শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলেন না রেশমা

শ্বাসকষ্ট-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রেশমা আক্তারকে মুন্সিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে এনেছিলেন তার বাবা পিয়ার আলী। আজ সকাল ৭টা থেকে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় মেয়েকে ভর্তি করতে পারেননি।
সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নারায়ণগঞ্জে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অন্য হাসপাতালের খোঁজে যাচ্ছেন রেশমা আক্তার। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

শ্বাসকষ্ট-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রেশমা আক্তারকে মুন্সিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে এনেছিলেন তার বাবা পিয়ার আলী। আজ সকাল ৭টা থেকে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় মেয়েকে ভর্তি করতে পারেননি।

পিয়ার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রেশমা গত আট-দশ দিন ধরে জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টে ভুগছে। গতরাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। মুন্সিগঞ্জে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে সকালে মেয়েকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আসি। বেলা ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও খালি শয্যা পাওয়া যায়নি। মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতেও তারা রাজি হয়নি। শুধু বলেছে বেড খালি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে।'

তিনি বলেন, 'হাসপাতাল থেকে বলেছে ভর্তি হলে চিকিৎসা দেবে। তার আগে ওষুধ দেয়নি। শুধু দুবার অক্সিজেন দিয়েছে। এখন কি মেয়েকে এখানে বসিয়ে রেখে মেরে ফেলব? তাই অন্য হাসপাতাল খুঁজতে যাচ্ছি।'

আজ মঙ্গলবার শহরের খানপুর এলাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালে (৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত) গিয়ে দেখা যায় রেশমার মতো অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে ঢাকায় ছুটছেন।

এই হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন 'টিম খোরশেদ' সংগঠনের সদস্য আনোয়ার হোসেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ মুহূর্তে হাসপাতালের ১২০টি শয্যার একটিও খালি নেই। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা, সিলেট, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ থেকে রোগীরা এখানে আসছেন। সিট খালি না থাকায় সবাইকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন ওয়ার্ড বয় বলেন, 'এখানে চাকরি করেও গতরাতে আমার খালুকে ভর্তি করতে পারিনি। কোন রোগী সরিয়ে খালুকে বেড দেবো? সবাই তো গুরুতর অসুস্থ। বাধ্য হয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করিয়েছি।'

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাসার আজ দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১১০টি সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি নেই। রোগীদের জায়গা না দিতে পেরে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এখন কেউ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়লে তবেই বেড দেওয়া যাবে।'

তিনি বলেন, 'গতকালও রোগী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। গতকাল ৬২ জন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। তার মধ্যে ২৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। পাঁচ জনকে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়। যাদের অবস্থা গুরুতর না তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। এখন কেউ যদি অন্য কোথাও চলে যায় সেটা আমরা বলতে পারছি না।'

তিনি আরও বলেন, 'হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা করে হলেও অনেকে ভর্তি হতে চাইছে। কিন্তু করোনা রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। আর মেঝেতে রেখে অক্সিজেন দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া মেঝেতে পর্যাপ্ত জায়গাও নেই।'

নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ ইমতিয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। জেলায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের মধ্যে মারা গেছেন দুই জন। বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩ হাজার ৫৩ জন।'

তিনি বলেন, 'প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০টি করে শয্যা করোনা রোগীদের জন্য রাখা আছে। সেখানেও অক্সিজেনের সুবিধা রয়েছে।'

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ মুহূর্তে কোভিড হাসপাতালে বেড না থাকায় বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে শয্যা ফাঁকা না থাকলে শহরের একটি ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে করোনা ওয়ার্ড করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Schools to remain shut till April 27 due to heatwave

The government has decided to keep all schools shut from April 21 to 27 due to heatwave sweeping over the country

1h ago