ঢাবি গ্রন্থাগারে প্রবেশ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধের পর শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রন্থাগার খুলে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার (বিজ্ঞান শাখাসহ) ও বিভাগ-ইনস্টিটিউটের সেমিনার গ্রন্থাগারগুলো খুলে দেওয়া হয়। তবে বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, সকালে গ্রন্থাগার খুলে দেওয়ার পর ফটকে অন্তত এক ডোজ করোনা টিকার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখা সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করতে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞান গ্রন্থাগারে কিছু শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আগের মতোই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে যত্রতত্র বসে পড়তে শুরু করেন।
এসময় ভেতরের সব আসন পূর্ণ হয়ে গেলে গ্রন্থাগারের মুল ফটক আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। তখন এই গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি। তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশ করে।'
সরেজমিনে দেখা যায়, এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর গ্রন্থাগারে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, তা পরিদর্শন করতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, প্রধান গ্রন্থাগারিক নাসিরউদ্দিন মুন্সি ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামূল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা লাইব্রেরিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহা এক শিক্ষার্থীকে চড় মারতে তেড়ে গেলে প্রতিবাদে তাকে ঘিরে ধরেন শিক্ষার্থীরা। এসময় গ্রন্থাগারের ভেতরে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে গেলে ক্যাম্পাসে কর্মরত ২ সাংবাদিককে হেনস্তা করেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি তারা ধারণকৃত ভিডিও জোরপূর্বক মুছে ফেলতেও বাধ্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রন্থাগারে শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রবেশের কথা থাকলেও চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া সাবেক শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি। শিক্ষার্থীরা হইহুল্লোড় করে গ্রন্থাগারের ভেতরে ঢুকে পড়ায় তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রন্থাগারে শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রবেশের অনুমতি ছিল। কিন্তু সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করেছে।'
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, 'শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা যদি অসহযোগিতা করে, তাহলে আমাদের কী করার আছে। গ্রন্থাগারে কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রবেশের কথা ছিল। এখন সাবেক শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়েছে। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।'
'শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছে অভিভাবক তুল্য। তাদের শাসন করার অধিকার শিক্ষকদের আছে। শিক্ষার্থীদের সেটি বোঝা প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার সময়েও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনের চত্বর, গাছের নিচে ও গ্রন্থাগারের বারান্দায় চেয়ার টেবিল এনে পড়াশোনা করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। এদের বেশিরভাগই সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা যায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে আজ থেকে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার ও সেমিনার গ্রন্থাগারগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। একই শর্তে এই দুই বর্ষের শিক্ষার্থীদের আগামী ৫ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে হলে তোলা হবে।
যদিও আজ গ্রন্থাগারে প্রবেশের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা এবং আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে তা নিশ্চিত করা যায়নি।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার জন্য গ্রন্থাগার খোলা রাখতে হবে।
Comments