প্রবাসে

কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা ছাড়া বাহরাইনে ফিরে বিড়ম্বনায় ১৬০ বাংলাদেশি

আগাম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না করে বাইরাইনে ফিরে বিমানবন্দরে বিড়ম্বনায় পড়েন ১৬০ জন বাংলাদেশি। অনেককে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান।
বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ছবি: বাংলাদেশ দূতাবাস

আগাম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না করে বাইরাইনে ফিরে বিমানবন্দরে বিড়ম্বনায় পড়েন ১৬০ জন বাংলাদেশি। অনেককে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান।

গত সোমবার ঢাকা থেকে গালফএয়ার ও শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে এসব প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরেছিলেন।

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে সাড়ে সাতটায় গালফ এয়ারে ৮০ জন বৈধ আকামার ৮০ জন প্রবাসী ঢাকা থেকে সরাসরি বাইরাইন পৌঁছায়। রাত সাড়ে নয়টায় শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে কলম্বো ট্রানজিট হয়ে আরও ৮০ জন বৈধ আকামার বাংলাদেশি দেশটিতে পৌঁছায়। কিন্তু, তাদের কেউই নতুন নির্দশেনা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না করেই বাহরাইনে ফেরেন।

নতুন জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশ থেকে বাহরাইন বিমানবন্দর পৌঁছানোর পর যাত্রীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা পিসিআর কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ (কিউআর কোডসহ) এবং বাধ্যতামূলক ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। হোম কোয়ারেন্টিনের ক্ষেত্রে যাদের নামে বা নিজ পরিবারের কারো নামে রুম বা বাসা আছে তাদের ভাড়ার চুক্তিনামা, বিদ্যুৎ বিলের কপি দেখাতে হবে। না হলে, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য বাহরাইন সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত হোটেলে ১০ দিন বুকিংয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। পাশাপাশি যাত্রীকে বাহরাইন বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর দুটি করোনা টেস্টের জন্য ৩৬ দিনার পরিশোধ করতে হবে।

কিন্তু, সোমবার ঢাকা থেকে যাওয়া দুই ফ্লাইটের ১৬০ বাংলাদেশি যাত্রীর কেউই বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টিনের কোনো প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাদের বাহরাইনে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানতে পেরে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে গালফ এয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত বাহরাইন প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়।

বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, সকালে গালফ এয়ারে আসা ৮০ জনের মধ্যে ৪৮ জন নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজন, বন্ধু বা সহকর্মীদের সহযোগিতায় নির্ধারিত হোটেলে বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে বিমানবন্দর থেকে বাহরাইনে ঢোকার অনুমতি পান। কিন্ত, আটকে পড়েন বাকি ৩২ জন। বিমানবন্দরে দুটি করোনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬ দিনারের বেশি অর্থও তাদের কাছে না থাকায় হোটেল বুকিং করাও তাদের জন্য সম্ভব ছিল না।  নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগী হয় বিমানসংস্থা।

এমন পরিস্থিতিতে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. নজরুল ইসলামের হস্তক্ষেপ ও অনুরোধে বিপদগ্রস্ত ৩২ বাংলাদেশিকে গালফ এয়ার কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে হোটেল কোয়ারেন্টিনের সুযোগ করে দেয়। তাদের জন্য দূতাবাস খাবারেরও ব্যবস্থা করে দেয়।

তিনি আরও জানান, রাতে পৌঁছানো শ্রীলঙ্কান এয়ালাইন্সে ফেরা ৮০ বাংলাদেশি যাত্রীও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। বিমানসংস্থা তাদের দায়িত্ব নিতে অপরগতা জানায়। পরে রাতভর নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজন, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্ধারিত হোটেলে বুকিং দিয়ে তারা বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পান।

ভুক্তভোগী বাংলাদেশিরা জানান, বাংলাদেশ থেকে রওনার আগে ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা বিমানসংস্থা থেকে তাদের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থার বিষয় আগাম কিছুই জানানো হয়নি। জানা থাকলে করোনা সনদের মতো কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিয়েই ফ্লাইটে উঠতেন।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক গালফ এয়ারের ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টা আগে নতুন নির্দেশনা হাতে পাওয়ায় কোয়ারেন্টিন বিষয়টি ছাড়া করোনা নেগেটিভ সনদসহ বাকি বিষয়গুলো নিশ্চিত করে যাত্রীদের ফ্লাইটে তোলা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই বাহরাইনহগামী যাত্রীদের বোর্ডিং করা হচ্ছে। এ নিয়ে আর নতুন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে বাহরাইনগামী সকল যাত্রীদের দেশটির সরকারের নিয়মাবলী অনুসরণ করে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নিশ্চিতে নির্ধারিত হোটেলে ১০ দিনের বুকিং দিয়ে প্রমাণপত্র কিংবা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলে চাইলে নিজের বা পরিবারের নামে ভাড়ার চুক্তি, বিদ্যুৎ বিলের কপি নিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নতুন নির্দেশনায় বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিয়েও বাহরাইনপ্রবাসী বিশেষ করে দেশে ছুটিতে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল। নতুন নির্দেশনায় ‘লাল তালিকায়’- থাকা বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও দেশটির নাগরিক ও রেসিডেন্স ভিসাধারীদের বাইরে রাখা হয়। কিন্তু, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেসিডেন্স ভিসা-আকামার বাংলাদেশিরাও প্রবেশ করতে পারবে না’ এমন তথ্য প্রচারে বিভ্রান্তিতে পড়েন প্রবাসীরা।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত ড. নজরুল ইসলাম বাহরাইনের বিভিন্ন ব্যক্তি/সংগঠন যারা বাহরাইন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত/নির্দেশনাবলী জনস্বার্থে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে থাকেন, তাদেরকে সাধারণ প্রবাসীদেরকে বিভ্রান্ত না করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এ জাতীয় প্রচারণা চালানোর বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Submarine cable breakdown may disrupt Bangladesh internet

It will take at least 2 to 3 days to resume the connection

21m ago