প্রথার বিপরীতে হাঁটতে পারা একজন শক্তিমান অভিনেতা

একজন গুণীর মুখে আরেকজন গুণীর কীর্তিকথা। প্রসঙ্গত খ্যাতিমান অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর সম্পর্কে কথা উঠলে প্রাক্তন প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খানের মুখে রূপকথার মতোই ফুটে ওঠে পুরনো সেই দিনের কথা। আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত কিছু কিংবদন্তি চরিত্র হচ্ছে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের ‘বাকের ভাই’ এবং অপরটি হচ্ছে ‘অয়োময়’ নাটকের ‘মির্জা সাহেব’।

একজন গুণীর মুখে আরেকজন গুণীর কীর্তিকথা। প্রসঙ্গত খ্যাতিমান অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর সম্পর্কে কথা উঠলে প্রাক্তন প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খানের মুখে রূপকথার মতোই ফুটে ওঠে পুরনো সেই দিনের কথা। আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত কিছু কিংবদন্তি চরিত্র হচ্ছে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের ‘বাকের ভাই’ এবং অপরটি হচ্ছে ‘অয়োময়’ নাটকের ‘মির্জা সাহেব’। জনমুখে বাকের ভাই চরিত্রটি বহুল প্রচলিত হলেও অয়োময় নাটকের নাট্য নির্মাতা নওয়াজীশ আলী খান কিন্তু ‘মির্জা সাহেব’ চরিত্রটিকেই বেশি এগিয়ে রাখলেন। তৎকালীন ‘মির্জা সাহেব’-এর মতো একটি গুরুগম্ভীর চরিত্রে আসাদুজ্জামান নূরই কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘মূলত জমিদার বা রাজা-বাদশা ঘরানার চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, কোনো একজন সুঠামদেহী বাজখাঁই কণ্ঠবিশিষ্ট অভিনেতাকে নেয়া হয়। আমরা এ প্রথার বিপরীতে হাঁটতে চেয়েছিলাম; আর সে জন্যই তাকে মনোনীত করা। মানে আমরা যেটি চাইছিলাম, আসাদুজ্জামান নূর ছিলেন ঠিক তেমনই একজন অভিনেতা।’ অভিনয়ের থাকে নানান প্রকরণ। মঞ্চ, ছোট পর্দা, বড় পর্দা আরো কত কী! আসাদুজ্জামান নূরকে সবক্ষেত্রেই দেখা গেছে সমান পারদর্শী। বড়পর্দার কথা উঠলে যুদ্ধোত্তর সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’র প্রসঙ্গ তুলতেই হয়। ওই সিনেমায় মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রটি আসাদুজ্জামান নূর যেমন ফুটিয়ে তুলেছেন, সম্ভবত অন্য কারো পক্ষে তেমনটি সম্ভবপর হতো না, জানালেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক নির্বাহী প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খান। অভিনয়ের বাইরেও আসাদুজ্জামান নূরকে পরিচিত করা যায় আরো কিছু বিশেষ পরিচয়ে। তিনি একাধারে আবৃত্তিকার, উপস্থাপক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অভিনয়কে বাদ দিয়ে আসাদুজ্জামান নূরের আর কোন গুণটি তাকে মুগ্ধ করেছে? উত্তরে দু’বারের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত টিভি ব্যক্তিত্ব নওয়াজীশ আলী খান বলেন, ‘অবশ্যই আবৃত্তি। তার কণ্ঠের শ্রুতিমধুর উচ্চারণ যেকোনো কাব্যমোদীকেই মোহিত করে দেয়।’ কথায় কথায় উঠে আসে আসাদুজ্জামান নূরের স্টাইলিশ দাড়ির প্রসঙ্গ। কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে দাড়িবিহীন সময়ে দেখেছেন এমন ব্যক্তি খুব কমই মেলে। নওয়াজীশ আলী খান তাদের একজন। তিনি বলেন, ‘এই স্টাইলে ওনাকে বেশ মানিয়ে গেছে; এখন দাড়ি না থাকলে হয়তো দাড়িবিহীন আসাদুজ্জামান নূরের জনপ্রিয়তা কমেও যেতে পারে।’ পর্দার বাইরের আসাদুজ্জামান নূরকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন অমায়িক, ভদ্র, নম্র, বন্ধুসুলভ ইত্যাদি সব বিশেষণে। শিল্পী হিসেবে আসাদুজ্জামান নূর কি সফল হতে পেরেছেন? এ বিষয়ে এটিএন বাংলা চ্যানেলের বর্তমান উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খানের বক্তব্য হচ্ছে, ‘আসলে একজন শিল্পীর সফলতা অর্জনের কোনো পরিসীমা নেই। এখনো তিনি অভিনয় চালিয়ে গেলে উন্নতির পর উন্নতিই করে যাবেন’। তারপর বিশেষ স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে তিনি বলেন, ‘আসাদুজ্জামান নূর নিজেও আমার নাটকে কাজ করায় আগ্রহী ছিলেন; নওয়াজীশ আলী খানের নাটকের সংখ্যা কম হলেও সেই নাটকগুলো হয় দর্শক নন্দিত। এটি আসাদুজ্জামান নূরেরই বক্তব্য। বর্তমানে আসাদুজ্জামান নূরের সময় কাটে ব্যস্ততায়। এত কিছুর মধ্যেও তিনি যেন সেই তিনিই রয়ে গেছেন। আগেও নওয়াজীশ আলী খানের কাছে আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়শৈলীর সার্থকতার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তখন অবশ্য প্রশ্ন করেছিলেন স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ। এই প্রশ্নের উত্তরে এবারও একই বাক্য ব্যবহার করলেন নওয়াজীশ আলী খান : ‘আসাদুজ্জামান নূর যখন পর্দায় উপস্থিত হয়, তখন মনে হয় পর্দাটি যেন হেসে উঠল।’
 অনুলিখন : শিবলী আহমেদ

 

Comments

The Daily Star  | English
Inner ring road development in Bangladesh

RHD to expand 2 major roads around Dhaka

The Roads and Highways Department (RHD) is going to expand two major roads around Dhaka as part of developing the long-awaited inner ring road, aiming to reduce traffic congestion in the capital.

17h ago