সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব গৃহীত

‘জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো রোহিঙ্গা প্রস্তাব, যা এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।’
UN logo
ছবি: সংগৃহীত

'জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলো রোহিঙ্গা প্রস্তাব, যা এই সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।'

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল বুধবার জাতিসংঘে 'মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি' শিরোনামের প্রস্তাব গ্রহণ করার সময় দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

প্রস্তাবটি যৌথভাবে উত্থাপন করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, মানবিক সহায়তা দেওয়া এবং করোনাভাইরাসের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, প্রস্তাবটিতে এর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

প্রস্তাবটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এ জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট এর মতো বিষয়গুলোর প্রতি। রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সকল মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে এবারের প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরুপন প্রক্রিয়ার ওপর প্রস্তাবটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথাও বলা হয়েছে।

প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।

এতে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে তার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথাও বলা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে মিয়ানমার, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি নবায়ন ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।'

প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা তীব্র হচ্ছে যা এ অঞ্চলে নানা ধরণের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, 'আশা করা যায় এবারের প্রস্তাবটি নিজ ভূমি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে যা দীর্ঘস্থায়ী এই সমস্যার টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'

এবারের প্রস্তাবে ১০৭টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, যা ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইইউ, ওআইসি ছাড়াও প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ সমর্থন দিয়েছে এবং সহপৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এবারের রোহিঙ্গা প্রস্তাবের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, 'একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের প্রস্তাব গৃহীত হলো, যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে। যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

7h ago