মুক্তিযুদ্ধ

২২ নভেম্বর ১৯৭১: ইয়াহিয়া আন্তরিক হলে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতেন: ইন্দিরা গান্ধী 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২২ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন আহমদাবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যদি সত্যিই প্রতিবেশীসুলভ আচরণ বজায় রাখেন তবে ভারত আন্তরিকভাবে তাকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি সত্যিই ইয়াহিয়া খান এতো আন্তরিক হন তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন বাতিল করে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।' 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২২ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন আহমদাবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যদি সত্যিই প্রতিবেশীসুলভ আচরণ বজায় রাখেন তবে ভারত আন্তরিকভাবে তাকে সমর্থন জানাবে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইয়াহিয়া খানের আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি সত্যিই ইয়াহিয়া খান এতো আন্তরিক হন তবে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন বাতিল করে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।' 

একই সঙ্গে জাতিসংঘে চীন কর্তৃক ভারতের তীব্র সমালোচনা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খারাপ হবে কিনা সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, 'ভারত বিষয়ে চীনের মন্তব্য আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ চীন পাকিস্তানের মিত্র ও বন্ধুপ্রতিম দেশ। তারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেই ভারতের সমালোচনা করেছে। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো, আগামীতে আরও ভালো হবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করি।'

ভারতে এদিন

২২ নভেম্বর ভারত সফররত সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর সম্মানে এক ভোজসভার আয়োজন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই ভোজসভায় সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ বলেন, সিঙ্গাপুর চায় এই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। ভারত সরকারের সামনে জে দায়িত্ব রয়েছে তারা তা শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন করবে বলে সিঙ্গাপুর আশা করে।

দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ 

২২ নভেম্বর যশোরের চৌগাছার বয়রা সীমান্তে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করে। ভারতীয় মিত্রবাহিনী এদিন জগন্নাথপুরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যূহ আক্রমণ করে। আগেরদিনের পর এদিনও পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর চারটি এফ৮৬ স্যাবর জেট নিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করলে ভারতীয় বিমানবাহিনী দমদম বিমানবন্দর থেকে চারটি যুদ্ধবিমান নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর দুটি স্যাবর জেট ভারতীয় ভূখণ্ডে ভূপতিত হয় এবং দুই পাকিস্তানি পাইলট প্যারাসুট নিয়ে নেমে এলে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার চৌধুরীর বিমান ও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি পালিয়ে গিয়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে নিরাপদে ল্যান্ড করেন।

২২ নভেম্বর জামালপুরে সকালবেলায় ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে ব্রাভো কোম্পানী আর্টিলারীর সাহায্য চারগ্রাম হানাদার ঘাঁটি আক্রমণ করে এবং প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ওই ঘাঁটি দখল করে নেয়। এসময় মুক্তিবাহিনীর হামলায় ৩০ জন হানাদার সেনা হতাহত হয় এবং বেশ কয়েকজনকে বন্দী করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার চন্দ্রপুরে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায় ৯ম ইস্ট বেঙ্গলের একটি দল। যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডার শিখ মেজর এবং তিন জন জুনিয়র কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারসহ ৪৫ জন সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অন্যদিকে আহত হন ৩৪ জন সৈন্য।

২২ নভেম্বর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তবলছড়ি ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ২ জন হানাদার সেনা আহত হয়। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে থাকা ১৩ জন রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

২২ নভেম্বর নোয়াখালীর মঈনপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আর্টিলারি ফায়ারে মুক্তিযোদ্ধা তারু মিয়া শহীদ হন।

এদিন সিলেটে অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার ক্যাপ্টেন এজেএম আমিনুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর বড় একটি দল ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় করিমগঞ্জ দখল করে।

২২ নভেম্বর নোয়াখালীর দুর্গাপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুর্গাপুর অবস্থানের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় হানাদার বাহিনীর ৭ সৈন্য নিহত হয় এবং ১০ জন আহত হয়।

২২ নভেম্বর দিনাজপুরের অমরখানায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সুলতান শাহরিয়ার রশীদের নেতৃত্বে তিন কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা পুনরায় অমরখানা আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ভারতীয় আর্টিলারি হানাদার ঘাঁটির উপর প্রচন্ড শেলিং করলে এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনী টিকতে না পেরে পিছু হটে। এসময় অমরখানা দখল করে নেয়। 
২২ নভেম্বর লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার বড়খাতায় হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ সংঘর্ষে হানাদার বাহিনীর আর্টিলারির শেলিংয়ে কোম্পানি কমান্ডার ফজলুর রহমান, হাবিলদার রঙ্গু মিয়া ও ক্যাপ্টেন এম এফ নাসির আহমেদ শহীদ হন।

২২ নভেম্বর সাতক্ষীরায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে শ্যামনগর মুক্ত করে। এর আগে মুক্তিবাহিনী ২০ নভেম্বর কালিগঞ্জ মুক্ত করেছিল। এরপর এদিন মুক্তিবাহিনী কালীগঞ্জ ও শ্যামনগরে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করে।

সূত্র-

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ খণ্ড। 

দৈনিক যুগান্তর ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ 

দৈনিক পাকিস্তান ২৩ ও ২৪ নভেম্বর ১৯৭১ 

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Student politics, Buet and ‘Smart Bangladesh’

General students of Buet have been vehemently opposing the reintroduction of student politics on their campus, the reasons for which are powerful, painful, and obvious.

1h ago