আমেরিকায় প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের বিজয়

আমেরিকার সর্বোচ্চ পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় এবং জো বাইডেনের অভিষেক শুধু ক্ষমতার পালাবদলের গতানুগতিকতা নয়; ১৭৭৬ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও নজিরবিহীন এক ঘটনা।
Capitol_14Jan21.jpg
ছবি: রয়টার্স

আমেরিকার সর্বোচ্চ পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় এবং জো বাইডেনের অভিষেক শুধু ক্ষমতার পালাবদলের গতানুগতিকতা নয়; ১৭৭৬ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও নজিরবিহীন এক ঘটনা। 

২০২০ সাল কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির বছর হওয়ায় একে ভুলে যাওয়া যাবে না কখনোই। করোনা ছাড়াও আরও একটি কারণে বিশ্ববাসী বছরটিকে মনে রাখবে; বিশেষ করে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য, সাহস ও শক্তিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের অপরিহার্যতা আগামীর পৃথিবীতে যতদিন উচ্চারিত হবে ততদিন ২০২০ স্মরণীয়-বরণীয় বছর হয়ে থাকবে। কারণ, সদ্য বিদায়ী বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের বিদায় ঘণ্টা নিশ্চিত হয় এবং জো বাইডেন বিজয়ী হন, আর এই নির্বাচনকে ঘিরে-নির্বাচন পরবর্তী ফলাফলকে উপলক্ষ করে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে যা কিছু ঘটেছে তার সবটাই ছিল এককথায় অকল্পনীয়-অভূতপূর্ব এবং আমেরিকার গণতান্ত্রিক রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাকর ও কলঙ্কজনক ঘটনা।

অবশ্য উদ্ভূত ঘটনাগুলো যেমন ছিল সত্য ও মর্মন্তুদ এক বাস্তবতা তেমনি এই প্রেক্ষাপটে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবং সদ্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমেরিকা কী বার্তা দিয়েছে সেটা বিশেষভাবে ভাবনার দাবি রাখে। ট্রাম্প, বাইডেনের আমেরিকার দেওয়া বিশেষ বার্তাটা তালাশ করার আগে জেনে নেওয়া যাক ২০২০ সালের বিশেষত্ব।

আমেরিকার নির্বাচনের আগে পর্যন্ত করোনা ছিল এই গ্রহের সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা এবং এখনও চলমান ও প্রবলভাবে শঙ্কা ও মরণভীতি উদ্রেককারী। আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বেদনার ও শোকাবহ ঘটনা হলো করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা দেশটিতে সব থেকে বেশি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দগদগে ক্ষত ও সোয়াইন ফ্লুর সর্বনাশা আক্রমণ ১৯২০ সালে আমেরিকাকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি, অর্থনৈতিক মহামন্দায় পড়তে-পড়তে শেয়ার বাজারের অবিশ্বাস্য-মিরাকলীয় উত্থানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু করোনা পীড়িত আমেরিকার শনির দশা যেন কাটছেই না, এর জন্য কি ট্রাম্পের একগুঁয়েমি ও হঠকারী সিদ্ধান্ত দায়ী?

উল্লেখ্য, মহামারির ঘটনা বিশ্ববাসীর জন্য নতুন কিছু নয়। ফি শতাব্দেই মানুষকে এর মুখোমুখি হতে হয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রতি শতাব্দীর ২০ সালে পৃথিবীবাসীকে কোনো নো কোনো মহামারি মোকাবিলা করতে হয়েছে, এর আগেও এমন ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা মিলেছে ইতিহাসের ধুসর পাতায়। কিন্তু পূর্বতন মহামারির সঙ্গে করোনার ফারাক বিস্তর এবং ভয়ঙ্কর রকমের। কেননা, করোনা পুরো পৃথিবীকে করেছে গৃহবন্দী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করেছে অচল-নিষ্ক্রিয় ও ভঙ্গুর। বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা কতটা অপ্রতুল—মহামারি মোকাবিলায় কতটা দুর্বল ও অপারগ তা স্পষ্ট করেছে ২০২০।

