হাসপাতালগুলোর সামনে আরও কঠিন সময়

করোনা মহামারির তীব্রতা দেশের হাসপাতালগুলোকে তাদের সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ সক্ষমতার শেষ সীমায় নিয়ে গেছে।
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের সামনে আবুল হোসেনের মরদেহের সামনে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ৪৮ বছর বয়সী এই রোগীকে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের কারণে ঈদের দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ছবি: আনিসুর রহমান

করোনা মহামারির তীব্রতা দেশের হাসপাতালগুলোকে তাদের সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ সক্ষমতার শেষ সীমায় নিয়ে গেছে।

হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা পাওয়াও দুষ্কর হয়ে গেছে। কয়েকদিন অপেক্ষা করে কিংবা তদবির করেও অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা।

করোনা আক্রান্ত বহু রোগীকে যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে ঠিক সেই অবস্থায় গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থার কথা বলেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'এভাবে করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকলে হাসপাতালে রোগীদের জায়গা হবে না।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল প্রতি ১০টি নমুনা পরীক্ষায় তিনটিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে এক-তৃতীয়াংশ কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের প্রায় ৭৫ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা ৩৩৬টি এবং এর মধ্যে ২৪টিতে কোনো শয্যা খালি নেই।

প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা পূর্ণ।

গতকাল পর্যন্ত দেশের হাসপাতালগুলোর ৮৭ শতাংশ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'কোভিড রোগীর সংখ্যা কমাতে হলে সংক্রমণ কমাতে হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, সংক্রমণ কমাতে সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে চলতে হবে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমণ বাড়ায় হাসপাতালে চাপ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যদি এভাবেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে হাসপাতালে কোনো জায়গা থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্তত ২৪টি জেলা অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। এই জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার জাতীয় গড় ৩০ শতাংশের চেয়ে বেশি এবং জেলার হাসপাতালগুলোতে তিন-চতুর্থাংশ শয্যা ইতোমধ্যেই ভর্তি হয়ে আছে।

উদাহরণস্বরূপ, বরিশালে করোনা সংক্রমণের হার ৫১ শতাংশ। কিন্তু সেখানে মাত্র দুটি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে এবং সেগুলোতে কোনো শয্যা খালি নেই।

রাজবাড়ীতে একটি মাত্র কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল আছে। জেলায় সংক্রমণের হার ৫৩ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালটির ৯২ শতাংশ শয্যা পূর্ণ ছিল।

চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশ। সেখানে ১৩টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের তিনটিতে কোনো শয্যা খালি নেই আর বাকিগুলোর তিন-চতুর্থাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন।

গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কোভিড রোগীদের জন্য শয্যার সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করেছি। আজ (গতকাল) পর্যন্ত এখানে ৩০৪ জন কোভিড রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে।'

ময়মনসিংহে সংক্রমণের হার ২৩ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে কম। কিন্তু তার পরও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। ২৩০ শয্যার বিপরীতে সেখানে ৪৭৮ জন রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। একই সময়ে ১৫ হাজার ১৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় সর্বমোট মারা গেছেন ১৯ হাজার ৫২১ জন।

ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকার প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, 'আমরা হিসেব করে দেখেছি, আগামী এক বছরে ২১ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করছি।'

সরকারের আট কোটি টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

মন্ত্রী জানান, সরকারের এখন আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারে সংরক্ষণ করতে হয় এমন ৩০ লাখ ডোজ টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে এক কোটি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

 

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Reference Institute for Chemical Measurements (BRiCM) developed a dengue rapid antigen kit

Diagnose dengue with ease at home

People who suspect that they have dengue may soon breathe a little easier as they will not have to take on the hassle of a hospital visit to confirm or dispel the fear.

10h ago