ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী খান) এর বিরুদ্ধে পিএইচডি অভিসন্দর্ভে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস। অভিযোগ তদন্তে লিখিতভাবে উপাচার্যকে জানানোর পরও চার মাসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
dhaka university logo

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী খান) এর বিরুদ্ধে পিএইচডি অভিসন্দর্ভে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস। অভিযোগ তদন্তে লিখিতভাবে উপাচার্যকে জানানোর পরও চার মাসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।   

রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

ইফফাত আরা নার্গিস তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ নামের গ্রন্থটি সংগ্রহ করি। কিন্তু গ্রন্থটি পাঠ করে আমার এর আগে পাঠ করা ৩/৪ টি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি।

তিনি বলেন, এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি লীনা তাপসী খানের পিএইচডি-অভিসন্দর্ভের উপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থ ‘নজরুল সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ সম্পর্কে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি।’

মহসিনা আক্তার খানমের পিএইচডি গবেষণার তত্ত্ববধায়ক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তবে, ঢাবি শিক্ষক মহসিনা আক্তান খানম দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

ইফফাত আরা নার্গিস বইয়ের ৩৮টি জায়গার উল্লেখ করে চোর্যবৃত্তির অভিযোগ এনেছেন। এর মধ্যে, গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৪২ লাইন, তৃতীয় অধ্যায়ে ৭ লাইন, চতুর্থ অধ্যায়ে ২৬ লাইন, পঞ্চম অধ্যায়ে ৬ লাইন, ষষ্ঠ অধ্যায়ে এক লাইন, দশম অধ্যায়ে ১২৬ লাইন, একাদশ অধ্যায়ে ১২২ লাইন ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ৬৫ লাইন এবং চতুর্দশ অধ্যায়ে ৫৩ লাইন। এসব লাইন রবীন্দ্রনাথের ‘গীতিবিতান’ ও ‘নজরুল-গীতিকা, ইদ্রিস আলীর লেখা ‘নজরুল সঙ্গীতের সুর’, স্বরলিপিকার জগত ঘটক ও কাজী অনিরুদ্ধের ‘নবরাগ’, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘নজরুল সৃষ্ট রাগ ও বন্দিশ’ এবং কাকলী সেনের ‘ফৈয়াজী আলোকে নজরুলগীতি’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে তথ্য নির্দেশ ছাড়া হুবহু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

এ ছাড়াও নায়েমের সাবেক এই মহাপরিচালক অভিযোগ করেন, ২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক।

দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের ১৬৯ পৃষ্ঠাই লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত। অবশিষ্ট পৃষ্ঠাগুলোর মধ্যেও চৌর্যবৃত্তি পাওয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য তার। এ মতাবস্থায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে লীনা তাপসী খানের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল, ডিগ্রি প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি, গ্রন্থটি বাতিল এবং গ্রন্থের জন্য প্রাপ্ত লীনা তাপসী খানের নজরুল পদক প্রত্যাহারের দাবিও জানান তিনি।

এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ দাবি করেছেন লীনা তাপসী খান। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে তার যেসব অভিযোগ তা মিথ্যা, ভুল এবং বানোয়াট। আমার বোর্ড আমাকে যেভাবে তত্ত্বাবধান করেছে, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, আমি সেভাবেই করেছি।’

তিনি বলেন, ‘১২ বছর আগে করা পিএইচডির ভুল একজন ১২ বছর পরে ধরতে এসেছেন। তিনি কোন শিক্ষাবিদ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শোধরাতে আসেন। তার নিজের কী কোনো গবেষণা আছে?’

তিনি বলেন, সঙ্গীতে প্রায়োগিক বিষয়ে আমার আগে কেউ কাজ (গবেষণা) করেননি। এই ধরনের গবেষণার পদ্ধতি প্রক্রিয়াও অন্য গবেষণার চেয়ে আলাদা। একটি স্বরলিপি যখন ছাপানো হয়, তখন একটি ‘রেফ’ এর কারণে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়। এতে প্রযুক্তিগত নানা ধরনের বিষয় আছে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় হুবহু স্ক্যান না করলে কাজ করা যাবে না। এখন কোথায় ফটোকপি করে দেবো, স্ক্যান করে দেবো, আমার গাইড আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি সেভাবেই করেছি।

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে ‘প্রতিশোধমূলক’  বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি লিখিতভাবে এটার প্রতিবাদ জানাবো'।

ইফফাত আরা নার্গিসের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এধরনের একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। তবে সেটি অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। আমি অভিযোগটি আবার দেখবো।’

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

13h ago