07:05 PM , Dec 03, 2016
07:05 PM , Dec 03, 2016 / LAST MODIFIED: 07:05 PM , Dec 03, 2016

মতামত: আমরা কি মানহীন টিভি অনুষ্ঠান দেখতে বাধ্য?

শাহরিয়ার খান

মতামত: আমরা কি মানহীন টিভি অনুষ্ঠান দেখতে বাধ্য?
বাংলায় ডাবিংকৃত তুর্কী ঐতিহাসিক গল্প ‘সুলতান সুলেমান’। এই ওসমানীয় সুলতানের বিজয়-কাহিনী, প্রেম ও প্রাসাদ রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা ধারাবাহিকটি বাংলাদেশের দর্শকদের ভেতর ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিদেশি চ্যানেলের ডাউনলোড লিঙ্কের বর্তমান ব্যয় দেড় লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ কোটি করার দাবি করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্ল্যাটফর্ম মিডিয়া ইউনিটি। সেই সঙ্গে ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা চায় প্ল্যাটফর্মটি।

তারা বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলগুলোতে চলে যাচ্ছে। চ্যানেলগুলোকে বেআইনি পন্থায় এই টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে।

টেলিভিশনে ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিকগুলো বন্ধের দাবির প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে মিডিয়া ইউনিটি।

বিজ্ঞাপনের বেআইনি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি বাদ দিলে অন্য দাবিগুলো নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রথমত: যেখানে বাংলাদেশেই অনেক চ্যানেল রয়েছে সেখানে স্থানীয় বিজ্ঞাপনদাতারা কেন বিদেশি চ্যানেলগুলোর কাছে ছুটছেন? কেন তাঁরা বিদেশি চ্যানেলগুলোকে অবৈধভাবে টাকা পরিশোধের ঝুঁকি নিচ্ছেন?

দ্বিতীয়ত: বিজ্ঞাপনদাতাদের বিদেশী চ্যানেলের প্রতি ঝোঁক নিয়ে স্থানীয় চ্যানেলগুলো হঠাৎ কেন এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল, যখন তারা এতো বেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করছে যে দর্শকরা আর তা দেখছেন না? বিদেশি চ্যানেলে যাওয়া বিজ্ঞাপনগুলো ফিরে এলে স্থানীয় চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কোন কিছু দেখানোর সুযোগ থাকবে কি?

তৃতীয়ত: কেউ কেন ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিকগুলো বন্ধের দাবি তুলবেন? অতীতে ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক সম্প্রচার করে প্রশংসা কুড়িয়েছিল বিটিভি।

একটি বিদেশি অনুষ্ঠানকে স্থানীয় ভাষায় সম্প্রচার করা কি দোষের? তাহলে কি কেউ বিদেশি বইয়ের বাংলা অনুবাদ বন্ধেরও দাবি তুলবেন? এটা করলে অনেক বড় ভুল হবে।

আসলে এই তিনটি প্রশ্নের মূল কারণএকটিই। সেটা হলো স্থানীয় টেলিভিশনগুলোর নিম্নমানের অনুষ্ঠান।

আমরা কি বলতে পারবো, শেষ কবে দেশে তৈরি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান দেখেছি যার জন্য আমরা অন্য কাজ বাদ দিয়ে টিভির কাছে বসে থাকতাম? এক দশক আগেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান দেখাতো। এরপর দর্শকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন। স্থানীয় চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠান দেখার অর্থই হচ্ছে এক গাদা বিজ্ঞাপনের মুখোমুখি হওয়া। শুধু তাই নয়, ভালো অনুষ্ঠান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় করা হয় না।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী একটি টেলিভিশন চ্যানেল দর্শকদের মনে বিরক্তি না ঘটিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ মিনিট পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২২ মিনিট পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। বিশেষ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি ৩০ মিনিট ছাড়িয়ে যায়।

বাস্তবতা হলো, দেশের বিপুল সংখ্যক দর্শক কোন বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলমুখী হননি। বরং স্থানীয় চ্যানেলগুলোতে আকর্ষণীয় তেমন কিছু না পাওয়ার কারণেই তারা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

সুলতান সুলেমানএর মতো বাংলায় ডাবিং করা ধারাবাহিকগুলো বন্ধের দাবিটি সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটা দর্শকদের বিষয় যে তাঁরা কোন অনুষ্ঠানটি দেখবেন আর কোনটি দেখবেন না।

তাই, এটা-ওটা বন্ধের দাবি না তুলে খুঁজে বের করতে হবে দর্শকরা কেন সুলতান সুলেমানবা কিরণমালাদেখছেন। কেন তারা বহুব্রীহিকিংবা যদি কিছু মনে না করেনএর মতো ভালো অনুষ্ঠান তৈরি করতে পারছেন না-- সেটাও জানতে হবে!

যদি চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান তৈরি করে, তাহলে দর্শকরা টাকা খরচ করে সেগুলো দেখতে প্রস্তুত। এই পরিবর্তনের সূচনা মিডিয়া ইউনিটির মতো প্লাটফর্ম থেকেই হতে পারে যদি তারা সঠিক ইস্যু নিয়ে অগ্রসর হয়। অবরোধ দিয়ে বিজ্ঞাপনের আয় বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে দর্শক চাহিদার দিকে মনোযোগ দেওয়ার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।

Click here to read the English version of this news

পাঠকের মন্তব্য

অন্যান্য সংবাদ