মুক্তিযুদ্ধ

খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা: কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম

মুক্তিযুদ্ধে কাজী নুরুজ্জামান ছিলেন ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে এক সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয়ার পর কর্নেল নুরুজ্জামানকে এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।  মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবে তার ক্রম ৫। যদিও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের, এই যুক্তিতে আজীবন অটল থেকে কাজী নুরুজ্জামান অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কোথাও এই উপাধি তিনি ব্যবহারও করেননি।
কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম। ছবি: সংগৃহীত

(মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়ে বিশেষ আয়োজন 'মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা'। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণত আমরা ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্ব সম্পর্কে জানি। কিছুটা আড়ালে ঢাকা পড়ে যান আমাদের বাকি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা। দ্য ডেইলি স্টার উদ্যোগ নিয়েছে সেই জানা এবং অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়মিত প্রকাশ করার। ক্রমানুসারে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা নিয়েই চলছে ধারাবাহিক এই আয়োজন। পর্যায়ক্রমে বীর বিক্রম, বীর প্রতীক মিলিয়ে সর্বমোট ৬৭২ জন মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা প্রকাশ করবে দ্য ডেইলি স্টার। আমাদের আজকের পঞ্চম পর্বে রইলো কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম'র বীরত্বগাঁথা)

মুক্তিযুদ্ধে কাজী নুরুজ্জামান ছিলেন ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে এক সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয়ার পর কর্নেল নুরুজ্জামানকে এই সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।  মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীর উত্তম খেতাবে তার ক্রম ৫। যদিও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের, এই যুক্তিতে আজীবন অটল থেকে কাজী নুরুজ্জামান অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কোথাও এই উপাধি তিনি ব্যবহারও করেননি।

মুক্তিযুদ্ধে বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ না করার পিছনে অন্যতম একটি ঘটনার বর্ণনা স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। আত্মস্মৃতিতে তিনি লিখেছিলেন, 'হঠাৎ দেখি এক জীর্ণ বৃদ্ধা মাথায় ঝুড়ি চাপিয়ে আমার দিকে আসছে। ছেলেদের খোঁজ নিতে বললাম। বললাম- দেখ তো কী বয়ে নিয়ে এসেছে? মিনিট দুয়েক পর আমি নিজে ওই বুড়ির নিকট চলে এসে তার সরঞ্জাম দেখে বিস্মিত ও ভীত হয়ে পড়ি। চিৎকার করে বললাম- এই ঝুড়িটি যেন তৎক্ষণাৎ বহুদূরে নির্জন জায়গায় সতর্কভাবে রেখে আসা হয়। ঝুড়িতে ছিল প্লাস্টিকের 'অ্যান্টি-পার্সোনাল মাইন।'  বুড়িকে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, সে নির্বংশ ও ভিক্ষা করে খায়। একটি তালগাছের পাশে ঝুপড়ি করে সে থাকে। আমাদের মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা যে পথ দিয়ে দলদলিয়া নামক একটি ছোট্ট গ্রামের পাশ দিয়ে বোয়ালিয়া যাবার চেষ্টা করতো, সেখানে শত্রুপক্ষ কোনো এক রাতে, তার মনে হলো, কিছু যেন পুঁতে রাখছে। সে ভেবেছিল কিছু লোহা, পেরেক, কাঁটা জাতীয় কিছু হবে। তার সন্দেহ জাগে, আমাদের ছেলেদের কিছু বিপদ হতে পারে। তাই সে তার ঝুপড়ি থেকে দেখা স্থানটি দেখতে গিয়ে এ মাইনগুলো কুড়িয়ে পায়। এ কী সৌভাগ্য আমাদের এবং বৃদ্ধারও। সে নিজেও এগুলোর ওপর চাপ দেয়নি। দুর্ঘটনা ছিল অবশ্যম্ভাবী। আমি অত্যন্ত অভিভূত হয়ে পড়ি। এই মলিন বসনের জীর্ণ বৃদ্ধা ঝুপড়িতে থেকে কী করে বুঝলো দেশে যুদ্ধ চলছে। কেমন করে জানলো আমাদের ছেলেরাই মিত্রশক্তি এবং তাদের পক্ষে বিঘ্ন ঘটাবার ছেলেরা শত্রুপক্ষ। আমাদের ছেলেদের প্রতি তার দরদী হওয়ার কারণ কি হতে পারে। তার অন্তরের সমবেদনা থেকে সেই বৃদ্ধা আমাদের ছেলেদের পথের কাঁটা সরাতে চেয়েছিল। আমি মনে মনে তাকে হাজার সালাম জানিয়েছিলাম। ব্রিটেনে কোনো সিভিলিয়ান যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অবদান রাখলে তাকে জর্জ ক্রস দেওয়া হয়ে থাকে। সজ্ঞানে না হলেও এই বৃদ্ধা তার মনে দেশ ও ছেলেদের প্রতি ভালোবাসার জন্য স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিতভাবে কেন এ দায়িত্ব নিয়েছিল, আমার মতো ক্ষুদ্রমনা মানুষ তা বুঝতে পারিনি। এখন হয়তো অনেকেই বুঝবেন কী কারণে। আমি যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য 'বীর উত্তম' পুরস্কার গ্রহণ করতে পারিনি। এই ঝুপড়ির বৃদ্ধার মতো আরও অনেক সিভিলিয়ানের বীরত্বের প্রত্যক্ষদর্শী আমি।   

