খেলা

শেষটা আরও হতাশার

রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচ স্মরণীয় করতে স্থানীয় সংগঠকরা করেছিলেন বাড়তি আয়োজন। বিশেষ কয়েনে টস হলো। দুদল পেল ক্রেস্ট, ম্যাচ কাভার করা সাংবাদিকদেরও দেওয়া হলো বিশেষ উপহার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের হারে সব বিশেষের উলটো পিঠে লেখা রইল তেতো স্মৃতি।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ছবিই বলে দিচ্ছে দলের অবস্থা। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দলকে ডুবিয়েছিলেন বোলাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে বোলারদের সঙ্গে তাল মেলালেন ব্যাটসম্যানরাও। আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে তাও যা ছড়িয়েছিল উত্তাপ, এবার হলো না কোন লড়াই।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে  ৭৫  রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা।  লঙ্কানদের বিপক্ষে রানের হিসাবে এটাই সবচেয়ে বড় হার। দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট, টেস্ট সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বাংলাদেশ থেকে সব জিতেই বাড়ি ফিরছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।

রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচ স্মরণীয় করতে স্থানীয় সংগঠকরা করেছিলেন বাড়তি আয়োজন। বিশেষ কয়েনে টস হলো। দুদল পেল ক্রেস্ট, ম্যাচ কাভার করা সাংবাদিকদেরও দেওয়া হলো বিশেষ উপহার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  বাংলাদেশের হারে সব বিশেষের উলটো পিঠে লেখা রইল তেতো স্মৃতি।  

২১১ রান বিশাল লক্ষ্য। নিশ্চিতভাবেই চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জের পিছু ছুটতেও যেন অনিহা ছিল ব্যাটসম্যানদের। বোলাররা বাজে বোলিংয়ের প্রদর্শনীতে বিষিয়ে ছিলেন দর্শকদের মন, ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতির মিছিলে প্রথমবার বাংলাদেশের খেলা দেখতে সিলেটের ভরপুর গ্যালারিতে দিয়েছেন জল ঢেলে।

তামিম ইকবালকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের উল্লাস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ
রান তাড়ায় ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন তামিম ইকবাল। তাতে তাল না রেখে ওদিক থেকে পরের ওভারেই শুরু অক্কা পাওয়া। শুরুটা সৌম্য সরকারকে দিয়ে। আগের ম্যাচে অর্ধশতক করা সৌম্য এবার অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার অনেক বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়েই চালাতে গেলেন। ফলাফল কাভারে লোপ্পা ক্যাচ।

ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিমও। ফিরলেন দৃষ্টিকটু শটে। শিহান মধুশঙ্কার স্লোয়ার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মিড অনে।

সাব্বির রহমানের জায়গায় সুযোগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ধাপেও শুরুটা তার হয়েছে যাচ্ছেতাই। মধুশঙ্কার এমন এক বলে আউট হলেন, চেষ্টা করলেও হয়ত অনেকে তাতে আউট হতে পারবে না। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল অনায়াসে ফ্লিক করা যেত, সেটাই ক্যাচ দিয়েছেন মিড অনে।

পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ঝড়ো শুরু। উল্টো কেঁপে উঠল টপ অর্ডার। এসবের মাঝেও এক প্রান্তে খেলে গেছেন তামিম ইকবাল। চার-ছয়ে বাড়িয়েছেন রান। ২৯ রান করে তিনি যখন ফিরলেন সিলেটের গ্যালারি তখন ফাঁকা হতে শুরু করেছে।

বিপিএলের ফিনিশার আরিফুল হককে ২ রানেই থামিয়েছেন লেগ স্পিনার জীবন মেন্ডিস। ৬৮ রানেই নেই ৫ উইকেট। লঙ্কান স্ট্রাইক বোলার মধশঙ্কা ২ ওভার করেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে বেরিয়ে যান। ওই ফল ঘরের তোলার অবস্থাতেও তখন নেই বাংলাদেশ।

৬ষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে নিয়ে কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়কের আউটেই ভাঙে তাদের ৪২ রানের জুটি। সাইফুদ্দিনের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন ৩১ বলে ৪১ রান করা মাহমুদউল্লাহ। ততক্ষণে আর ম্যাচের ফল নিয়ে কোন উত্তাপ নেই। বাকিরা টেনেটুনে ১৩৫ পর্যন্ত নিতে পেরেছেন।

