বাংলাদেশ

স্মার্ট সিটি: অপরীক্ষিত পরিকল্পনা, সন্দেহজনক পদ্ধতি

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কি যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষ না করেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রকল্পের জন্য সুপারিশ করতে পারে? স্পষ্টভাবেই আইন সেই অনুমতি দেয় না।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কি যথাযথ যাচাই-বাছাই শেষ না করেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রকল্পের জন্য সুপারিশ করতে পারে? স্পষ্টভাবেই আইন সেই অনুমতি দেয় না।

কিন্তু গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি এমনটিই করেছে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সংসদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি।

কমিটি আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২টি স্থানীয় ও ২টি চীনা কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম থেকে বঙ্গোপসাগরে একটি স্মার্ট সিটির প্রস্তাব দেয়। এতে ছিল না পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নও।

কাকতালীয়ভাবে, সংসদীয় কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার পরিবারের প্রায় ৪২ শতাংশ শেয়ারের মালিকানাধীন পেনিনসুলা চিটাগং এই কনসোর্টিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠান।

এই সংসদ সদস্যের ছেলে মাহবুব-উর-রহমান ২০০২ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বোর্ডে রয়েছেন সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা, ভাই মোস্তফা তাহির আরশাদ, মোস্তফা তাহসিন আরশাদ ও তার স্ত্রী বিলকিস আরশাদ। মোস্তফা তাহসিন আরশাদ এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি), চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন (সিআরডিসি) এবং মজুমদার এন্টারপ্রাইজ।

তবে, তাদের যৌথ কোম্পানিতে এই ৪টি কোম্পানির কোনটির কত শতাংশ শেয়ার থাকবে তা জানা যায়নি।

সিসিইসিসি কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ নির্মাণসহ বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে।

কোম্পানিটি গত বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রস্তাবিত হাইস্পিড রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

তবে, মজুমদার এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে সিআরডিসি যৌথভাবে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছিল। প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মজুমদার এন্টারপ্রাইজ একটি সমন্বিত পরামর্শ, প্রকৌশল ও চুক্তি পরিষেবা সংস্থা। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরীর ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত একটি নথি অনুসারে, এই কনসোর্টিয়াম সমুদ্রে প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে নথিটির একটি অনুলিপি রয়েছে। এতে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবের সুপারিশ করার পর্যাপ্ত বিবরণ নেই।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সাগরিকা পয়েন্ট থেকে শুরু করে স্মার্ট সিটিটি মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তেমন হলে পরিবর্তন আসবে বাংলাদেশের মানচিত্রেও।

২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) কাছে দেওয়া সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল না এই প্রকল্পটি।

এই প্রকল্পের বিক্রয় থেকে আয়ের একটি অংশের বিনিময়ে কনসোর্টিয়াম চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি মেট্রো রেললাইন তৈরি করে দেবে। যার জন্য খরচ হবে প্রায় ২২ লাখ ডলার। এটি নিঃসন্দেহে দারুণ এক লোভনীয় প্রস্তাব। তবে, এই প্রস্তাব তৈরি করেছে নানা প্রশ্ন।

নথিতে এটি উল্লেখ করা নেই যে, মেট্রোরেল আগে হবে নাকি স্মার্ট সিটি৷

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের এক হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সীমানা চউকের অধীনে। এই অস্বাভাবিক পরিকল্পনার সঙ্গেই রয়েছে চউক।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৮ এর ধারা ৬-এ চউকের ক্ষমতা ও কার্যাবলীর রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এতে সমুদ্র সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে উত্থাপনের আগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সময় চউক তার সীমা অতিক্রম করেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সংসদীয় কমিটির শক্ত সমর্থনে গত ২২ ফেব্রুয়ারির সভায় এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় কমিটি।

সংবিধানের ৭৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি খসড়া বিল ও অন্যান্য আইনগত প্রস্তাব পরীক্ষা, আইনের বলবৎকরণ পর্যালোচনা এবং অনুরূপ বলবৎকরণের জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণের প্রস্তাব করতে পারবে।

কমিটি তার এখতিয়ারাধীন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বা প্রশাসন সম্পর্কে তদন্ত বা অনুসন্ধান করবে এবং সংসদ কর্তৃক অর্পিত অন্য কোনো কাজ সম্পাদন করবে।