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ধানমন্ডি ১৩/এ বাসায় ছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। সে রাতে পিলখানায় চালানো পাকিস্তানী বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবলীলা, নারীদের হাহাকার এবং পরদিন সকালে ঢাকাজুড়ে নিজ চোখে দেখা দৃশ্যের পর সপরিবারে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কাজী নুরুজ্জামান।

২৬ মার্চ দুপুরে মধ্যাহ্নভোজনের সময় কাজী নুরুজ্জামানকে তার ২ মেয়ে নায়লা ও লুবনা বলে, কোথাও থেকে যেন ঘোষণা সংক্রান্ত কিছু দেওয়া হচ্ছে। কাজী নুরুজ্জামান খাবার শেষে ঘোষণা শুনলেন। যা ছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ। কাজী নুরুজ্জামান বুঝতে পারলেন দেশজুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।  

প্রথমে তিনি তার পরিবারকে করটিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার কাজী মুহাম্মদ শফিউল্লাহর সঙ্গে দেখা করতে জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল যান। কিন্তু টাঙ্গাইলে পৌঁছার পর তিনি জানতে পারেন, ততোক্ষণে কে এম শফিউল্লাহ ময়মনসিংহে পৌঁছে গেছেন। পরে ময়মনসিংহ পৌঁছে মেজর কে এম শফিউল্লাহর সঙ্গে দেখা করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। এসময় কে এম শফিউল্লাহ ব্যাটালিয়নের দায়িত্ব নিতে কাজী নুরুজ্জামানকে অনুরোধ করেছিলেন। যদিও সেই প্রস্তাব সবিনয়ে নাকচ করে দিয়েছিলেন কাজী নুরুজ্জামান।  

মুক্তিযুদ্ধের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া বাহিনীগুলোর কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সভায় বিদ্রোহী বাহিনীগুলোকে একটি কমান্ড চ্যানেলে এনে সমন্বিতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কাজী নুরুজ্জামান। এই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রথমে কাজী নুরুজ্জামান দায়িত্ব পান মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তরে। এসময় মুক্তিবাহিনীর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তিনি নানা ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের মে মাসে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানকে সভাপতি করে একটি পর্ষদ গঠন করা হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ওয়্যার ব্যাচ বা  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচ ক্যাডেট নির্বাচনের জন্য কমিটিও গঠন করা হয়। তারাই প্রথম ওয়্যার ব্যাচের অফিসারদের নির্বাচন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ২৭ সেপ্টেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ২৮ সেপ্টেম্বর কাজী নুরুজ্জামানকে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৭ নম্বর সেক্টরে মোট ৮টি সাব সেক্টর গড়ে তোলা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিল সমগ্র উত্তরবঙ্গের একাংশ বা দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চল।

