পুতিনের চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন জনগণের মন জয় করতে বলেছিলেন, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’, তেমন বাণীই শোনা যাচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনে মুখেও! তিনি বলছেন, ‘মেক রাশিয়া গ্রেট অ্যাগেইন’।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন জনগণের মন জয় করতে বলেছিলেন, 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন', তেমন বাণীই শোনা যাচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনে মুখেও! তিনি বলছেন, 'মেক রাশিয়া গ্রেট অ্যাগেইন'।

শুধু হারানো ভূখণ্ডই নয়, হারানো জৌলুসও ফিরে পেতে চান রাশিয়ায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা পুতিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ৩০ বছর পূর্তিতে গত বছর ঘুরেফিরে নিজ দেশের জনগণের কাছে এমনই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ব্লকের পতনের পর আমেরিকার একক আধিপত্যে চলে যায় পুরো বিশ্ব। প্রায় ৩০ বছর পর মার্কিন বলয়কে আবার জোরালো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রুশ প্রেসিডেন্টের এমন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় তার সাম্প্রতিক কথায়, কাজে ও আচরণেও। অতি সম্প্রতি তিনি হস্তক্ষেপ করেছেন কাজাখস্তানের সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলনে। প্রায় ৭ বছর ধরে চলছে ইউক্রেনের রুশবিরোধী সরকারের সঙ্গে 'দা-কুমড়া' সম্পর্ক।

২০০০ সালে ক্ষমতায় এসে পুতিন সমমনা সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটসের (সিআইএস) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেন। সেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিল রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশ। রাশিয়া ও বেলারুশের মধ্যে জাতিগত ও সাংস্কৃতিক মিল থাকায় তাদের সম্পর্ক এখনো অটুট আছে।

কিন্তু, ২০১৪ সালে গণআন্দোলনে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের পতন হলে দেশটির ওপর আক্রমণাত্মক হয় রাশিয়া। সে বছরই ইউক্রেনের ক্রিমিয়ায় অভিযান চালিয়ে তা নিজ দেশের অংশ করে নেয় পুতিন সরকার। পাশাপাশি, ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষী অঞ্চলে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তা দেওয়া হয়।

২০১৯ সালে ইউক্রেন সংবিধান পরিবর্তন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পথ পরিষ্কার করে নেয়। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ব সীমান্ত বা রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তবর্তী ইউক্রেন হয়ে ওঠে রুশ-মার্কিন সংঘাতের ক্ষেত্রভূমি।

গতকাল রোববার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্য অভিযোগ করে বলেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকার বসানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া। ব্রিটেনের অভিযোগ, এ কাজে ইউক্রেনের সাবেক এমপি ইয়েভহেন মুরায়েভকে সম্ভাব্য প্রার্থী করছে ক্রেমলিন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রুস এক বার্তায় বলেছেন, 'যে তথ্য আমাদের হাতে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে- রাশিয়া ইউক্রেনকে ধ্বংস করতে চায়।' তিনি রাশিয়াকে সংঘাতের পথ থেকে সরে কূটনীতির পথ অনুসরণের আহ্বানও জানান।

'পুতিনের ভুল হিসাব-নিকাশ'

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের 'পুতিনের ভুল হিসাব-নিকাশ' শিরোনামের প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়, 'ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে ইউরোপকে কি নতুন যুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন?'

এতে আরও বলা হয়, এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন- বিবদমান পক্ষগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। তাদের নেতিবাচক বার্তায় 'যুদ্ধের দামামা দিনে দিনে প্রকট হওয়ার' ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গত শনিবার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ অভিযান ঠেকাতে সেখানে মার্কিন সামরিক সহায়তা পাঠানো হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তার প্রথম চালানটি এসেছে।

দূতাবাসের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, 'রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।'

সামরিক সহায়তার পাশাপাশি ইউক্রেন সরকারকে আশ্বস্ত করতে চলতি সপ্তাহে কিয়েভ সফরে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

ইংরেজি নববর্ষের ভাষণে ফিনল্যাণ্ডের প্রেসিডেন্ট সাওলি নিনিস্তো মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর নতুন সদস্য নেওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন। এরপর, রাশিয়া তার সীমান্তবর্তী উত্তর ইউরোপের দেশটির বিরুদ্ধে 'চরম সামরিক ও রাজনৈতিক পরিণতি'র হুমকি দেয়।

শুধু ফিনল্যান্ডই নয় ইতোমধ্যে রাশিয়ার হুমকি পেয়েছে ন্যাটোভুক্ত বাল্টিক অঞ্চলে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোও।

মার্কিন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনী যেভাবে বিতাড়িত হয়েছে ইউক্রেনে সেরকম কিছু ঘটতে পারে।

'ইউক্রেনের প্রতিটি ঘর দুর্গ'

মার্কিন জেনারেল মার্ক মিলির মতো একই সুরে কথা বলেছেন ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেনকো। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের প্রতিটি ঘর একেকটি দুর্গ হয়ে উঠবে।' রুশ সেনারা ইউক্রেনে ঢুকলে 'হাজার হাজার মরদেহ' রাশিয়ায় পাঠানো হবে বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম এনবিসি'কে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ও সিনেটর মিট রমনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে পুতিনের 'নতুন সোভিয়েত' গড়ার চেষ্টা প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, 'পুতিন এমন একটি বিষয়কে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছেন যা অতীতে ছিল। কিন্তু, তা হতে দেওয়া হবে না।'

ক্রিশিয়ান সায়েন্স মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জোসেফ স্ট্যালিনের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক সম্মেলনে 'পুতিন আসলে কী চাচ্ছেন?' প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, 'মনে হয়, রাশিয়া আমাদের পরীক্ষা করতে চাচ্ছে।'

সিরিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিতে বোঝা যাচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষা নিচ্ছে না সবচেয়ে শক্তিধর এই দেশটির একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Small businesses, daily earners scorched by heatwave

After parking his motorcycle and removing his helmet, a young biker opened a red umbrella and stood on the footpath.

24m ago