ঘর সাজাতে খুব অল্প জায়গায় রাখা যায় যে ১০টি গাছ

শহুরে জীবনের ব্যস্ততা এবং জায়গার সংকটে আমাদের অনেকের গাছের সঙ্গে সম্পর্কও গড়ে ওঠে না। কিন্তু আপনি চাইলে সেখানে খুব অল্প জায়গায় রাখতে পারেন কিছু গাছ। যা আপনার রুমের শেলফের বা অফিসের ডেস্কের শোভা বাড়াবে। পাশাপাশি মনের প্রশান্তি।
ছবি: কান্ট্রি লিভিং ম্যাগাজিন

শহুরে জীবনের ব্যস্ততা এবং জায়গার সংকটে আমাদের অনেকের গাছের সঙ্গে সম্পর্কও গড়ে ওঠে না। কিন্তু আপনি চাইলে সেখানে খুব অল্প জায়গায় রাখতে পারেন কিছু গাছ। যা আপনার রুমের শেলফের বা অফিসের ডেস্কের শোভা বাড়াবে, পাশাপাশি মনের প্রশান্তিও।

এসব গাছের স্বভাব সম্পর্কে ভালোভাবে না জানার কারণে কিংবা অতিরিক্ত পানি দেবার ফলে অনেক ধরনের গাছ খুব সহজেই মারা যায়। তাই আজকে এমন কিছু গাছের বিষয়ে বলবো, যেগুলো আপনার রুমের অক্সিজেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্য্য বাড়াবে। 

ছবি: সংগৃহীত

স্নেক:
গাছের নাম স্নেক হলেও সাপ বা এই সংক্রান্ত কোনো বৈশিষ্ট্যই এই গাছের নেই। অনেক পরিবেশবিদ বলেন, যদি কারও বাসায় একটি গাছ কেনা হয় তাহলে যেন সেই একটি গাছ হয় স্নেক। যেকোনো নার্সারিতে বর্তমানে স্নেক গাছ পাওয়া যায়। প্রায় অনেক ধরনের স্নেক গাছের ধরন আছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী আপনি যেকোনোটি বাছাই করে নিতে পারেন। এই গাছের যত্ন নেওয়া খুব সহজ। মাটি একেবারে শুঁকিয়ে গেলেই পানি দিবেন। মনে রাখবেন পানি কম দিলে এই গাছের তেমন কষ্ট হবে না, তবে বেশি দিলে গাছ মারাও যেতে পারে। 

ছবি: সংগৃহীত

অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা এমন এক প্রকার গাছ যা আপনার বাসায় থাকলে আপনি অনেক রকমের সুবিধা পাবেন। হাত পুড়ে গেলে, ত্বকে সানবার্ন হলে অথবা যেকোনো ইরিটেশনেই অ্যালোভেরা হতে পারে আপনার সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। কেন না অ্যালোভেরাতে আছে কুলিং কিছু উপাদান যা তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে মুক্তি দেবে ইরিটেশন থেকে। আর অ্যালোভেরা গাছের তেমন যত্নের প্রয়োজন নেই। পানি কম দেবেন, কেবল মাটি শুঁকিয়ে গেলে পানি দিতে পারেন।  

ছবি: সংগৃহীত

স্পাইডার: 
এই গাছটি আপনার রুমের জানালার পাশে অথবা রুমের কোণায় ঝুলিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাবে। কারণ স্পাইডার গাছ থেকে ছোট ছোট বেবি স্পাইডার গাছ ঝুলে পড়ে যা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। তবে ডেস্ক কিংবা কোনো তাকেও এই গাছ বেশ ভালো লাগে। আপনার যদি ঘুমের সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই আপনার রুমে একটি স্পাইডার গাছ রাখুন। এই গাছের অনেক রকমের ভ্যারিয়েশন রয়েছে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী বাছাই করে নিন যেকোনটি। 

ছবি: সংগৃহীত

পোথোস (মানি প্লান্ট): 
পোথোস খুব পরিচিত একটি গাছ তবে এই গাছের ১০-১২টি ধরনের মধ্যে গোল্ডেন পোথোস সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই গাছকে অনেকেই মানি প্লান্ট বলে চেনেন। পানি ও মাটিতে এই গাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এই গাছের পরিচিতি আরও বেশি। এই গাছের পাতার সাহায্যে খুব সহজে নতুন গাছ পাওয়া সম্ভব। চোখ-কান খোলা রাখলে অনেক মাঠে বা বাড়ির আঙ্গিনায় আপনি পেয়ে যাবেন গোল্ডেন পোথোস। সেখান থেকে মাত্র কয়েকটি ডাল নিয়ে আসলেই আপনি ফ্রি ফ্রি পেয়ে যাবেন একগুচ্ছ সবুজ! তাছাড়া নার্সারিতেও খুব কম দামেই এই মানি প্লান্ট বা গোল্ডেন পোথোস পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে গোল্ডেন পোথোস, নিওন পোথোস, মার্বেল কুইন পোথোস, স্নো কুইন পোথোসসহ আরও কয়েক ধরনের পোথস পাওয়া যায়। তবে গোল্ডেন পোথোস সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য। নতুন বাগানি হলে এই গাছটি থাকবে আপনার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।  

