কেন নিত্যপণ্যের দাম এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে?

মহামারিতে মানুষের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দেশের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে, যা খুবই হতাশাজনক। মানুষ আশা করে সরকার এ বিষয়টিকে জরুরিভাবে সমাধান করবে।

মহামারিতে মানুষের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দেশের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে, যা খুবই হতাশাজনক। মানুষ আশা করে সরকার এ বিষয়টিকে জরুরিভাবে সমাধান করবে।

প্রকৃতপক্ষে, বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে বেশ কয়েকটি নিত্যপণের দাম বেড়ে যায় বলেই আমরা দেখে আসছি। তাই, সেই পণ্যগুলোর দাম বাড়ার আগেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারত। এর চেয়েও বেশি হতাশাজনক বিষয় হলো, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এই দাম বৃদ্ধিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলেও মনে হয়—এর ফলে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য ভোক্তাদের শোষণের চেষ্টা করে।

উদাহরণ হিসেবে, পেঁয়াজের দামের কথা বলা যায়। ব্যবসায়ীরা এর মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ভারতের আবহাওয়া বিপর্যয়কে দায়ী করার চেষ্টা করছেন। তবে, মজার ব্যাপার হলো—গত বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের ওপর থেকে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঠিক পরেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৮০-৮৫ থেকে কমে ৬০-৬৫ টাকায় নেমে আসে। যদিও ভারত থেকে স্থলবন্দর হয়ে পেঁয়াজ আসতে কমপক্ষে ৪-৫ দিন সময় লাগে। যার অর্থ, কম শুল্কে আমদানি করার আগেই তারা দেশের বাজারে দাম কমিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের কিছু পণ্যের বর্ধিত মূল্যের কারণে ব্যবসায়ীরা কীভাবে স্থানীয় বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে এটা তার স্পষ্ট উদাহরণ।

সরকার বারবার সিন্ডিকেটের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে বলেছে, যে কোনো সংকটের সুযোগ নিয়ে তারা দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এই ধরনের সিন্ডিকেট নির্মূলে কী করছে সরকার? যতদূর বলতে পারি, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি এবং এই ধরনের ব্যর্থতার ফল ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়েছে। তাছাড়া, চিনি ও পেঁয়াজের মতো কিছু পণ্যের কথা বলা যায়, সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব পণ্য বিক্রির জন্য উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে, যেটি পরে ব্যবসায়ীরাও আর মেনে চলেননি। যদি পণ্যগুলো বিক্রি করে পাওয়া লাভের পরিমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে যথেষ্ট মনে না হয়, তাহলে কীসের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

দিনশেষে, নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ও মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই। এ জন্য সরকারের যথেষ্ট জনবল ও সম্পদ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে যদি দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকে, সরকারের উচিত ছিল সেসব সমস্যা মোকাবিলায় বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া। দুর্ভাগ্যক্রমে, সরকার আবারও সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন যেসব মানুষ তাদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও হিসশিম খাচ্ছেন তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিষয়টি তদন্ত করেও দেখা দরকার যে, সরকারি কর্মকর্তারা আবারও কেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Schools, Colleges: A reopening that defies heatwave and logic

The reopening of educational institutions amid the heatwave was marred by two teachers’ deaths and dozens of students becoming sick.

13h ago