বাইডেনের আফগান নীতির বিপক্ষে অধিকাংশ আমেরিকান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেভাবে আফগানিস্তান পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন সেটির পক্ষে ৪০ শতাংশেরও কম আমেরিকান সমর্থন জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেভাবে আফগানিস্তান পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন সেটির পক্ষে ৪০ শতাংশেরও কম আমেরিকান সমর্থন জানিয়েছেন।

তিন চতুর্থাংশ আমেরিকান চায়, মার্কিন সব নাগরিককে আফগানিস্তান থেকে বের করে না আনা পর্যন্ত মার্কিন বাহিনী যেন সেখানে মোতায়েন থাকে।

সোমবার প্রকাশিত রয়টার্স/আইপিএসওএস'র করা এক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৭ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পরিচালিত ওই জরিপে দেখা গেছে, বাইডেনের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে ৫১ শতাংশ আমেরিকান অসম্মতি জানিয়েছেন, অন্যদিকে ৩৮ শতাংশ মানুষ এটির পক্ষে মত দিয়েছেন।

২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে দুই দশক পর সোমবার আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত ১৪ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রবাহিনী প্রায় এক লাখ ২২ হাজারেরও বেশি মানুষকে আফগানিস্তান থেকে বের করে এনেছে। যার মধ্যে তাদের নিজস্ব নাগরিক এবং গত ২০ বছর ধরে যেসব আফগানরা তাদের সহযোগিতা করেছেন তারাও আছেন।

তবে, কিছু সংখ্যক মার্কিন নাগরিক ও কয়েক হাজার আফগান, যারা বিদেশি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে এসেছেন, তারা এখনও আফগানিস্তানে আটকে আছেন। দেশটি এখন তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে। যারা আফগানিস্তানে রয়ে গেছেন তাদের সরিয়ে নিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাবে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়ার ঠিক আগে পরিচালিত ওই জরিপে ৪৯ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তানে থাকা উচিত 'যতক্ষণ পর্যন্ত সব আমেরিকান নাগরিক ও আফগান মিত্রদের সরিয়ে না নেওয়া হচ্ছে', অন্যদিকে ২৫ শতাংশ বলেছেন 'মার্কিন সব নাগরিক বের না হওয়া পর্যন্ত মার্কিন বাহিনীর সেখানে থাকা প্রয়োজন।' এ ছাড়া, ১৩ শতাংশ বলেছেন, মার্কিন সেনাদের 'অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া উচিত'।

বাইডেন প্রশাসন আফগান মিত্রদের পুনর্বাসন যে প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করেছে, তা গ্রহণযোগ্য ছিল কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে ৪৫ শতাংশ এর পক্ষে ও ৪২ শতাংশ বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

জরিপ অনুযায়ী ২০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক দাবি করেছেন যে, আফগানিস্তান যুদ্ধের 'বর্তমান অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী' জো বাইডেন। ১০ শতাংশ অবশ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে দায়ী করেন, যিনি দুই দশক আগে আফগানিস্তানে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নয় শতাংশ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন, যিনি গত বছর মার্কিন বাহিনীর দ্রুত প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। বাকি ৩০ শতাংশ তালেবান, আফগান সামরিক বাহিনী, মার্কিন সামরিক বাহিনীর নেতা ও জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসআইএস-সহ এই অঞ্চলের অন্যান্য ব্যক্তি ও সংগঠনকে দায়ী করেছেন। আইএসআইএস গত সপ্তাহে কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে। সেদিনের হামলায় ১৩ মার্কিন সেনা সদস্য নিহত হন।

এদিকে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য কোনো দলের পরিকল্পনা ভালো জিজ্ঞাসা করা হলে, ২৯ শতাংশ রিপাবলিকানদের পক্ষে বলেছেন, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের কথা বলেছেন ২৬ শতাংশ।

২০২০ সালের সেনা প্রত্যাহার চুক্তির আওতায় ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছিলেন। আফগানিস্তানে যুদ্ধের চূড়ান্ত সময়ে এক লাখেরও বেশি মার্কিন সেনা থাকলেও জানুয়ারিতে বাইডেন যখন দায়িত্বে আসেন তখন আফগানিস্তানে মাত্র সাড়ে তিন হাজার মার্কিন সেনা অবশিষ্ট ছিল।

ট্রাম্পের মতো বাইডেনও এই যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রশাসন মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আফগান সামরিক শক্তির সক্ষমতার হিসাবে ভুল করেছে। এ কারণেই সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমার কয়েক সপ্তাহ আগেই তালেবান দেশের বড় অংশের দখল নেয়। আফগানিস্তানে ২০ বছরের এই সংঘর্ষে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা এবং আনুমানিক দুই লাখ ৪০ হাজার আফগান নাগরিককে জীবন দিতে হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

3h ago