বন্যা দেখিনি। হঠাৎ পানি এসে খেতের ধান ডুবিয়ে দিলো। সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে সেগুলো এখন গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি।'

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের ডাউয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক নবীর হোসেন (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অকাল বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছিলাম। সবগুলো ভুট্টাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খেতে দেওয়ার জন্যে সার কিনে বাড়িতে রেখেছিলাম। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়েছে।'

'আকস্মিক বন্যায় আমি চরম ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যার কোনো পূর্বাভাস ছিল না। মোকাবিলার কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।'

'এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমরা চরে ভুট্টা চাষ করি। আকস্মিক বন্যা আমাদেরকে আরও বেশি ঋণগ্রস্ত করে দিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড় গড্ডিমারী এলাকার কৃষক সাহেব আলী (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন বন্যা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। ৪ একরের ২ পুকুরে মাছ চাষ করেছিলাম। ২৫ লাখ টাকার বেশি মাছ ছিল। কয়েকদিন পর মাছ বিক্রির কথা ছিল। আকস্মিক বন্যায় সব মাছ ভেসে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বন্যায় সব হারিয়ে এখন দিশেহারা। ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করছিলাম।'

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। বুধবার সকালে এক নিমিষেই তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। ১৫ হাজার একরের বেশি জমির ফসল বন্যায় তলিয়ে গেছে। দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানির তোড়ে খামারের বিপুল সংখ্যক মুরগিও ভেসে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামিম আশরাফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অকাল বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের খেত এখনো পানির নিচে। কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

EVMs, the EC, and waste of public money

Why did the EVM experiment fall on its face?

10h ago