যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাঙ্ক অদৃশ্য করার দাবি
সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, চারিদিকে যুদ্ধের দামামা। ব্রিটিশ জাদুকর জ্যাসপার মাসকেলিন ফন্দি আঁটলেন জাদু দিয়ে নাৎসি বাহিনীকে বোকা বানাবেন! অবিশ্বাস্য হলেও জাদুকর তিনি যুদ্ধের ট্যাঙ্ক-সেনাবহর অদৃশ্য করে দেন বলে দাবি তার।
জাদু এবং বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশে জন্ম নেওয়া জ্যাসপারের জাদুর প্রতি ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকে। লন্ডনে কার্ড খেলায় হাত সাফাই করে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন জ্যাসপার। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব পড়ে জ্যাসপারের জাদু প্রদর্শনীতে, কমে যায় টিকিট বিক্রি। ফলে তিনি যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রযুক্তি সহায়ক শাখা-রয়্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স কর্পসে। সেখান থেকেই তিনি তার হাত সাফাইয়ের কারিশমা দেখানো আরম্ভ করেন।
জ্যাসপার ভেবেছিলেন হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার জাদুবিদ্যা কাজে লাগাবেন। সে অনুযায়ী তিনি সেনাবাহিনীর কাছে প্রস্তাব দেন। বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকার পর তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। তার সঙ্গে অংশ নেন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থপতি এবং কাঠমিস্ত্রিদের নিয়ে গঠিত ক্যামোফ্লেজ এক্সপেরিমেন্টাল ইউনিট। যাদের দায়িত্ব ছিল জার্মানদের চোখে ধুলো দিয়ে যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করা।
যুদ্ধ চলাকালীন জ্যাসপার তার ২টি কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন। যার প্রথমটি হলো পিচবোর্ড এবং কাদা ব্যবহার করে নকল আলেকজান্দ্রিয়া হার্বার সৃষ্টি করা। যার ফলে যুদ্ধবিমানের বোমা নিক্ষেপে নষ্ট করা যায়নি আসলটি। অপরটি হলো আকাশে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সুয়েজ খালকে দৃষ্টির আড়াল করা। যদিও এটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এ ছাড়া ফিল্ড মার্শাল মন্টেগোমারিকে এল-আলআমিন শহর পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। সেখানে প্লাইউড এবং ক্যানভাস ব্যবহার করে ট্যাঙ্ককে ট্রাক এবং ট্রাককে ট্যাঙ্কে রূপ দিয়ে দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি করেছিলেন।
এমনকি তিনি জার্মান বাহিনীকে ধোঁকা দিতে মরুভূমিতে মেকি শব্দ এবং রেডিও ট্রান্সমিশন দিয়ে ভুল জায়গায় নকল ট্রাকের চিহ্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। শোনা যায়, যুদ্ধ বিমানকে দ্বিধায় ফেলতে স্ফীত ট্যাঙ্কও আবিষ্কার করেছিলেন জ্যাসপার।
যেখানে কোনো লড়াইয়ে গোয়েন্দা ইউনিটের সব তথ্য, অভিযান গোপন রাখা অত্যাবশ্যকীয়- সেখানে আদৌ এসব হয়েছে কি না নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। তবে আপনি জাদুতে বিশ্বাস করেন বা না করেন, মন্টেগোমারি কিন্তু যুদ্ধে জয়ের হাসি হেসেছেন।
রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট থেকে অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া।
Comments