অন্তঃসত্ত্বা নারীকে লাথি মারার অভিযোগ শজিমেক ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগী, রোগীর স্বজন ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে লাথি মারার অভিযোগও তুলেছেন স্বজনরা।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগী, রোগীর স্বজন ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে লাথি মারার অভিযোগও তুলেছেন স্বজনরা।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময়ে শজিমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে এই ঘটনা ঘটে।

বগুড়া শাজাহানপুরের নন্দ গ্রামের আসলাম আলী (৩৪) অভিযোগ করেন, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জয়নব বেগম (২৮) গত বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন তাকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গতকাল দুপুরে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে স্যালাইন দেওয়া হয়। বিকেল ৩টার সময় জয়নব কাঁপতে শুরু করে এবং বমিও করে। তিনি চিকিৎসকদের বিষয়টি জানান এবং রোগীকে দেখার জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু, তার কথা হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসক আমলে নিচ্ছিলেন না।

তিনি বলেন, 'এক সময় আমি তাদেরকে বলি, আমি মোবাইলে লাইভ করবো। আপনারা রোগী এবং তার স্বজনদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন তা দেখাব। এতেও কোনো কাজ হয়নি। বরং তারা আমাদের হুমকি দেয়।'

'এরপরে আমি এবং আমার ছোট ভাই মাগরিবের নামাজের পরে আবার ডাক্তারদের কাছে যাই। তখন তারা আমাকে একটি রুমে নিয়ে যায়। ৪৫ থেকে ৫০ জনের মতো ইন্টার্ন ডাক্তার আমাকে কিল, ঘুষি মারে এবং চেলা কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকে। তারা আমার ছোট ভাই জাকির হোসেনকেও মারধর করে। খবর পেয়ে আমার স্ত্রী ছুটে আসে আমাদের বাঁচাতে। তখন এক ইন্টার্ন ডাক্তার তার পেটে লাঠি মারে,' বলেন আসলাম।

মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর শামীম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'রোগীর স্বজনকে আটকে রেখে মারধর করার খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করতে যাই। সেখানে আমার মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন কনস্টেবল ছিল। কিন্তু সেখানে ৫০ জনের মতো ইন্টার্ন ডাক্তার আসলাম ও তার ভাই জাকিরকে মারধর করছিলেন। ডাক্তাররা সেই দৃশ্য মোবাইলেও ধারণ করেন। আসলামের স্ত্রী আসলে এক ছেলে ইন্টার্ন ডাক্তার তার পেটে  লাথি মেরে পালিয়ে যায়। এতে রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আমরা আসলামকে উদ্ধারের সময় ইন্টার্ন ডাক্তাররা আমাদেরও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।'

এ বিষয়ে জনাতে চাইলে শজিমেকের উপ-পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে বর্তমানে এক হাজার ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। তার মধ্যে করোনা রোগী আছেন ১০০ জন। এত রোগী সামাল দিতে গিয়ে চিকিৎসকরা একই রোগীর কাছে বারবার যেতে পারেন না। গতকাল দুপুরে ওই রোগীর স্বজন ভিডিও ধারণ করতে গেলে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে একটা ঝামেলা হয়। পরে সন্ধ্যায় ওই রোগীর স্বামী আরও লোকজন নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। এ সময় পুলিশ, রোগীর স্বজন এবং ইন্টার্ন ডাক্তারদের সঙ্গে একটা ধস্তাধস্তি শুরু হয়।'

'পরে আমরা গিয়ে রোগীর স্বজন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলি এবং রোগীকে চিকিৎসা নিতে বলি। কিন্তু তার স্বজনরা রোগীকে এখন থেকে অন্যত্র নিয়ে গেছেন,' বলেন ডা. আব্দুল ওয়াদুদ।

রোগীর পেটে লাথি মারার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'এই অভিযোগ সত্য না। ধস্তাধস্তির সময় রোগী এসে পড়ায় হয়তো একটু আঘাত পেয়ে থাকবেন, কিন্তু কেউ তাকে পেটে লাথি মারেননি।'

তবে এই ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Comments

The Daily Star  | English

Freedom declines, prosperity rises in Bangladesh

Bangladesh’s ranking of 141 out of 164 on the Freedom Index places it within the "mostly unfree" category

1h ago