করোনা পরীক্ষার ফল দিতে দেরি, বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

করোনা পরীক্ষার জন্য গত ১০ আগস্ট সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে নমুনা দেন আসমা বেগম (ছদ্মনাম)। কিন্তু, ৫৫ বছর বয়সী এ নারী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পরীক্ষার ফলাফল পাননি।
ছবি: সংগৃহীত

করোনা পরীক্ষার জন্য গত ১০ আগস্ট সিরাজগঞ্জের একটি হাসপাতালে নমুনা দেন আসমা বেগম (ছদ্মনাম)। কিন্তু, ৫৫ বছর বয়সী এ নারী এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পরীক্ষার ফলাফল পাননি।

শুধু আসমা বেগমই নন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারিভাবে করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়া বেশিরভাগ মানুষকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফলাফলের জন্য। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষায় এত দীর্ঘ সময় লাগলে সংক্রমণ সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় না এবং বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করতে পারে।

কোভিডের আরেকটি ঢেউ আসতে পারে উল্লেখ করে তারা বলছেন, পরীক্ষায় দীর্ঘ সময় লাগাটা সিস্টেমের একটি দুর্বলতা। এটা অবশ্যই ঠিক করতে হবে।

এ মাসের শুরুর দিকে সরকারি পিসিআর ল্যাবগুলোতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা ছিল। ফলে সিরাজগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আসমার নমুনাসহ এক হাজার ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করার বিকল্প ল্যাব খুঁজে পেতে ১০ দিন সময় লেগে যায়।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নমুনাগুলো অবশেষে গত ২০ আগস্ট ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে (এনআইএলএমআরসি) পৌঁছেছে।

গত ১২ আগস্ট এনআইএলএমআরসিতে প্রায় ২৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা বাকি ছিল বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এই সেন্টারে সাধারণত দিনে প্রায় তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে দ্য ডেইলি স্টার জানতে পেরেছে, আসমার কোভিড পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। এটি জানানোর জন্য এনআইএলএমআরসি গত ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) কাছে তার ফলাফল পাঠিয়েছে।

কিন্তু, গতকাল শনিবার আসমার ছেলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা তখন পর্যন্ত এমআইএসের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা পাননি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০ আগস্ট সিরাজগঞ্জ থেকে পাঠানো এক হাজার ৪৪টি নমুনার মধ্যে ১৮৬টি পজিটিভ এসেছে।

রাজধানীতেও করোনা পরীক্ষার ফল পেতে মানুষকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহের সোমবার ঢাকার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে মামুন হোসেন নামের একজন করোনা পরীক্ষার নমুনা দেন। দীর্ঘ সময় পরে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে জানায়, তার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ।

মামুন বলেন, 'এ মাসের শুরুর দিকে একটি বেসরকারি ল্যাবে আমার মায়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আমরা ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফল পেয়ে যাই।'

প্রায় এক মাস আগে ঢাকার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ৪৮ ঘন্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফল পাঠিয়ে দিত। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ফলাফল দিতে লাগত প্রায় চার দিন।

তবে, বেশি সংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করা শুরু করায় এবং নতুন শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ফলাফল পেতে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হতে শুরু করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কর্মী সংকটে থাকা পিসিআর ল্যাব ও এমআইএসে নমুনার স্তুপ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

যখনই সংক্রমণ বেড়ে যায়, তখনই ঢাকার বাইরের কম জনবলের ল্যাবগুলো হিমশিম খেতে থাকে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান মাহবুবা জামিল গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর প্রচুর সংখ্যক নমুনা নিয়ে কাজ করেছি।'

তার ওপর ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বেশ কয়েকটি ল্যাব সক্ষমতার চেয়ে কম ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) আরটি-পিসিআর ল্যাবে গত ৩ আগস্ট এক হাজার ৩১৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু, বৃহস্পতিবার পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫০টি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও ভালোভাবে সমন্বয় করলে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার থেকে কোভিড-১৯ হটলাইনে কল করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মচারী বলেন, 'নমুনা সংগ্রহের এক সপ্তাহের আগে কেউ পরীক্ষার ফলাফল পাচ্ছেন না। এমআইএস কর্মীরা এখন বিভিন্ন ল্যাব থেকে গত ১৭ আগস্ট পাওয়া পরীক্ষার ফলাফল এন্ট্রি করছেন।'

একইদিনে এমআইএসের পরিচালক মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সপ্তাহে এনআইএলএমআরসি ও জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি নমুনা পেয়েছে। এ কারণে পরীক্ষার ফলাফল দিতে দেরি হচ্ছে ।'

শিগগির এগুলো দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আসমা বেগমের ছেলে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনও ফলাফল না পেয়ে ভেবে নিয়েছিলাম মায়ের ফলাফল নেগেটিভ।'

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গত শুক্রবার বলেন, 'ভাইরাস বহনকারী প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই ওই নারী (আসমা) যে কাউকে সংক্রমিত করেননি, তা বলা যাচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'পরীক্ষার ফলাফল দিতে দেরি হওয়ার অর্থ, মানুষ তাদের সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না।'

বর্তমানে এনআইএলএমআরসি ল্যাবে প্রায় তিন হাজার নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।

 

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

16h ago