এসবের মধ্যেই হাজির হয় আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনাবলী এবং শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের বিজয় ২০২০ সালেরতো বটেই আমেরিকার ইতিহাসেরই যেমন গৌরবজনক অধ্যায়, তেমনি কলঙ্ক ও লজ্জারও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বার্তাটা ছিল গৌরবের এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের এই বিজয় ছিল বিশেষ মহিমা ও মর্যাদারও।

ট্রাম্পের চার বছর ছিল নানাভাবে আলোচিত। প্রভূত বিতর্কের জন্ম দিয়ে যে আমেরিকাকে তিনি হাজির করেছেন, তা কোনোভাবেই চেনা আমেরিকা নয়। এর মধ্যে কয়েকটা প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। এগুলো হলো-

১. অভিবাসন বিরোধিতা-নিষেধাজ্ঞা

২. প্রতিবেশী মেক্সিকোর প্রতি বিরূপ আচরণ-সীমানা দেয়াল নির্মাণ

৩. জলবায়ু সমস্যাকে অগ্রাহ্য করা-প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে থেকে বেরিয়ে আসা

৪. জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা-জাতিসংঘের ১২০টি দেশ এর বিরোধিতা করলে, জাতিসংঘকে প্রদেয় অনুদান কাটছাঁট করা

৫. কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা এবং সুবিধা করতে না পারায় অনুদান বন্ধের হুমকি

৬. মহামারির মধ্যে লকডাউন শিথিল করার প্রশ্নে বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা

শুধু এসব করেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ১৮ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বিতর্কিত এক নির্বাচনের মাধ্যমে আবার পুনর্নির্বাচিত হলে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত পাকা করে ফেললে ট্রাম্প সেই ব্যবস্থার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে তার মনোভাবটা বুঝতে কারও বেগ পেতে হয়নি, যা নিয়ে সেসময় প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন রিপাবলিকান নেত জন ম্যাকেন।

শুধু কি তাই, নোবেল পুরস্কার না পাওয়া নিয়ে যে আক্ষেপ উচ্চারিত হয়েছে ট্রাম্পের কণ্ঠে তা রীতিমতো হাস্যকর ও বালখিল্য আচরণ ছাড়া কিছু নয়। এমন কথাও চাউর রয়েছে যে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সিঙ্গাপুর আর হ্যানয়ে তার যে আলোচনায় বসা তার লক্ষ্য যতোটা ছিল বিশ্বশান্তি অন্বেষণ ও দুই দেশের মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থা কমিয়ে নিয়ে আসা—তার চেয়ে বেশি ছিল নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর উদগ্র বাসনা, যা শেষ অবধি অধরাই থেকে গেছে।

নানা নাটক-উপনাটক-পার্শ্বনাটকের মধ্য দিয়ে ২০১৭ তে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ট্রাম্পের চার বছর পূর্ণ হয়ে যায় ২০২০ এর মহামারি আক্রান্ত বছরে। উদগ্রভাবেই ট্রাম্প কূটচাল শুরু করেন। এসবের মধ্যে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার চেষ্টা, লিখিত বা ডাকযোগে ভোট না নেওয়াসহ প্রকাশ্যেই নানা টাল বাহানা যেমন ছিল তেমনি ছিল নির্বাচনের ফলাফল না মানার ঘোষণাও। কিন্তু কোনো কিছুতেই কল্কে জোটেনি ক্ষমতালোভী ট্রাম্পের ভাগ্যে।

নির্বাচন হয়েছে এবং কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই কারচুপির অভিযোগ এনেছেন। এমনকি ফলাফল উল্টে দেওয়ার জন্য আবারও আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন-হয়েছেনও। কিন্তু তাতেও শিকে ছিঁড়েনি । ট্রাম্প এতটাই ভয়ঙ্কর যে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমেরিকার সমাজে বিভক্তি ও বর্ণবাদকে পুরোদস্তুর মশলা বানিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ট্রাম্প হয়তো বুঝতে পারেননি তিনি ভুল দেশে-ভুল সমাজে-ভুল সময়ে জন্মেছেন, যে দেশে চাইলেই জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। কারণ সেখানে সংবিধানের ভিত্তি আর গণতন্ত্রের চর্চা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহে এতোটাই শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে যে, রাশিয়া-চীন-ফিলিপাইন-উত্তর কোরিয়ায় যেটা সম্ভব আমেরিকাতে সেটা কস্মিনকালেও নয়। কারণ সেখানে জন্মেছিলেন একজন জর্জ ওয়াশিংটন-থমাস জেফারসন-আব্রাহাম লিঙ্কনের মতো রাষ্ট্রনায়ক, যারা সংবিধান ও গণতন্ত্রকে ব্যক্তির উপরে নিয়ে গেছেন, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র চর্চাকে সমাজ-রাষ্ট্রের ঐতিহ্য হিসেবে আঁটসাঁট করে বেঁধে দিয়েছেন।

