‘সুরক্ষা’ অ্যাপ: পর্দার আড়ালের নায়ক যারা

ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য তৈরি অ্যাপ ‘সুরক্ষা’ আমাদের দেশি তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সক্ষমতার একটি ছোট নিদর্শন। ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সহজ এই অ্যাপ এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে।

ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য তৈরি অ্যাপ 'সুরক্ষা' আমাদের দেশি তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সক্ষমতার একটি ছোট নিদর্শন। ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সহজ এই অ্যাপ এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে।

৫ জন স্থানীয় প্রকৌশলীর হাতে তৈরি এই অ্যাপটি একই সঙ্গে ৫ কোটি মানুষ ব্যবহার করতে পারেন। এটি দেশের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এই ৫ পর্দার আড়ালে থাকা নায়কদের কঠোর পরিশ্রমে জনগণের করের অনেক টাকা বেঁচে গেছে। কারণ সরকার গত জানুয়ারিতে ভ্যাকসিন রোলআউট ব্যবস্থাপনা সমাধানের অংশ হিসেবে নিবন্ধন প্ল্যাটফর্মকেও আউটসোর্স করার পরিকল্পনা করছিল।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে একটি সিস্টেম খুঁজছিলাম। সেই সময় আইসিটি বিভাগের ৫ কর্মকর্তা তাদের প্রস্তাব পেশ করেন।'

স্বল্পতম সময়ে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন আইসিটি বিভাগের ৫ প্রকৌশলী আ স ম হোসনি মোবারক, মো. হারুন অর রশিদ, মো. আবদুল্লাহ বিন সালাম, আবদুল্লাহ আল রহমান এবং মো. গোলাম মাহবুব।

বিভিন্ন জেলায় প্রোগ্রামার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তারা প্রথমে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য নগদ অর্থ হিসেবে প্রণোদনা বিতরণের ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় ত্রাণ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির প্রস্তাব দেন। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবটি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল।

পরবর্তীতে সরকার জাতীয় পর্যায়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং তাদেরকে সেন্ট্রাল এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ক্যামস) বাস্তবায়ন করার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে।

ক্যামস প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ লাখ পরিবার গত বছর আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে।

এ প্রকল্প সাফল্য পাওয়ায় দলটির আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তারা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করে।

এ বছরের শুরুতে তারা সরকারের কাছে এই সিস্টেম প্রদর্শন করেন। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এর নিরীক্ষণ করে এবং কিছু বাড়তি সুপারিশ দিয়ে সব কাজ শেষ করার জন্য ৩ সপ্তাহ সময় দেয়।

অবশেষে গত ২৫ জানুয়ারি এই অ্যাপ জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

৫ প্রোগ্রামারের একজন আ স ম হোসনি মোবারক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। প্রকল্পের কোনো দলনেতা ছিল না। আমরা আনন্দিত যে মানুষ তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই এর সুফল ভোগ করছে।'

সিস্টেমটি তৈরি করার সময় তাদেরকে কিছু ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে জানান প্রোগ্রামাররা।

হারুন অর রশিদ বলেন, '১২ কোটি মানুষকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা এবং এই সুবিশাল জনগোষ্ঠীর সব ধরণের ডেটার ব্যবস্থাপনা করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। এ ক্ষেত্রে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল এনআইডি ডেটাবেজের মাধ্যমে আবেদনকারীর পরিচয় যাচাই করা।'

তিনি জানান, এই বিশাল পরিমাণ তথ্য সার্ভারে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করার কাজটিও বেশ ঝামেলার ছিল। কারণ, সরকার নিরাপত্তা ও মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখে আমাজন ওয়েব বা গুগল ক্লাউডের মতো অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তথ্য সংরক্ষণ করে না।

তিনি বলেন, 'এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে আমরা জাতীয় ডেটা সার্ভার ব্যবহার করি।'

তিনি জানান, সেসময় তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সময় স্বল্পতা ও সীমিত সম্পদ।

হারুন অর রশিদ বলেন, 'আমাদেরকে অ্যাপ তৈরি করার জন্য মাত্র ৩ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ন্যুনতম ইনপুট দিয়ে সর্বোচ্চ আউটপুট নিয়ে আসার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমরা আনন্দিত যে দৈনিক ৬ কোটি হিটের নতুন রেকর্ড গড়ার পরেও অ্যাপ কোনো সমস্যা ছাড়াই চলছে।'

জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে থাকলে একজন আবেদনকারী সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক মিনিটেই ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। আবেদনকারী একটি এসএমএস বার্তা পান এবং তার আবেদনপত্রটি সংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন কেন্দ্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ভ্যাকসিন নিবন্ধন কার্ড সহজেই ডাউনলোড করা যায়। প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে তার ভ্যাকসিন স্ট্যাটাস হালনাগাদ হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় ডোজের তারিখও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে ভ্যাকসিন সনদ ডাউনলোড করা যায়। সনদে একটি কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড দেওয়া থাকে, যাতে বিশ্বের যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়কাল সম্পর্কে তথ্য যাচাই করতে পারে।

আবদুল্লাহ বিন সালাম বলেন, 'সেবা বিঘ্নিত করার জন্য বেশ কয়েকবার সাইবার আক্রমণ এসেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আক্রমণকারীরা কিছুই করতে পারেনি।'

প্রোগ্রামাররা জানান, গত ৯ মাস ধরে তারা নিজেরাই ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। কারণ এই সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো অতিরিক্ত জনবল নেই।

তারা জানান, তরুণ প্রোগ্রামারদের মধ্যে উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সরকার চাইলে তাদেরকে এ ধরণের কাজ দিয়ে মেধা পাচার এড়াতে পারে।

এনএম জিয়াউল আলম বলেন, 'তরুণ প্রোগ্রামাররা অসাধারণ কাজ করেছেন এবং তারা এটি করেছেন তাদের দৈনন্দিন কাজের গণ্ডি ছাড়িয়ে। এটি অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। আমরা তাদেরকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Anontex Loans: Trouble deepens for Janata as BB digs up scams

Bangladesh Bank has ordered Janata Bank to cancel the Tk 3,359 crore interest waiver facility the lender had allowed to AnonTex Group, after an audit found forgeries and scams involving the loans.

3h ago