১১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে অস্থায়ী ঘরে
ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়ের জায়গা ও ঘর বিলীন হওয়ায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে অস্থায়ী ঘরে।
এসব ঘরে পাঠদানে শিক্ষকরা যেমন অস্বস্তিতে পড়েছেন, তেমনি শিক্ষার্থীরাও শিক্ষাগ্রহণে মনোযোগী হতে পারছে না।
কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, সম্প্রতি নদীভাঙনে কুড়িগ্রামে ৮টি ও লালমনিরহাটে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা ও ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখতে শিক্ষকরা স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন। বর্তমানে সেখানে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাইফুল ইসলাম। গত বছর যখন সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল তখন করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৮ মাস পর সহপাঠীদের সঙ্গে সাইফুল বিদ্যালয় এসে দিশেহারা হয়ে পড়ে। আগের সেই রঙিন টিনের সুন্দর বিদ্যালয়টি আর নেই। চোখে পড়ে একচালা একটি টিনের ঘর। তার সামনে ওড়ছে জাতীয় পতাকা। পরে জানতে পারে এটি তাদের বিদ্যালয়।
'আমাদের সেই সুন্দর স্কুল ঘরটি নেই তা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। স্কুল তিস্তায় ভেঙে গেছে,' উল্লেখ করে সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলে, 'নতুন স্কুল ঘরে পড়ায় মন বসাতে পারছি না।'
পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক শাহিনুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একমাস আগে তিস্তার ভাঙনে বিদ্যালয়ের জায়গা ও ভবনের কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। কিছু আসবাবপত্র রক্ষা করা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আপাতত একটি একচালা টিনের ঘর তৈরি করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি।'
স্কুল ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এভাবে অস্থায়ী ঘরে পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলের জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুল ঘরের কিছু অংশ ও আসবাবপত্র উদ্ধার করতে পেরেছি। অন্যের জমিতে অস্থায়ী একটি একচালা টিনের ঘর তৈরি করে পাঠদান চালানো হচ্ছে।'
এভাবে পাঠদান করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) গোলাম নবী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে অস্থায়ী ঘরে পাঠদান চালাতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।'
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) শহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীতে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলো পুনর্নির্মাণের জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে। আপাতত অস্থায়ী ঘরে পাঠদান অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
এই বছরেই বিদ্যালয়গুলো পুনর্নির্মাণের সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
Comments