ছবি: সংগৃহীত

কয়েন প্লান্ট: 
কয়েন প্লান্ট খুব পরিচিত বাংলাদেশি একটি গাছ। তবে বিদেশে এর অনেক রকমের ভ্যারিয়েশন রয়েছে। এই গাছের তালিকায় সবচেয়ে কম মূল্যে আপনি পাবেন এই কয়েন গাছ। এই গাছটি খুব অন্ধকার রুম হলে আপনার না রাখাই ভালো। কেন না এই গাছের জন্য চাই উজ্জ্বল আলো আর পর্যাপ্ত পানি। আপনি এই গাছে পানি না দিলেই এই গাছের অনেক বেশি রাগ হবে এবং তার ফলাফল আপনি নিজেই দেখতে পারবেন। বেশি পানিতে যেহেতু এই গাছের কোনো সমস্যা নেই, তাই এই গাছে প্রতিদিন পানি দেবার চেষ্টা করবেন। দক্ষিণের জানালা কিংবা বারান্দার জন্য এই গাছ উপযুক্ত স্থান। 

ছবি: সংগৃহীত

পিস লিলি:
এত সময় ধরে কেবল আমি পাতা জাতীয় গাছের কথাই বলছি। আপনাদের মনে হতে পারে বাসার ভেতর কি কোনো ফুলের গাছ হয় না? উত্তর হবে হ্যাঁ, কেন না পিস লিলি একটি ফুলের গাছ পাশাপাশি এই গাছটি আপনার রুমেই আপনি রাখতে পারবেন। পিস লিলির সাদা ফুল দেখলেই বুঝতে পারবেন কেন গাছের এই নামকরণ। এই পিস লিলি গাছের দাম কিছুটা বেশি অন্যান্য গাছের তুলনায়। তবে এর সৌন্দর্য ও অন্য সব গুণাবলি এই গাছকে অমূল্য করে তোলে। তাই সেরা গাছের তালিকায় পিস লিলি তো থাকতেই হবে। পিস লিলি কিছুটা বড় সাইজের গাছ তাই রুমের কোণায় কিংবা ডেস্কের পাশে এই গাছটি রাখলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। রুমে কিছুটা আলো আসলে ভালো এই গাছের ফুলের জন্য। 

ছবি: সংগৃহীত

অ্যাংলোনিমা:
কেবল সবুজ গাছ নিয়েই কেন কথা হবে! ফুলের মতো গাছের অনেক রঙ আছে। অ্যাংলোনিমা সেই গাছেরই উদাহরণ। কেন না লাল ও গোলাপী ছাড়াও বিভিন্ন রঙের অ্যাংলোনিমা গাছ নার্সারিতে পাওয়া যায়। এই গাছের গোড়া থেকেই অনেক শাখা বের হয়ে ঝোপালো একটা গাছ হয় যা আপনার সবুজ বাগানে নিয়ে আসবে সুন্দর বৈচিত্র্য। এই গাছেও মাটি শুকিয়ে গেলেই কেবল পানি দিবেন। পাতাবাহার গাছ যদি ঘরে আনতে চান তাহলে অ্যাংলোনিমা পছন্দ করতে পারেন নিঃসন্দেহে।

ছবি: সংগৃহীত

লাকি ব্যাম্বু:
পানিতে ও মাটিতে বেঁচে থাকতে পারে এমন আরেকটি মজার গাছ হলো লাকি ব্যাম্বু। অনেকেই মনে করেন এই গাছের সঙ্গে আপনার ভাগ্য সম্পর্কিত, তার থেকেই লাকি ব্যাম্বু নাম। ভাগ্য বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। তবে এই গাছ ভালো গাছের সব গুণাবলি বজায় রাখে। এই গাছ খুব সহজেই মারা যায় না। আর অনেক নার্সারিতে লাকি ব্যাম্বু খুব শৈল্পিকভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। যত্ন করতে পারবেন না এমন চিন্তা থাকলে কিনে ফেলুন লাকি ব্যাম্বু গাছ। 

ছবি: সংগৃহীত

ফিলোডেনড্রন:

ফিলোডেনড্রন কোনো এক প্রকারের গাছ না। অনেক রকমের গাছের ধরনের নাম ফিলোডেনড্রন। ফিলো গাছের পাতায় রঙে বিভিন্ন রকমের শেড আছে। যা আপনাকে অনেক বেশি সজীব রাখবে। আর ফিলো গাছের যত্ন খুব বেশি না কিছুটা পোথোসের মতোই। গাছের বাহারী কালেকশন রাখতে চাইলে বাসার ভেতত কয়েক রকমের ফিলোডেনড্রন রাখতে পারেন। তবে হার্ট শেপ ফিলো অথবা ব্রাজিলিয়ান ফিলোডেনড্রন হতে পারে পছন্দের শীর্ষে। 

ছবি: সংগৃহীত

জেড: 

আমরা অনেকেই বনসাই পছন্দ করি। তবে বনসাই মেইনটেইন করা যেমন কষ্ট তেমনই ভাবে বনসাই কেনার জন্য বেশ মোটা অংকের টাকার প্রয়োজন। তাই সেই বনসাই-এর মতোই সুন্দর একটি গাছের নাম জেড। জেড গাছটি এক প্রকারের ক্যাকটাস কিন্তু এতে কোনো কাঁটা নেই। সহজেই বনসাই রূপ দেওয়া যায় বলে অনেকেই এই গাছ পছন্দ করেন অনেক বেশি। ক্যাকটাসের মতোই এই গাছ অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে পানি ছাড়া। বনসাইপ্রেমী হলে এই গাছটি একবার হলেও পরখ করে দেখবেন। 

Comments