ট্রাম্প উপস্থিত থাকেননি বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে। তাতে হয়তো তেমন কিছু যায় আসে না। কিন্তু এটা প্রতীয়মান হয়, ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ের উপরে দেশকে স্থান দিতে তিনি অপারগ। আমেরিকায় নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের এবারের মতো উপস্থিত না থাকার ঘটনা ১৫২ বছর আগে একবারই ঘটেছিল। সেবার অ্যান্ড্রু জনসন উপস্থিত ছিলেন না অভিসংশিত হওয়ার কারণে।

ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ করে এবং এ ব্যাপারে কোনো প্রকার মতামত ব্যতিরেকে-নিদেনপক্ষে দুঃখটুকু প্রকাশ না করে, ক্ষমতালোভকেই করেছেন নগ্ন আর গণতন্ত্রকে পাপবিদ্ধ-পঙ্কিলতাযুক্ত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রেরই জয় হয়েছে, কারণ আমেরিকার গণতন্ত্রের শক্তি-সাহস ও সৌন্দর্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রই যে অ্যারিস্টটলীয় গণতন্ত্রের চাবিকাঠি তার যুতসই জবাব পুষ্ট রয়েছে সমাজ-রাষ্ট্রের চালিকাবাহী প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানে। ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি গেম খেলে ততটুকুই কামিয়াব হওয়া যায় যতটা ফাউল প্লে আর লোফালুফিতে সম্ভব। ট্রাম্প এসব মুখে স্বীকার না করলেও উপলব্ধি করেছেন মর্মে মর্মে।

বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর ট্রাম্পের আভাস মেলে ‘টু মাচ অ্যান্ড নেভার এনাফ: হাউ মাই ফ্যামিলি ক্রিয়েটেড দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস ম্যান’ বইয়ে। ট্রাম্পের ভাইঝি মনোবিদ মেরি- মনে করেন, বিভাজন-বিভক্তিকেই বাঁচা ও প্রাপ্তির একমাত্র পথ বলে জ্ঞান করেন ট্রাম্প। বইটির পরতে পরতে রয়েছে সেই কাহিনী, যা রূপকথাকেও হার মানায়। বিশ্বের ভয়ানকতম মানুষটিকে সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প পরিবার-বাবা ফ্রেড ট্রাম্প সিনিয়র। কিন্তু ফ্রান্কেনস্টাইন হওয়ার আগেই ট্রাম্পের বিদায় ঘণ্টা বেজেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে আমেরিকান সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহে ঐতিহ্যগত ভাবে গণতন্ত্রের চর্চা বিদ্যমান থাকার কারণেই। প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রই ট্রাম্পের লাগাম টেনেছে এবং বিপথগামীতা থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নামক ধারাবাহিক নাটকের মঞ্চায়ন দেখে যারা মনে করেন, গণতন্ত্র তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে কিংবা পৃথিবীর দেশে দেশে গণতন্ত্রের প্রশ্নে কথা বলা আর সবক দেয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে আমেরিকা, তারা প্রকৃতার্থে সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন, ক্ষুদ্র নেতিবাচকতাকে বড় করে দেখছেন। বরং ভাবা উচিৎ উল্টোভাবে, সেটা হলো ট্রাম্পের ঘটনা আমেরিকার গণতন্ত্রের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ নয়, গণতন্ত্রের শক্তিরই প্রকাশ, চূড়ান্ত বিজয়।

