শিগগির সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন তৈরির অঙ্গীকার আইনমন্ত্রীর
শিগগিরই দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। আজ শনিবার বিকেলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
'চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়' শীর্ষক এ ওয়েবিনারে বক্তারা শিগগির সাক্ষী সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের বিষয়ে সরকারের প্রতি নতুন করে আহ্বান জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী বলেন, 'আজকের সভায় বক্তারা যে দাবি জানিয়েছেন, সেই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন খুব শিগগিরই তৈরি করার অঙ্গীকার করছি।'
ওয়েবিনারে নির্মূল কমিটির সভাপতি ও লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, 'এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে জঘন্য হামলা চালিয়েছে, তার নিন্দা জানাবার ভাষা আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ ধরনের হামলা সংঘটিত করছে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র বানাবার জন্য।'
তিনি বলেন, 'সংঘবদ্ধ সামাজিক সন্ত্রাসের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আমরা গত ১০ বছর ধরে সাক্ষী সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কথা বলছি। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের দাবির কারণে আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।'
'সনাতন ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিচার ও শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি যে সব ওয়াজী সন্ত্রাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জঘন্য হিংসাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া না হলে বাংলাদেশে কখনও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও হামলা বন্ধ করা যাবে না।'
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি সেই ওয়াজী গ্রুপ কুমিল্লায় মূর্তির উপর কোরআন রেখে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এর ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। আমরা এমনও কিছু খবর পেয়েছি যারা সাম্প্রদায়িক হামলার নেপথ্যে ছিল তাদের রক্ষার জন্য কোনও কোনও ডিসি ও এসপি কলকাঠি নেড়েছিল এবং সহিংসতা যথাসময়ে বন্ধ করার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।'
'ওয়াজীরা শুধুমাত্র সরকার উৎখাতের লক্ষেই এহেন বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। আর এদের মদদ দিচ্ছে পাকিস্তান,' যোগ করেন তিনি।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, 'আমরা দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে আইসিটি আইনটি প্রণয়ন করেছি। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন খুব শিগগিরই তৈরি করতে যাচ্ছি। আশা করি এ আইন হলে সাক্ষীরা নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে পারবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, মৌলবাদীরা শেখ হাসিনার হাতকে দুর্বল করতে দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে। সুতরাং, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'
এতে অংশ নিয়ে আরও বক্তব্য দেন দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মানবাধিকার নেত্রী ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্মল রোজারিও, নির্মূল কমিটির সর্বইউরোপীয় শাখার সভাপতি তরুণকান্তি চৌধুরী, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবি হক প্রমুখ।
Comments