তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

করোনাকালীন তাজ্জব ব্যাপার!

ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে শুধু ইতিহাস পরিবর্তন নয়, ইতিহাসের বহুকিছু গায়েব বা উধাও হয়ে যাওয়ার নজির আমাদের জানা আছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি গায়েব হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক ঘটনা মনে করি না। মাঝে-মধ্যেই এমন শোনা যায়। শাহেদ-সাবরিনাদের কাণ্ডও আমরা খুব বেশিদিন মনে রাখিনি। সম্ভবত পৃথিবীতে শাহেদরাই পরীক্ষা না করে করোনা রিপোর্ট দেওয়ার একমাত্র ইতিহাস নির্মাতা। গাড়ির ব্যবসায়ীকে, বিল্ডিং নির্মাতা দলীয় ঠিকাদারকে করোনার সময়ে মাস্ক সরবরাহের দায়িত্ব ও কেলেঙ্কারি সাময়িকভাবে আমাদের বিস্মিত করেছিল।
ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই হাজার শয্যার এই করোনা হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে শুধু ইতিহাস পরিবর্তন নয়, ইতিহাসের বহুকিছু গায়েব বা উধাও হয়ে যাওয়ার নজির আমাদের জানা আছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার নথি গায়েব হয়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক ঘটনা মনে করি না। মাঝে-মধ্যেই এমন শোনা যায়। শাহেদ-সাবরিনাদের কাণ্ডও আমরা খুব বেশিদিন মনে রাখিনি। সম্ভবত পৃথিবীতে শাহেদরাই পরীক্ষা না করে করোনা রিপোর্ট দেওয়ার একমাত্র ইতিহাস নির্মাতা। গাড়ির ব্যবসায়ীকে, বিল্ডিং নির্মাতা দলীয় ঠিকাদারকে করোনার সময়ে মাস্ক সরবরাহের দায়িত্ব ও কেলেঙ্কারি সাময়িকভাবে আমাদের বিস্মিত করেছিল।

‘যা হওয়ার হয়ে গেছে’ সেসব ধুয়ে-মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবার শুরু করেছি। কিন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আমাদের আবার তাজ্জব করে দেওয়া ঘটনা সামনে নিয়ে এসেছে।

দুই হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল গায়েব বা উধাও হয়ে গেছে। করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্যে বসুন্ধরায় প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি বানিয়েছিল স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দুই হাজার শয্যার করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটি বানানোর সময় বলা হয়েছিল, পৃথিবীর আর কেউ এত অল্প সময়ে এত বড় হাসপাতাল বানাতে পারেনি।

গত বছরের ১৭ মে হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর আর কেউ পারে নাই, উন্নত দেশও পারে নাই।’

পৃথিবীর এত বড় ঘটনাটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো হাসপাতালটি উধাও বা গায়েব হয়ে গেছে। দেশের মানুষকে একাত্তর টেলিভিশন হঠাৎ করে এ তথ্য জানিয়ে তাজ্জব করে দিলো। তারা জানাল, চার মাস আগে এই হাসপাতালটি তুলে নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বানানোর ছয় মাস পর্যন্ত দুই হাজার শয্যার হাসপাতালে একজনও রোগী ছিল না। একদিকে হাসপাতালে জায়গা নেই, আরেকদিকে হাসপাতাল ফাঁকা। ছয় মাসে একজনও রোগী পাওয়া গেল না। এটাও কম তাজ্জব ঘটনা নয়। কেন রোগী থাকল না, সামনে আবার দরকার হতে পারে কি না, তা কারও বিবেচনায় আসেনি।

আরেকটি তাজ্জব ব্যাপার। এই তথ্যটিও জানিয়েছে একাত্তর টেলিভিশন। মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় গত বছর একটি হাসপাতাল বানানো হয়েছিল করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্যে। অন্য হাসপাতালগুলোতে যখন স্থান সংকুলান হচ্ছিল না, তখন তড়িঘড়ি করে হাসপাতালটি বানানো হয়েছিল। এক হাজার ৩৯০ শয্যার এই হাসপাতাল বানাতে খরচ হয়েছিল ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

মহামারির প্রকোপ কমার পর আবার বেড়েছে। এই একই ভবনের পঞ্চম তলায় এখন আরেকটি হাসপাতাল বানানো হচ্ছে। তাজ্জব ব্যাপার হলো, দোতলার হাসপাতালটি ধুলো-ময়লার স্তূপে পরিণত হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে বানানো হাসপাতালটিতে কেন ধুলো-ময়লা জমল? কেন তা পরিষ্কার না করে, একই ভবনে আরেকটি নতুন হাসপাতাল বানানো হচ্ছে? আংশিক উত্তর পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে। পঞ্চম তলার হাসপাতাল নির্মাণকাজের অগ্রগতি দেখতে এসে নতুন হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হাসপাতালগুলোতে এক ইঞ্চি জায়গায়ও নেই, যেখানে আরেকটি বেড রাখতে পারবেন। তখন বেডটা কোথায় দেবো? আপনাদের বাড়িঘরে বেড নিয়ে গেলে তো হবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঠিক বলেছেন, বেড তো সাংবাদিকদের বাড়িঘরে বসানো যাবে না, হাসপাতালে বসাতে হবে। কিন্তু, উপস্থিত সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করেননি যে, দ্বিতীয় তলার হাসপাতালটি পরিষ্কার না করে কেন পঞ্চম তলায় আরেকটি হাসপাতাল বানানো হচ্ছে?

আমরাও একাধিকবার টেলিফোনে চেষ্টা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।

করোনার শুরুতে মাত্র ১০ দিনে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল চীন। যা দেখে আমরা তাজ্জব হয়েছিলাম। তেজগাঁয়ে আকিজ গ্রুপের সহায়তায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মাত্র ২০-২৫ দিনে ৩০০ শয্যার  একটি আধুনিক করোনা হাসপাতালের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে তাজ্জব সংবাদের জন্ম দিয়েছিল। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিছিল-সমাবেশ ও ভাঙচুর করে হাসপাতালটি নির্মাণ বন্ধ করে দিয়ে আরও বড় তাজ্জব সংবাদের জন্ম দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল আবাসিক এলাকায় করোনা হাসপাতাল করতে দেওয়া হবে না।

এখন একদিকে লকডাউন, নিষেধাজ্ঞা, সর্বাত্মক লকডাউন— শব্দমালা, আরেকদিকে শপিংমল-দোকান, গণপরিবহন চালু করে দিয়েছি। সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। তাজ্জবের স্থান দখল করে নিয়েছে আশঙ্কা-আতঙ্ক।

[email protected]

আরও পড়ুন:

লকডাউন বা নিষেধাজ্ঞায় ভাবা হয়নি গরিবের কথা

ভ্যাকসিন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা ও গণস্বাস্থ্যের কিট

করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়

ভ্যাকসিন নেওয়া এবং না নেওয়া, মানুষ চিহ্নিত হবে দুই দলে

Comments

The Daily Star  | English

First phase of India polls: 40pc voter turnout in first six hours

An estimated voter turnout of 40 percent was recorded in the first six hours of voting today as India began a six-week polling in Lok Sabha elections covering 102 seats across 21 states and union territories, according to figures compiled from electoral offices in states

1h ago