তবে, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৪৮ ধারায় বলা হয়েছে, কমিটি 'যদি উপযুক্ত মনে করে, তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এমন অন্য যেকোনো বিষয় পরীক্ষা করতে এবং সুপারিশ করতে পারে'।

সম্ভবত এই ধারা ব্যবহার করেই কমিটি প্রস্তাবটি সুপারিশ করেছে। সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন জানান, এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতামত নেওয়া হয়নি এবং পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়নি।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মেট্রো রেল নির্মাণের জন্য কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করতে কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনাও এগিয়েছে।

এ ছাড়া, মেট্রোরেল বা গণপরিবহন বিষয়ক কাজ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এখতিয়ারে পড়ে। বন্দর নগরীতে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট নেটওয়ার্ক পরিকল্পনায় চউকের সম্পৃক্ততাও প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রস্তাব এবং বাংলাদেশ অবশ্যই এর মাধ্যমে উপকৃত হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখব যেন এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।'

এই প্রকল্পে তার পরিবারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এটি আমার পারিবারিক নয়, একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি দ্য পেনিনসুলা চিটাগংয়ের। এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হিসেবে তারা বোর্ডে আছেন।'

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি জানান, এই কোম্পানিতে তার শেয়ার ৫ শতাংশেরও কম। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এই কোম্পানির জমা দেওয়া শেয়ারহোল্ডিং পজিশন রিপোর্ট এবং কোম্পানির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় তথ্য অনুযায়ী গত মার্চ পর্যন্ত পেনিনসুলা চিটাগংয়ের ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার ছিল সাবেক এই মন্ত্রীর।

শুধু তাই নয়, ২০০৬ সাল থেকে বন্দরনগরীতে একটি উচ্চমানের হোটেল পরিচালনাকারী কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ারই এই সংসদ সদস্য ও তার পরিবারের।

৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিতে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের শেয়ার ছিল ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ।

মোশাররফ হোসেন বলেন, 'বেশিরভাগ শেয়ার সাধারণ মানুষের। এই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির কয়েক লাখ শেয়ারহোল্ডার এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।'

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের ৩৪ দশমিক শূন্য এক শতাংশ, রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শূন্য দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সংসদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিজাম আহমেদ বলেন, 'একটি সংসদীয় কমিটিতে এমন একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা, যে প্রকল্পে ওই কমিটির প্রধান জড়িত। এটা নিঃসন্দেহে কনফ্লিক অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের দ্বন্দ্ব)।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক নিজাম বলেন, 'আইনগত দিক দিয়ে এটা বেআইনি না হলেও, নৈতিকতার দিক দিয়ে এটা অনৈতিক।'

যদিও এই বক্তব্যের সঙ্গে মোটেই এক মত নন মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, 'যারা স্বার্থের দ্বন্দ্ব খুঁজে পাচ্ছেন তারা পরিস্থিতির ভুল ব্যাখ্যা করছেন। আমরাদের দেশের ভূমি কম। ভারত বা মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা জমি পাব না। সমুদ্রে ভূমি তৈরি করেই আমাদের চলতে হবে। আমার নিজের কাছে টাকা নেই, কিন্তু বিনা খরচে একটি এমআরটি পাচ্ছি। তাহলে কেন সেই প্রস্তাব আমি গ্রহণ করব না?'

যদিও তার ছেলে মাহবুব-উর-রহমান এই প্রস্তাবের ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন।

তিনি সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ২টি চীনা কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি করেছি মূলত প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত কি না, তা দেখার জন্য। আমরা এখানে বিক্রয়, বিপণন ও প্রচার অংশীদার হিসেবে কাজ করছি।'

কার্যকর বলে বিবেচিত হলে তবেই পেনিনসুলা চিটাগং এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের সায়েমান বিচ রিসোর্টেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-উর-রহমান বলেন, 'আমরা বাজার মূল্যায়ন করছি। এটা আমাদের জন্য একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব, কারণ আমরা ইতোমধ্যেই দেশের এই অংশে হোটেল পরিচালনা করছি।'

এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপ 'প্রায় শেষ' বলেও জানান তিনি।

এই প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তারা ডেভেলপার হিসেবে কাজ করবে। সেখানে ভবন ও বিভিন্ন সেবা বিক্রি থেকে তারা আয় করবে।'

চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের জানান, এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত এলাকাটি সমুদ্রের শেষ প্রান্ত এবং এটি মূল চ্যানেল নয়।

