ফিনল্যান্ড কেন ন্যাটোতে যেতে চায়, যোগদান প্রক্রিয়া কতটা সহজ

বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড। জোটভুক্ত বাকী ৩০টি দেশ সমর্থন দিলে শিগগির ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে পারে ফিনল্যান্ড। তবে বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ বিষয়ে তার আপত্তির কথা জানিয়েছেন।
ওফিউল হাসনাত রুহিন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড। জোটভুক্ত বাকী ৩০টি দেশ সমর্থন দিলে শিগগির ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে পারে ফিনল্যান্ড। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এ বিষয়ে তার আপত্তির কথা জানিয়েছেন।

জোটভুক্ত কোনো একটি দেশ বিরোধিতা করলে কেউ ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না।

ফিনল্যান্ড কি কারো প্ররোচনায় ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়? দেশটির জনগণেরই বা ভাবনা কী তা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ফিনল্যান্ডের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি ফিনল্যান্ড পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ওফিউল হাসনাত রুহিনের সঙ্গে। তিনি একজন বাংলাদেশি এবং ২০০৭ সাল থেকে ফিনল্যান্ডে স্থায়ীভাবে থাকছেন।

ওফিউল হাসনাত রুহিন বলেন, 'ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের আলোচনা প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে। আগে দেশটির আগে দেশটির ৩৭-৪০ শতাংশ ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে ছিলেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর এক জরিপে ৫৬ শতাংশ মানুষ ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে মত দেন। পরে এই হার বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়। সবশেষ জরিপে ৭৬ শতাংশ মানুষ ন্যাটোতো যোগদানের পক্ষে মত দিয়েছেন।'

ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগদান করতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মূল কারণ হলো রাশিয়া ভীতি। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১১টি অঞ্চলে সীমানা রয়েছে। ইউক্রেনের আক্রমণের পর রাশিয়া ভীতি আরও বেড়ে গেছে। তাছাড়া ইউক্রেনে হামলার বিষয়টি এখানকার জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। তারা সরাসরি এর বিরোধিতা করেছেন।'

ন্যাটোতে যোগ দিলে ফিনল্যান্ডের কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফিনল্যান্ড মূলত একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচিত। নিরপেক্ষ জায়গা হিসেবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হয়েছিল ফিনল্যান্ডে। এর আগে ২ বার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এই ফিনল্যান্ডেই সাক্ষাৎ করেছিলেন। ফিনল্যান্ডের এই যে নিরপেক্ষতার সুনাম তা আর থাকবে না।'

তিনি বলেন, 'বিদ্যুতের জন্য ফিনল্যান্ডে রাশিয়ার ওপর তেমন একটা নির্ভরশীল নয়। মাত্র ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। তবে, গ্যাসের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। কারণ গ্যাসের বড় একটা অংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। এখানে তাপমাত্রার কারণে প্রায় সারাবছর ঘরে হিটার জ্বালাতে হয়। তবে, শীতকালে ফিনল্যান্ডে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। সেসময়টাতে সংকট আরও বেশি হয়। তবে ফিনল্যান্ড গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এস্তোনিয়ার সঙ্গে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।'

ন্যাটোতে যোগদানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো চাপ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্ররোচনা রয়েছে। আবেদনের পর ন্যাটোতে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় ৮ মাস সময় লাগবে। কিন্তু ফিনল্যান্ডকে বলা হয়েছে আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তাছাড়া বলা হয়েছে সবকাজ শেষ হওয়ার আগেই কোনো সমস্যা হলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ফিনল্যান্ডের পাশে থাকবে।'

ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানে প্রক্রিয়া তেমন একটা সহজ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তুরস্ক ইতোমধ্যে বলেই দিয়েছে তারা সমর্থন দেবে না। কারণ তুরস্ক রাশিয়ার ভালো বন্ধু। তাছাড়া ক্রোয়েশিয়াও বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছে। চূড়ান্তভাবে কী হয় তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।'

Comments