শুষ্ক ত্বক: শীতের প্রভাবে নাকি রোগজনিত?

শীতের প্রবাহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করেছে, লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই। শীতে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ায় ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়, যার প্রভাবে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।

শীতের প্রবাহ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করেছে, লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই। শীতে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ায় ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়, যার প্রভাবে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।

আবহাওয়া পরিবর্তন ছাড়াও আরও নানান কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে জেরোসিস বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি সমস্যা যা কমবেশি সব বয়সীদেরই হতে পারে। সাধারণভাবে হাত, পা এবং পেটের উভয় দিক আক্রান্ত হয় বেশি। তবে অন্য স্থানেও এই পরিবর্তন হতে পারে।

কীভাবে হয়

ত্বকের 'ইপিডার্মিস'-এ 'স্ট্যাটম কর্নিয়াম' নামে একটি স্তর থাকে। এটি অনেকটা পলিথিনের আবরণের মতো আমাদের শরীরকে আবৃত করে রাখে। এই স্তরই পানি ধারণ করে ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশে বাধা দেয়। কোনো কারণে এই স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং সমস্যাটি তৈরি হয়।

কেন হয়

আবহাওয়া: ঋতু পরিবর্তনে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে গেলে ত্বক থেকে পানি শুষে নেয় এবং ত্বক রুক্ষ ভাব ধারণ করে। শীতে শুষ্ক ত্বকের প্রবণতা এ কারণেই হয়ে থাকে। এ ছাড়াও, রুম হিটার, এয়ারকন্ডিশনারের কারণেও রুমের জলীয়বাষ্প কমে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

বয়স: সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্বদের ত্বকের ইপিডার্মিস পাতলা হতে শুরু করে। এর ফলে ত্বকও শুষ্ক ও রুক্ষ হতে শুরু করে। যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব তারাই বেশি আক্রান্ত হন। নারীদের মাসিক বন্ধ (মেনপজ) হওয়ার পর এ সমস্যা প্রকাশ পেতে থাকে।

সূর্যালোক: সরাসরি সূর্যালোকের কারণে যেকোনো ঋতুতেই ত্বক শুষ্ক হতে পারে। কারণ সূর্যের উত্তাপে ত্বকের পানি ও নিঃসরিত তেল শুকিয়ে যায়।

সাবান ও ডিটারজেন্ট: সাবান, ক্লিনজার ও ডিটারজেন্ট ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সময় ত্বকের পানি ও তেল শুষে নেয়। এগুলো যত বেশি ক্ষারীয় হয় ততবেশি তেল ও পানি শুষে নেয়।

রোগজনিত কারণ: শরীরে কিছু রোগের কারণে ত্বকের পানি ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং ত্বক রুক্ষ হয়। এটপিক ডার্মাটাইসিস, সোরাইয়াসিস, ইকথায়োসিসের মতো ত্বকের রোগ থাকলে ত্বক রুক্ষ হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে রুক্ষতা ছাড়াও চুলকানি, ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বকে প্রদাহ এবং স্কেলিং লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও, কিডনিজনিত রোগ, পুষ্টির অভাব এবং ভিটামিন (এ/ই)-এর ঘাটতিতে ত্বক রুক্ষ হতে পারে।

ওষুধ: কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

কীভাবে মুক্ত থাকবেন

সাধারণভাবে শীতে শুষ্ক ত্বক থেকে পরিত্রাণ পেতে ত্বকের যত্নে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন:

১. কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন।

২. গোসলের সময় কোমলভাবে শরীর পানিতে ধুয়ে ফেলুন, কখনই শরীর ঘষবেন না।

৩. সাবান ও ক্লিনজার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী এগুলো নির্বাচন করুন।

৪. গোসলের পর শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

৫. প্রয়োজনে রুমের ভেতর 'হিউমোডিফায়ার' ব্যবহার করুন।

৬. প্রচুর পানি পান করুন।

৭. খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ রাখুন।

৮. সাবান ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার পরও যদি ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষতা থেকে পরিত্রাণ না পান, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

29m ago