রুশ বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে মারিউপোলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে

প্রায় ৩ মাস রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে অবশেষে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোল।
রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের পর মারিউপোল থেকে বাসে করে ইউক্রেনীয় সেনাদের রুশ নিয়ন্ত্রিত শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । ছবি: এপি

প্রায় ৩ মাস রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে অবশেষে পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোল।

আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এপি'র প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও নিবন্ধিত ভাড়াটে সেনারা যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরটির 'শেষ যুদ্ধক্ষেত্র' হিসেবে বিবেচিত আজভস্টল ইস্পাত কারখানা ছেড়ে বের হয়ে গেছেন।

মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ নিলে এটাই হবে রুশ বাহিনীর দখলে থাকা সবচেয়ে বড় ইউক্রেনীয় শহর। এটি একইসঙ্গে তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবেও বিবেচিত হবে। তবে, ইতোমধ্যে শহরটির বেশিরভাগ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

২ পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে গত সোমবার ২৬০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আজভস্টল কারখানার ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হয়ে আসেন এবং রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

যোদ্ধাদের অনেকেই গুরুতর আহত ছিলেন এবং তাদেরকে স্ট্রেচারে করে বের করে আনতে দেখা গেছে।

বাসে আহত ইউক্রেনীয় সেনাদের বহনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ছবি: রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

গতকাল আরও ৭টি অতিরিক্ত বাসে করে অজ্ঞাত সংখ্যক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে কারখানা থেকে বের করে মারিউপোল থেকে ৮৮ কিমি দূরে ওলেনিভকা শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। শহরটি এ মুহূর্তে রুশদের দখলে আছে এবং এটি দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত।

রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, একটি রুশ তদন্ত কমিটি আটক সেনাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে, যাদের অনেকেই আজভ ব্যাটেলিয়নের সদস্য।

রাশিয়া ইউক্রেনের সেনাদের ক্ষেত্রে 'আত্মসমর্পণ' শব্দটি ব্যবহার করলেও ইউক্রেনীয়রা এ শব্দটি এড়িয়ে গেছে। তাদের দাবি, ইস্পাত কারখানায় মোতায়েন সেনারা সাফল্যের সঙ্গে তাদের অভিযান শেষ করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রুশ বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা। এখন তাদেরকে নতুন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ বলেন, 'সেনাদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে বলা হয়েছে। তাদেরকে ইউক্রেনের প্রয়োজন। এটাই মূল বিষয়।'

ইউক্রেনীয়রা আশা করেছিলেন, রুশদের সঙ্গে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে আটক সেনারা মুক্তি পাবেন। তবে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন গণমাধ্যমকে জানান, কোনো প্রমাণ ছাড়াই বলা যায়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে 'যুদ্ধ অপরাধী' রয়েছে এবং তাদেরকে বিনিময় করা হবে না, বরং তাদের বিচার হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'দেশের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইস্পাত কারখানা থেকে বাকি সেনাদের বের করে আনার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মকর্তারা এখনও জানাননি কতজন সেখানে এখনও আটক আছেন।'

'সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা এর সঙ্গে যুক্ত আছেন,' যোগ করেন জেলেনস্কি।

ইস্পাত কারখানা ছেড়ে বের হয়ে আসার নির্দেশের মাধ্যমে মারিউপোলে প্রায় ৩ মাসব্যাপী সংঘর্ষ শেষ হতে চলেছে।

ইউক্রেনের দাবি, রুশদের বোমা হামলায় মারিউপোলে প্রায় ২০ হাজার বেসরকারি মানুষ মারা গেছেন। শহরটির ৪ লাখ ৩০ হাজার বাসিন্দাদের এক চতুর্থাংশ খুবই স্বল্প পরিমাণ খাবার, পানি, অপর্যাপ্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও ওষুধের অভাবে ভুগছেন বলেও দাবি করেছে কিয়েভ।

৮০ দিনের যুদ্ধে মারিউপোল যেন এক ধ্বংসস্তুপ। ছবি: রয়টার্স
৮০ দিনের যুদ্ধে মারিউপোল যেন এক ধ্বংসস্তুপ। ছবি: রয়টার্স

মারিউপোলের পূর্ণ দখল নেওয়ার পর রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে সেতুর মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া।

একইসঙ্গে ইউক্রেনীয়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হারাবে। মারিউপোলের যুদ্ধের অবসান হলে রুশ যোদ্ধারা দনবাস অঞ্চলের অন্যান্য জায়গায় বাড়তি সেনা মোতায়েন করতে পারবে।

বিশ্লেষকদের মতে, মারিউপোলের বিজয় রুশদের মনোবলকে চাঙ্গা করতে পারে। কারণ, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ও রাজনৈতিক দিক দিয়েও বেশ নাজুক অবস্থায় আছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কারখানা ছেড়ে যাওয়া সেনাদের প্রথমে তল্লাশি নেন রুশ বাহিনীর সদস্যরা। তারপর তাদেরকে পাহারা দিয়ে রুশ বাহিনীর বিভিন্ন যানবাহনে মস্কোর সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা ২টি শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। উভয় পক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে, আহত সেনাদের মধ্যে ৫০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 

Comments