ভূমি ছাড় দিয়ে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব আবারও নাকচ জেলেনস্কির
পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ অবসানে ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া বা অন্যান্য ছাড়ের প্রস্তাব আবারও উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
গতকাল বুধবার তিনি এ ধরনের ভাবনাকে ১৯৩৮ সালে নাৎসিদের তুষ্ট করার প্রচেষ্টার সঙ্গে তুলনা করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, জেলেনস্কি ও তার এক জ্যেষ্ঠ সহযোগী রাগান্বিত হয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ড গত ১৯ মে জানায়, আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে কিয়েভকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, আপাতদৃষ্টিতে সামরিক বিজয়ের সম্ভাবনাকে বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে না।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার চলতি সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে সুপারিশ করেন, ইউক্রেনের উচিৎ হবে ক্রিমিয়ায় রুশ দখল বজায় রাখতে দেওয়া।
২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণের এই উপদ্বীপটি দখল করে নেয়।
এক ভিডিওতে স্পষ্টতই রাগান্বিত দেখা যায় জেলেনস্কিকে। তিনি বলেন, 'রাশিয়া যাই করুক না কেন, আপনি সবসময় এমন কাউকে খুঁজে পাবেন, যিনি বলবেন, আসুন আমরা তাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দিই।'
'আপনার ধারণা মি. কিসিঞ্জারের কাছে ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার নেই। বরং তিনি ১৯৩৮ সালের ক্যালেন্ডার অনুসরণ করছেন এবং ভাবছেন, তিনি দাভোসে নয়, বরং সে আমলের মিউনিখের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কথা বলছেন,' যোগ করেন জেলেনস্কি।
১৯৩৮ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানি মিউনিখে এক চুক্তি সই করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, হিটলারকে আগ্রাসন বন্ধ করার বিপরীতে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার কিছু অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তবে সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল।
জেলেনস্কি আরও বলেন, 'সম্ভবত নিউইয়র্ক টাইমস এ ধরনের কিছু ১৯৩৮ সালেও লিখেছিল। তবে আমি তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এখন ২০২২ সাল।'
তার মতে, 'যারা বলছেন ইউক্রেনের উচিৎ রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া, সেসব 'মহান ভূরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা' কখনোই সাধারণ মানুষ, সেই লাখো সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিকদের দেখেননি। এই নাগরিকরা সেসব অঞ্চলের বাসিন্দা। তাদের ভূখণ্ডের বিনিময়ে এক কাল্পনিক শান্তির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।'
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিতে এবং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইতালি ও হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেছে। তবে জোটের অন্য সদস্যরা এখনও মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার পক্ষপাতী।
এর আগে, জেলেনস্কির উপদেষ্টা অলেকসি আরেস্তোভিচ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, নিশ্চিতভাবে, কয়েকটি ইউরোপীয় রাষ্ট্র চায় ইউক্রেন যেন পুতিনকে ছাড় দেয়।
অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'কেউ আমাদের ১ গ্রাম সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে ১ মিলিমিটার ভূখণ্ড পাবে না। আমাদের সন্তানরা মারা যাচ্ছে। সেনারা বোমার আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তারা আমাদের ভূখণ্ড উপসর্গ করতে বলছেন। দূর হয়ে যান। এ রকম কোনো কিছু কখনোই হবে না।'
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে ইতালির প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, 'আপনি এক হাতে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে অন্য হাতে পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে আসতে পারেন না।'
'ইউক্রেনের জন্য ইতালির শান্তি পরিকল্পনা কল্পনাপ্রসূত', যোগ করেন মারিয়া।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি দি মাইয়ো গত সপ্তাহে এ পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য অংশবিশেষ প্রকাশ করেন। ক্রেমলিন গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা তা দেখেনি। কিন্তু, আশা করছে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে তা তাদের কাছে এসে পৌঁছাবে।
জাখারোভা এ প্রস্তাব সম্পর্কে আরও বলেন, 'তারা যদি আশা করে থাকে রুশ প্রজাতন্ত্র পশ্চিমের কোনো পরিকল্পনার কথা শুনেই (তা বাস্তবায়নের জন্য) ঝাঁপিয়ে পড়বে, তাহলে তারা এখনো খুব বেশি কিছু বুঝে ওঠতে পারেনি।'
Comments