তিনি বলেন, 'এর প্রস্থ হবে ২ থেকে আড়াই কিলোমিটার এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ কিমি। এই এলাকায় সমুদ্রের গভীরতা ততটা বেশি নয়।'

নতুন তৈরিকৃত এই জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত হবে, তবে হস্তান্তর করা হবে চউকের কাছে। পরবর্তীতে সেটি ডেভেলপ করবে কনসোর্টিয়াম।

কাজী হাসান বিন শামস জানান, কনসোর্টিয়াম মেট্রোরেল নির্মাণ করার কারণ হচ্ছে স্মার্ট সিটির জন্য এটা অপরিহার্য।

সমুদ্র ভরাট করে জমি তৈরি করা চউকের মাস্টার প্লানের অংশ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'চীন এর জন্য অর্থ প্রদান করলেও স্মার্ট সিটির মালিক হব আমরা।'

চউকের মাস্টার প্ল্যানটি এখন স্মার্ট সিটির জন্য নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে, যা বে টার্মিনালের কাছাকাছি হবে।

সমুদ্র চউকের এখতিয়ারে পড়ে কি না বা সমুদ্রে প্রকল্প করার জন্য তাদের কাছে কোনো আদেশ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি কৌশলে এড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম এলাকায় সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো প্রকল্পের জন্য চউকের অনুমতি নিতে হয়। এ কারণে তারা আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।'

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৩ জানুয়ারি চউক এবং কনসোর্টিয়ামের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

তবে এমন কোনো চুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেন চউকের এই প্রধান প্রকৌশলী। তিনি বলেন, 'সরকার অনুমতি দিলে তারপর চুক্তি করা হবে।'

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'এর জন্য তাদেরকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।'

তিনি জানান, কনসোর্টিয়াম সম্ভাব্যতা জরিপের অনুমতি পেলে বিক্রয় থেকে আয়ের অংশ নিয়ে আলোচনা করবে চউক।

প্রস্তাবটি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে চউকের এক কর্মকর্তা জানান, সেটি করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রকল্পটি এগিয়ে গেলে এবং প্রয়োজন হলে আমরা আইনগত মতামত নেব।'

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর জানান, আন্তর্জাতিক আইনে কৃত্রিম দ্বীপ বা সম্প্রসারণ অনুমোদিত কিন্তু সমুদ্র ভরাট করে অতিরিক্ত এলাকা তৈরি করা যাবে না।

মোশাররফ হোসেন বলেন, 'এখানে কোনো ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা নেই। আমরা আমাদের সমুদ্রে ভূমি তৈরি করব।'

এই প্রকল্পটি ভারত ও মিয়ানমারের আশেপাশে হচ্ছে না বলে তাদের কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেই এই সংসদ সদস্য।

তিনি আরও নিশ্চিত যে, স্মার্ট সিটি বাস্তুতন্ত্রের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।

চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়ার পর পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন হবে জানিয়ে ৭৯ বছর বয়সী আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, 'বিশ্বের সব দেশে সমুদ্রে ভূমি তৈরি করে শহর ও বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি।'

চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখনো এই প্রস্তাব বিষয়ে কিছু বলেননি।

পরিবেশ বিষয়ক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, এত বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে ২টি বিষয়ে সরকারের ব্যাপক গবেষণা করা উচিত।

একটি হচ্ছে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং অপরটি কৌশলগত পরিবেশগত মূল্যায়ন, যা অপরিহার্য।

মাতারবাড়ী ও কক্সবাজারে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতিপ্রকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার আগে ক্রমবর্ধমান প্রভাব মূল্যায়ন নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এখন আমরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভাঙন দেখতে পাচ্ছি।'

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে প্রস্তাবটি আরও বেশি যাচাই-বাছাই করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার যোগাযোগ করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের সঙ্গে। দুঃখ প্রকাশ করে দূতাবাসের এক কর্মী বলেন, 'আমি এই প্রকল্প সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। আমি দেখলাম, কিন্তু আমার কাছে খুব বেশি তথ্য নেই।'

এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মজুমদার এন্টারপ্রাইজ।  সিসিইসিসি ও সিআরডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

13 killed in bus-pickup collision in Faridpur

At least 13 people were killed and several others were injured in a head-on collision between a bus and a pick-up at Kanaipur area in Faridpur's Sadar upazila this morning

1h ago