‘পাড়া ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলা হবে’

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ওই এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
গতকাল আনসার বাহিনীর সদস্যসহ আবুল খায়ের গ্রুপের ৫০ জন গিয়ে ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসরতদের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বসবাসরত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ওই এলাকা ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

কাঞ্চন কুমার ত্রিপুরা নামে ওই পাড়ার এক বাসিন্দা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার আনসার বাহিনীর সদস্যসহ আবুল খায়ের গ্রুপের প্রায় ৫০ জন এসে আমাদেরকে পাড়া ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে যান। পাড়া ছেড়ে না গেলে আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।’

‘৫০ জনের মধ্যে প্রায় ২০ জন আনসার বাহিনীর লোক ছিলেন। তারা আমাদের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন’, বলেন কাঞ্চন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকায় ত্রিপুরাদের জন্যে ১০টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায়। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যে জায়গায় ঘরগুলো তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেই জায়গা আবুল খায়ের গ্রুপ নিজেদের দাবি করে পাড়াবাসীদের বাধা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন। আবুল খায়ের গ্রুপ  সেই জায়গা নিজেদের বলে দাবি করছে। সেই জায়গার কিছু অংশ বন বিভাগের হতে পারে। কিন্তু, কোনোভাবেই তা আবুল খায়ের গ্রুপের নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়ের গ্রুপের একজন ম্যানেজার মো. ইমরুল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ত্রিপুরারাই আমাদের জায়গা দখল করেছে।’

ইউএনওর বক্তব্য তাকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন যদি বলে থাকে যে ওখানে আমাদের জায়গা নেই, তাহলে প্রশাসন না জেনে বলেছে।’

আনসার ভিডিপির চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের লোক সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু, কারো দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরেনি।’

সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় প্রায় ৭০ পরিবারের বসবাস বলে জানান নিশিরাই ত্রিপুরা নামে ওই পাড়ার এক বাসিন্দা।

তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে আমরা এখানে বসবাস করে আসছি। কিন্তু, প্রতিনিয়ত এখানে আমাদেরকে উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরা কি এদেশের নাগরিক?’

‘আমাদের পাড়াসহ আশপাশের কিছু জায়গার বর্তমান মালিক সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন’, বলেন নিশিরাই।

চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর আগে আমি এনাম চৌধুরী নামে একজনের কাছ থেকে প্রায় ১৩ একর জায়গা কিনেছিলাম। আমার জায়গায় বসবাস করা পাহাড়িদের কাছ থেকে আমি কোনো সময় ভাড়া দাবি করিনি। বরং বিভিন্ন সময় আমি তাদের পাশে ছিলাম। ওই জায়গা আবুল খায়ের কোম্পানি কীভাবে নিজেদের বলে দাবি করে?’

এনাম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার বাবার নামে থাকা জায়গা থেকে ত্রিপুরা পাড়াসহ প্রায় ১২ দশমিক ৫০ শতক জায়গা প্রায় ২০ বছর আগে এস এম আল মামুনকে আট বা ১০ লাখ টাকায় জায়গাটি বিক্রি করেছিলাম।’

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সীতাকুণ্ড ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে আসা ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ৩২৫ পরিবার ভূমিহীন অবস্থায় আছে।’

তিনি জানান, সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া ছাড়াও ছোট কুমিরা ত্রিপুরা পাড়ায় ১২২ পরিবার, মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাড়ায় ৪৫ পরিবার, ছোট দারোগাহাট ত্রিপুরা পাড়ায় ১০ পরিবার, সুলতানা মন্দির ত্রিপুরা পাড়ায় ৩০ পরিবার, বাঁশবাড়িয়া ত্রিপুরা পাড়ায় ১০ পরিবার, শীতলপুর ত্রিপুরা পাড়ায় ৩৮ পরিবার ত্রিপুরাদের বসবাস।

রবীন্দ্র ত্রিপুরা আরও বলেন, ‘আমাদের নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে এখানকার প্রভাবশালী কিছু ভূমিদস্যু ও বন বিভাগ আমাদের বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসা নিজ ভূমি ও জুমের জায়গা নিজেদের নামে করে নিয়েছে।’

‘সরকার যদি আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ায়, তাহলে মানবেতর দিন কাটানো এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়বে’, যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সাঈদ চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি উত্তর দেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Pak PM lauds Bangladesh’s economic progress

Says ‘we feel ashamed when we look towards them’

48m ago