মুক্তিযুদ্ধের অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের বিখ্যাত সব যুদ্ধে কখনো নির্দেশনা, কখনো নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। এরমধ্যে ১৪ অক্টোবরের শেখপাড়া সাব-সেক্টরের দুর্গাহরি থানার গলহরির যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে এই যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর ২ অফিসারসহ ৭৩ জন সৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ৬ নভেম্বর কাজী নুরুজ্জামান ভোলাহাট সাব সেক্টরের লেফটেন্যান্ট রফিককে পাকিস্তানী বাহিনীর মকরমপুর আলীনগর ক্যাম্পে আক্রমণের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি নিজেই অপারেশনের নকশা করেন। ৭ নভেম্বর লেফটেন্যান্ট রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর দুর্ধর্ষ আক্রমণ চালায়। এসময় পাকিস্তানী বাহিনীর প্রথমে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও একপর্যায়ে টিকতে না পেরে মহানন্দা নদী পেরিয়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর মাত্র ৫ সৈন্য নিহত হলেও, ভোলাহাট থেকে রহনপুর পর্যন্ত ১০০ মাইল এলাকা মুক্ত হয়ে যায়।

মুক্তিযুদ্ধে বগুড়ায় ডিনামাইট লাগিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীর সৈন্য বহনকারী ট্রেন বিস্ফোরণের ঘটনা এক ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। এটি ছিল পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর চরম এক আঘাত। ১৩ নভেম্বর লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের নির্দেশে বগুড়ার সুখানপুকুর স্টেশনের কাছেই শিহিপুরে ডিনামাইট লাগিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যবাহী একটি স্পেশাল ট্রেন বিধ্বস্ত করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় ট্রেনে থাকা পাকিস্তানী বাহিনীর ১৫০ সৈন্য নিহত হয়।

১৬ নভেম্বর কাজী নুরুজ্জামান ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে নির্দেশ দেন আলমপুর আম্রকাননে পাকিস্তানী বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করার জন্য। এই যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট রফিক এবং লেফটেন্যান্ট কাইউমের নেতৃত্বে দুই কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে আলমপুর দখলে নেয়।  

মুক্তিযুদ্ধের ১৩ এবং ১৪ নভেম্বর কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের নির্দেশেই হামজাপুর সাব-সেক্টরে ঘনেপুর বিওপির যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর ৩০ জন সৈন্য নিহত হয়। 

২৮ নভেম্বর শাহপুর গড়ের যুদ্ধে কাজী নুরুজ্জামান নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শাহপুর গড়ে পাকিস্তানী বাহিনীর এক ব্যাটেলিয়ন সৈন্য ছিল। সারারাতব্যাপী চলা এই যুদ্ধে কাজী নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা শাহপুর গড়ের দখল নিতে না পারলেও পাকিস্তানী বাহিনীর ওপর ব্যাপক আঘাত হানে, যার ফলে বিজয়ের পথ সুগম হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের স্ত্রী ডা. সুলতানা জামান নিজেও অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। ডা. সুলতানা জামান সম্পূর্ণ  নিজ প্রচেষ্টায় ৭ নম্বর সেক্টরের মাহদিপুর সাব-সেক্টরে একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন।

কাজী নুরুজ্জামানের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ পশিচমবঙ্গের নদিয়ার চাটদহ গ্রামে। তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সূচনা হয়েছিল কলকাতায়।  কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময়েই ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৪৬ সালে জহরলাল নেহেরুর আহ্বানে অনেকের মতো তিনিও নৌবাহিনী থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চলে আসেন ১৯৪৭ সালে। এরপর দেরাদুনে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে এসে কাজী নুরুজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডে আর্টিলারি কোর্স সমাপ্ত করে আসার পর পাকিস্তানের নওশেরায় আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৫৬ সালে মেজর পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হলে তাকে ১৯৬২ সালে প্রেষণে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (ইপিআইডিসি) পাঠানো হয়। একই বছর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার কিছুদিন পর তিনি সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

সামরিক জীবনের বাইরে মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব থেকে কাজী নুরুজ্জামান ছিলেন সব গণ-আন্দোলনের প্রথম সারির সৈনিক। ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। ড. আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ চিন্তা সংঘের প্রতিষ্ঠার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। একইসঙ্গে ছিলেন লেখক শিবির ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফ্রন্টের সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে উঠা ৯০-এর গণ-আদালতে কাজী নুরুজ্জামান ছিলেন অন্যতম বিচারক। 

২০১১ সালের ৬ মে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তম।

সূত্র:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ১০ম খণ্ড 

একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা/কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান 

বাংলাপিডিয়া

আহমাদ ইশতিয়াক 

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English
Bank Asia plans to acquire Bank Alfalah

Bank Asia moves a step closer to Bank Alfalah acquisition

A day earlier, Karachi-based Bank Alfalah disclosed the information on the Pakistan Stock exchange.

1h ago