হ্যাঁ ট্রাম্পকে আমেরিকার শতকরা ৪৭ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছেন, কিন্তু তাদের সবাই কি ক্যাপিটাল হিলের আক্রমণকে সমর্থন করেন, সর্বাগ্রে এই আলোচনাটা হওয়া জরুরি। জনগণ কখনো কখনো দ্বিধান্বিত হতে পারে, ভুল বৃত্তে, কুরাজনীতির আবর্তে আটকে যেতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো সেই আবর্ত থেকে জনগণকে উদ্ধার করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা। আমেরিকাতেই সেটাই হয়েছে। প্রতিষ্ঠান যে মুখ্য ও কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট হয়েছে ট্রাম্প নাট্যে। সুতরাং গণতন্ত্র ব্যক্তির উপর নয়, টিকে থাকে প্রতিষ্ঠানের উপর, কারণ ব্যক্তি আসে যায়-প্রতিষ্ঠান থেকে যায় বছরের পর বছর, শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে।

আমেরিকার সমালোচনা করা যেমন যায় যৌক্তিক ভাবেই, তেমনি প্রশংসা করার উপাদান-অনুষঙ্গও রয়েছে ঢের। তারা রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে কর্তৃত্ববাদ পছন্দ করে এবং দেশে দেশে সেটা রপ্তানিও করে, কিন্তু নিজেদের দেশে কেউ কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠুক সেটা তারা বরদাশত করে না, সেই সংস্কৃতিকে তারা প্রশ্রয়ও দেয় না, তাদের গণতন্ত্র চর্চিত হয় ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়, প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়। এটাই আমেরিকা, এটাই আমেরিকার গণতন্ত্রের বিশেষত্ব। ট্রাম্পের কুনাট্যে সেটাই শক্তভাবে প্রমাণিত ও প্রতীয়মান হলো। একারণেই বুঝি তাবৎ বিশ্ব পছন্দ করুক আর নাইবা করুক, আমেরিকা সগর্বে-প্রত্যয় নিয়েই বলে এই পৃথিবীকে দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের।

জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে কবি আমান্ডা গোরমেন যেন হয়ে উঠেছেন রবার্ট ফ্রস্ট। ১৯৬১ তে মানবতাবাদের প্রতি প্রবলভাবে নিবেদিত আমেরিকার আরেক ডেমোক্রেট রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির শপথ অনুষ্ঠানে ৮৬ বছর বয়সী ফ্রস্ট ‘দ্য গিফট আউটরাইট’ কবিতায় বলেছিলেন, ‘সাচ অ্যাজ শি ওয়াজ, সাচ অ্যাজ শি উড বিকাম।’ কেনেডির অনুরোধে ফ্রস্ট শেষ লাইন বদলে বলেছিলেন একথা, ‘স্যাচ অ্যাজ শি উইল বিকাম’। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে ২২ বছর বয়সী আমান্ড গোরম্যান ‘দ্য হিল ওয়ে ক্লাইম্ব’ কবিতায় যথার্থ বলেছেন, ‘দেয়ার ইজ অলওয়েজ লাইট/ ইফ অনলি উই আর ব্রেভ এনাফ টু সি ইট/ ইফ অনলি উই আর ব্রেভ এনাফ টু বি ইট।’

জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের খবরের শিরোনামও ছিল বেশ আগ্রহোদ্দীপক-চিত্তাকর্ষক ও সবিশেষ বার্তাবাহী। বিশ্বের তাবড় পত্রিকার মধ্যে অধিকাংশই বেছে নিয়েছিল প্রধান শিরোনামে নতুবা প্রধান উপশিরোনাম, ‘ডেমোক্রেসি হ্যাজ প্রিভেইলড’।

আমেরিকা সত্যিই প্রমাণ করেছে, ‘ডেমোক্রেসি হ্যাজ প্রিভেইলড’, কারণ গণতন্ত্রই তাদের শেষ গন্তব্য, সাড়ে তিনশ বছরের প্রত্যয়।

ড. কাজল রশীদ শাহীন: সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক।

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Why planting as many trees as possible may not be the solution to the climate crisis

The heatwave currently searing Bangladesh has led to renewed focus on reforestation efforts. On social media, calls to take up tree-planting drives, and even take on the challenge of creating a world record for planting trees are being peddled

46m ago