ব্যাটসম্যানদের কাজটা আগেই কঠিন করে দিয়েছিলেন বোলাররা। প্রথম ম্যাচের বেহাল দশা থেকে কেউই তেমন কিছু শেখেননি। এলোমেলো লাইন, বাজে লেন্থে বল করেছেন প্রায় সবাই। পাওয়ার প্লের প্রথম ছয় ওভারে চার বোলার মিলে দেন ৬৩ রান, ফেলতে পারেননি লঙ্কানদের কোন উইকেট।

আগের ম্যাচে বেদম মার খাওয়া রুবেল চার ওভারে ৫৩ রান দিয়েছিলেন। এদিন তার জায়গায় অভিষেক হওয়া আবু জায়েদ রাহিই শুরু করেছিলেন ইনিংস। প্রথম ওভারে দিয়ে দেন ১২। আরেক অভিষিক্ত মেহেদী হাসান তার প্রথম দুই ওভারে দেন ২৫ রান। 

এদিনও শুরু থেকে ফিল্ডাররা ছিলেন নড়বড়ে। হাত ফসকে  দানুশকা গুনাথিলেকারই বেরিয়েছে দুই ক্যাচ। প্রথমবার মিড অফে তামিম ইকবাল বাদিকে লাফিয়েও জমাতে পারেননি। পরের বার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে কাভারে ক্যাচ পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। লাফিয়ে হাত লাগিয়েও রাখতে পারেননি।

এবারও টাইগার বোলারদের জম ছিলেন কুশল মেন্ডিস। ২৯ বলে ৫ চার আর দুই ছক্কায় ৫০ করার পরও থামেননি। চালিয়েছেন আরও কিছুক্ষণ। ৭০ রানে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মোস্তাফিজের বলে।

১১তম ওভারে বল করতে এসে প্রথম ব্রেক থ্রো এনে দেন সৌম্য সরকার। নিয়মিত বোলারদের মার খাওয়ায় সামাল দিতে আনা হয় সৌম্যকে। দুবার জীবন পাওয়া গুনাথিলেকার ক্যাচ এবার লঙ অফে দাঁড়িয়ে নিরাপদেই জমান তামিম।

ওয়ানডাউনে উঠে ঝড় তুলছিলেন থিসারা পেরেরা। চোখ রাঙাচ্ছিলেন আরও বিপদজনক কিছুর। তাকে থামিয়েছেন লোকাল বয় জায়েদ। লঙ অফে সৌম্যের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৭ বলে ৩১ করা পেরেরা।

ওই অতটুকুই। পরে মেন্ডিসকে মোস্তাফিজ আর থারাঙ্গাকে সাইফুদ্দিন ফিরিয়েছেন বটে। রানের লাগাম আটকাতে পারেননি। এদিনও ফুলটস, আলগা বল দিয়ে চাপ রাখতে পারেননি মোস্তাফিজ। সাইফুদ্দিন তার রান দেওয়ার উদার হাত এদিনও থামাননি। অভিষিক্ত জায়েদ মাঝের দুওভার ভালো করলেও প্রথম আর শেষের পিটুনিতে দিয়েছে প্রায় অর্ধশত রান। তবে সবচেয়ে খরুচে ওই সাইফুদ্দিনই।

থারাঙ্গা ১৩ বলে ২৫ করে আউট হয়েছিলেন, দাসুন শঙ্কা ১১ বলেই ৩০ করে থাকেন অপরাজিত। নেতিয়ে পড়া বাংলাদেশী বোলাররা মাঠ  ছেড়েছেন হতাশার ভার নিয়ে। ব্যাটসম্যানরা সেই হতাশার ভারেই যেন উঠে দাঁড়াতে পারলেন না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২১০/৪ (২০) (গুনাথিলেকা ৪২, মেন্ডিস ৭০, থিসারা  ৩১, থারাঙ্গা ২৫, দাসুন ৩০*, চান্দিমাল ২* ; জায়েদ ১/৪৫, নাজমুল ০/২৮, মেহেদী ০/২৫, মোস্তাফিজ ১/৩৯, সাইফুদ্দিন ১/৪৬, সৌম্য ১/২৫ )

বাংলাদেশ: ১৩৫/১০ (১৮.৪)  (তামিম ২৯, সৌম্য ০, মুশফিক ৬, মিঠুন ৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, আরিফুল ২, সাইফুদ্দিন ২০, মেহেদী ১১, মোস্তাফিজ ৮ , জায়েদ ২, অপু ১*  ;মধুশঙ্কা ২/২৩, ধনঞ্জয়া ১/২০  , দাসুন ১/৫, থিসারা ০/৩৩ , আপনসো ১/৩১, মেন্ডিস ১/৮, উদানা ১/১২, গুনাথিলেকা ১/৩)

ফল: শ্রীলঙ্কা  ৭৫  রানে জয়ী।

সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ২-০ তে বিজয়ী।

 

Comments