অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়েই জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন জাহিদুল

দুটি হাত না থাকলেও সাইকেল চালানো, খেলাধুলা, সাঁতার কাটাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করছেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৫)। অদম্য সাহস আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই প্রতিবন্ধী জীবনকে জয় করে চলেছেন তিনি। সুন্দর হাতের লেখা ও ভালো ছাত্র হিসেবে সবার কাছে প্রশংসিত জাহিদুল। 
ছবি: সংগৃহীত

দুটি হাত না থাকলেও সাইকেল চালানো, খেলাধুলা, সাঁতার কাটাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করছেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৫)। অদম্য সাহস আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই প্রতিবন্ধী জীবনকে জয় করে চলেছেন তিনি। সুন্দর হাতের লেখা ও ভালো ছাত্র হিসেবে সবার কাছে প্রশংসিত জাহিদুল। 

জাহিদুল ইসলাম যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের লাউড়ী গ্রামের মাহাবুবুর রহমান ও রাশিদা বেগমের ছোট ছেলে। ২০০৮ সালে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত অক্ষম হয়ে যায় তার। সেই থেকে অনেক বাধা পেরিয়ে ইচ্ছাশক্তির জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে। বর্তমানে তিনি ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে।

জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে জাহিদুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই সে কিছুটা ডানপিটে স্বভাবের। দুর্ঘটনায় হাত হারিয়ে রাতের পর রাত সে কেঁদেছে। জাহিদুলের দুটি হাত না থাকায় প্রতিবেশীরা তাকে পছন্দ করতো না। সমবয়সীরাও তার সঙ্গে খেলত না। এক পর্যায়ে জাহিদুলের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বাড়িতে বসেই দুই হাতে কষ্ট করে কলম চেপে খাতায় লেখার চেষ্টা করে সে। আস্তে আস্তে এভাবেই লিখতে শেখে।'

তিনি বলেন, 'লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছাশক্তি দেখে তাকে আমরা লাউড়ী রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করে দিই। নিজের ইচ্ছা ও যোগ্যতায় সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। পড়াশোনার পাশাপাশি সে তার নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। জামা-প্যান্ট নিজেই পরতে পারে।'

'তবে, খাবার মেখে দিলে চামচ দিয়ে নিজেই খেতে পারে। লেখাপড়া করলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত,' যোগ করেন তিনি।

জাহিদুলের বাবা স্থানীয় একটি ইটভাটার ম্যানেজার। তার আয় দিয়েই সংসার চলে বলে জানান তিনি।

জাহিদুল তার দুই হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ দিয়ে কলম চেপে ধরে সুন্দরভাবে লিখতে পারেন। তার স্কুলের বন্ধু সোহাগ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলে, 'ক্লাসের পড়াশোনাতেও সে ভালো। পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৭৫ ও জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্কুলের খেলাধুলায়ও অংশ নিচ্ছে। সে সব সময় হাসিখুশি থাকে।'

সমাজের অন্য প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় জাহিদুল। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'শারীরিক অক্ষমতায় আমি চিন্তিত নই। কষ্ট করে নিজের কাজ নিজেই করি, সেই সঙ্গে সাইকেল চালানো, খেলাধুলা, সাঁতার কাটাসহ দৈনন্দিন সব কাজ করতে পারি। ছোটবেলা থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তি, চেষ্টা ও সার্বক্ষণিক মায়ের সহযোগিতায় দুটি হাত না থাকলেও নিজের কাজ নিজেই শিখেছি।'

জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জাহিদুল বলেন, 'পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করতে চাই। যদি সুযোগ হয় তাহলে ক্রিকেট ক্লাবে প্রতিবন্ধী কোটায় খেলতে চাই। সরকারের সহযোগিতা পেলে আমার এলাকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সমাজের সংস্কারমূলক কাজ করতে চাই।'

প্রতিবেশী বাবুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামের সবাই জাহিদুলকে প্রতিভাবান বালক হিসেবে চেনে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে সমাজজীবনে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।'

মনিরামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাহিদুলের প্রতিভায় প্রতিবেশীসহ তার বন্ধুরা আনন্দিত। এই সমাজের জন্য জাহিদুল অনুকরণীয়। তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সরকারিভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in December

Project deadline extended by 2 years, but authorities hope to complete grid line work before scheduled commissioning

10h ago