ইতিহাসের বহু বাঁক বদলের সাক্ষী গাফ্‌ফার চৌধুরী

সদ্য প্রয়াত আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বহু বাঁক বদলের সাক্ষী। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী স্বনামধন্য এই সাংবাদিক স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলার’ প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অগ্রগামীদের একজন।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সদ্য প্রয়াত আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের বহু বাঁক বদলের সাক্ষী। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী স্বনামধন্য এই সাংবাদিক স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক 'জয়বাংলা'র প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অগ্রগামীদের একজন।

১৯৭৪ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করলেও মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে গাফ্‌ফার চৌধুরীর কলম সোচ্চার ছিল বরাবর। প্রবাসে থেকেও ঢাকার পত্রিকাগুলোতে তিনি রাজনৈতিক ধারাভাষ্যের পাশাপাশি সমকালীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখে গেছেন। রচনা করেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ।

বিশেষ করে, গত শতকের আশির দশকজুড়ে এরশাদ সরকারের আমলে গাফ্‌ফার চৌধুরীর লেখা কলাম দেশের সব রাজনীতি-সচেতন পাঠকের কাছে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এভাবেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী পরিমণ্ডলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত নাম।

১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। তার বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী একজন ভূস্বামী হয়েও ছিলেন ব্রিটিশশাসিত ভারতের একজন মুক্তিসৈনিক ও অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। তিনি তদানীন্তন কংগ্রেসনেতা মতিলাল নেহেরুর সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন।

১৯৫৮ সালে গাফ্‌ফার চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর সাংবাদিকতায় আসেন। এর আগেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ওপর লেখা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' গানটি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরারোপিত এই গানটি বিবিসি বাংলা বিভাগের দর্শকদের জরিপে বাংলা গানের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা গানের মর্যাদা পেয়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে যাওয়ার পর সেখানে 'নতুন দিন' নামে একটি পত্রিকা বের করেন। বাংলা ও ইংরেজি- দুই ভাষাতেই সচল ছিল তার কলম।

কাজের স্বীকৃতির জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭), একুশে পদক, ইউনেসকো সাহিত্য পুরস্কার ও স্বাধীনতা পদকের (২০০৯) পাশাপাশি জীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে 'সোহেল সামাদ স্মৃতি পুরস্কার' নিতে এসে এখনকার সাংবাদিকতার বাণিজ্যিক রূপ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। স্মরণ করেছিলেন নিজ সময়ের 'আদর্শভিত্তিক' সাংবাদিকতাকে।

কেবল বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের বুকে যতদিন-যতবার ভাষার জন্য বাঙালির রক্তদানের স্মৃতি জড়ানো 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটি গাওয়া হবে, ততদিন মানুষ মনে রাখবে এই প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্বকে।

নিজ সময়ের 'আদর্শভিত্তিক' সাংবাদিকতাকে খুঁজে ফেরা এই ভাষাসৈনিকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

Comments