প্রবাসে

লেবাননে করোনার টিকা পেয়ে খুশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা

লেবাননে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রবাসীরা করোনা টিকা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শনিবার দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা ম্যারাথন’ নামের উন্মুক্ত টিকা দিবসে এই সুযোগ পান বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের প্রবাসীরা।
লেবাননে করোনার টিকার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: স্টার

লেবাননে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রবাসীরা করোনা টিকা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। শনিবার দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা ম্যারাথন’ নামের উন্মুক্ত টিকা দিবসে এই সুযোগ পান বাংলাদেশিসহ অন্য দেশের প্রবাসীরা।

এতদিন লেবাননের বয়স্ক নাগরিকদের সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের নিয়োজিত প্রবাসী কর্মীরাই শুধু টিকা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

লেবাননের ৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে  সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই চলে টিকাদান কর্মসূচি। পূর্ব  নিবন্ধন ছাড়াই ৩০ বছরের বেশি বয়সী ১০,৪৫২ জন ব্যক্তিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছেন বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে বলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সবগুলো কেন্দ্রর বাইরের দীর্ঘ লাইন দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন টিকা নিতে আসা নানা শ্রেণির-পেশার মানুষ। অবশ্য বেশিরভাগ ছিলেন প্রবাসী কর্মী। যাদের অনেকেই সরকার পরিচালিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করতে পারেননি। টিকা পেয়ে সবাই লেবানন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

দক্ষিণ বৈরুতের দাহি এলাকায় সাহেল জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে নিয়োগকর্তার সঙ্গে টিকা নিতে এসেছিলেন শরীয়তপুরের লাকি বেগম। তিনি জানান, মালিকের পরিবার ও আমার নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতেই আমাকে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

টিকা নিতে আসা মানিকগঞ্জের রুবি আক্তার বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক গৃহকত্রীই বাসা বাড়ির কাজে নিতে ভয় পায়। তাই সুযোগ পেয়ে টিকা নিয়ে ফেললাম। আমাদের মতো গৃহকর্মীদের উচিত দ্রুত টিকা নেওয়া।’

শনিবারের কর্মসূচিতে এমন অঞ্চলগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যেখানে এখন পর্যন্ত টিকা প্রয়োগ কম হয়েছে। রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্র এলাকা ও দেশের আরও কিছু অঞ্চলকে এই উদ্যোগ থেকে বাদ রাখা হয়েছিল।

তবে দেশটির বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, এ জাতীয় দ্বিতীয় অনুষ্ঠানের আরও বেশি অঞ্চল জুড়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি কবে নাগাদ হবে তা তিনি প্রকাশ করেননি। 

স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর সূত্রে জানা গেছে, শনিবারের বিশেষ কর্মসূচিতে ৩০ বছরের বেশি বয়সীদের এই সুযোগ দেওয়া হলেও চলমান জাতীয় টিকা কর্মসূচির আওতায় ৪০ বছর বেশি সব প্রবাসীরও টিকা নেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

আজ রবিবার কয়েকটি কেন্দ্র থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, ৪০ বছরের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকে টিকা পেয়েছেন। তবে এর নিচের বয়সী অনেককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠক আবুল বাশার প্রধান লেবানন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নির্ধারিত বয়সসীমার প্রত্যেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে নিজেদের সুরক্ষায় করোনার টিকা নেওয়ার এই সুযোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া জাতীয় টিকা কর্মসূচিতে প্রাথমিকভাবে সরকারি পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধের মাধ্যমে বয়স্ক গোষ্ঠীর মানুষ, স্বাস্থ্যখাত, ফ্রন্টলাইন কর্মীদের টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীর দেশটিতে এ পর্যন্ত ৭ লাখ এরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩০ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং সাত হাজার সাতশ জন মারা গেছেন। মৃত্যুর তালিকায় ২৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী আছেন।

গত দুই বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে মহামারি থেকে উত্তরণে ছোট দেশটি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে গ্রীষ্ম মৌসুমে ব্যবসা ও পর্যটকদের আকর্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে চায় সরকার। এ জন্য টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান একটি স্থানীয় টিভি স্টেশনকে বলেছেন, ‘অনেক সংকট ও অর্থনীতি এবং কিছু সামাজিক ও সংস্কৃতি রীতিনীতি পুনরুদ্ধার করতে আমাদের স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকাদানের আরও বৃহত্তর উপায়গুলো চিন্তা করতে বাধ্য করছে।’

লেবাননে চলতি বছরের শুরু থেকে গত কয়েক সপ্তাহে করোনার সংক্রামণ কমে যাওয়ায় বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁ, বার এবং মলগুলো পুনরায় খুলতে শুরু করেছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
IMF calls for smaller budget

IMF suggests raising power, gas and fertiliser prices

The International Monetary Fund yesterday recommended reducing government subsidies by hiking prices of power, gas and fertiliser, and spending the saved money on society safety net programmes.

14m ago