সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ আর নেই

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ মারা গেছেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ মারা গেছেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে জানানো হয়,  সাহাবুদ্দিন আহমদ আজ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে মারা যান।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানার পেময়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকোনমিক্সে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ সম্পন্ন করেন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগ দেওয়ার পর তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একটি বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনে তিনি গোপালগঞ্জ ও নাটোরে সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হন।

১৯৬০ সালের জুনে তাকে বিচার বিভাগে বদলি করা হয় এবং ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক এবং ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের একজন বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। তবে, তার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৎকালীন সরকার কখনোই প্রকাশ করেনি।

তিনি ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন। একই বছরের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন হলে তিনি দেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বেই একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বেশ কয়েকটি কঠোর আইন সংশোধন করেছিলেন, যা দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সফলভাবে মেয়াদ শেষ করার পর তিনি ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর বঙ্গভবন ত্যাগ করেন এবং পুনরায় প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরে যান সাহাবুদ্দীন আহমদ।

১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ৯ অক্টোবর তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার পর গুলশানে নিজের বাসভবনে অনেকটা নিভৃত জীবনযাপন করছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।

সাহাবুদ্দীন আহমদ ও তার স্ত্রী আনোয়ারা আহমদের ৫ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ড. সিতারা পারভীন। সিতারা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। সাহাবুদ্দীন আহমদের ২ ছেলে গুলশানে বাবার সঙ্গেই থাকতেন এবং অপর ২ মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে থাকেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

2.72 lakh premature deaths in 2019: WB report

Alarming levels of air pollution, unsafe water, poor sanitation, and lead exposure caused over 2.72 lakh premature deaths in the country in 2019.

27m ago