মহামারির প্রভাব

রৌমারীর তুরা স্থলবন্দরে কর্মহীন চার হাজার পাথর শ্রমিক

করোনা মহামারির কারণে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার তুরা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে গত চার মাস ধরে। বন্ধ রয়েছে সেখানকার শতাধিক পাথর ভাঙার মেশিন। ফলে চার হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন কর্মহীন।
কুড়িগ্রামের রৌমারীর তুরা স্থলবন্দরে পাথর ভাঙা শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

করোনা মহামারির কারণে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার তুরা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে গত চার মাস ধরে। বন্ধ রয়েছে সেখানকার শতাধিক পাথর ভাঙার মেশিন। ফলে চার হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছেন কর্মহীন।

কাজ নেই তাই আয়ও নেই। কর্মহীন শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।

শ্রমিক জিয়ারুল ইসলাম (৪৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলাম গত কয়েক বছর ধরে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। ছয়জনের পরিবার নিয়ে মোটামুটি ভালোই কাটছিল। গত চার মাস ধরে কোনো রোজগার নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন বন্দরে আসি কাজের আশায় কিন্তু কাজ নেই, মেশিন বন্ধ। জমানো কিছু টাকা ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয় একজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছি।

শ্রমিক জামিউল হক (৩৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা আমাদের কর্মহীন করেছে। পাথর আমদানি বন্ধ তাই পাথর ভাঙার মেশিনগুলোও বন্ধ। হাতে অন্য কোনো কাজও নেই। কাজের খোঁজে বন্দরে আসি আর ফিরে যাই। সংসার চালাতে পারছি না। অসহায় হয়ে পড়েছি।'

শ্রমিক আবদার মিয়া (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথর লোড-আনলোড করে সংসার চালাতাম। এখন কর্মহীন। সংসার চালাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছি।'

পাথর ভাঙা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুর কালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তুরা স্থলবন্দরে চার হাজারে বেশি শ্রমিক পাথর ভাঙা ও পাথর লোড-আানলোডের কাজ করেন। সেখানে শতাধিক পাথর ভাঙার মেশিন রয়েছে। প্রত্যেক মেশিনে ২৫ থেকে ৩০ জন কাজ করে থাকেন। এটাই ছিল আমাদের একমাত্র কর্ম। গত চার মাস ধরে আমরা কর্মহীন।'

'কর্মহীন শ্রমিকরা কোনো সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না' বলেও তিনি জানান।

তুরা স্থলবন্দরে পাথর আমদানিকারক রাশেদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই স্থলবন্দরে শুধু ভারতের আসাম থেকে পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে। করোনা মহামারির কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা গত চার মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ রাখায় পাথর আমদানি করতে পারছি না। আমাদের পাথর ভাঙার মেশিনগুলো বন্ধ রয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরাও অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছি।'

'ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি না করলে আমরাও পাথর আমদানি করতে পারছি না। তাদের বুঝিয়ে পাথর আমদানি শুরু করার চেষ্টা করছি,' যোগ করেন তিনি।

পাথর আমদানিকারক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সালু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় পাথর ভাঙা মেশিনগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে গেছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।'

সরকারের দেওয়া ত্রাণ সহায়তা এ সব শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Chattogram shoe factory fire under control

A fire that broke out at a shoe accessories manufacturing factory on Bayezid Bostami Road in Chattogram city this afternoon was brought under control after two hours.

2h ago