রামেকে ঈদের ছুটিতে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসকের অভাবে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) চিকিৎসকের অভাবে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার পরিবার।

মারা যাওয়া আকবর আলীর পরিবারের অভিযোগ, ঈদের দিনের আগের রাতে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয় আকবর আলীকে। তবে, তখন সেখানে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, বুধবার সকাল ১১টার আগে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। কিন্তু, ১১টা বাজার চার ঘণ্টা আগে সকাল সাতটায় ৭০ বছর বয়সী আকবর আলীর মৃত্যু হয়।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর জামিরা গ্রামের অধিবাসী আকবর আলীর ছেলে মাইনুল ইসলাম এসব অভিযোগ করেছেন।

আকবর আলীর ছেলে মাইনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আমার বাবাকে কোনো চিকিৎসা দিতে পারলাম না। তার বয়স হয়েছিল। নানান রোগে ভুগছিলেন। হয়ত তার মৃত্যু অবধারিত ছিল। তাই বলে, হাসপাতালে তাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করার মতো কেউ থাকবে না!’

মাইনুল ইসলাম জানান, তার বাবা স্ট্রোক করেছিলেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকে ভুগছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে জ্বরে ভুগেছেন। মঙ্গলবার রাতে যখন বারবার অচেতন হয়ে যাচ্ছিলেন এবং নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছিলেন, তখন তাকে রাজশাহী ডায়াবেটিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৯০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাত বারোটা পার হয়ে যায়, ততক্ষণে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮৩ শতাংশে নেমে যায়।

আকবর আলীকে হাসপাতালের যে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিল না। একজন নার্স ছিলেন। তিনি হাসপাতালের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে আকবর আলীকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেন। এতে আকবর আলীর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।

‘আমার মনে হলো ওই নার্স একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। তারপর তিনি আমার বাবাকে একটি স্যালাইন দিলেন। তিনি আমাকে জানালেন সকাল এগারোটার আগে কোন চিকিৎসক আসবেন না। কিন্তু, বুধবার আমার বাবার অবস্থা হঠাৎ অবনতি হতে থাকে। সকাল সাতটায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন,’ বলেন মাইনুল।

ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আকবর আলীর মতো অনেক রোগীর পরিচারকরা অভিযোগ করেছেন, তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাননি।

রাজশাহীর মির্জাপুর এলাকায় সেলিম রেজা জানানা, তার ফুপা জাহাঙ্গীর আলমকে ১৯ জুলাই সকালে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসক তাকে আইসিইউতে নেওয়ার সুপারিশ করেন। তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৭০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। কিন্তু, দু’দিন ধরে চেষ্টা করে কোনো আইসিইউ বেড ফাঁকা পাওয়া যায়নি। তাকে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দেওয়া হয়েছিল তাতে কাজ হয়নি। পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

‘একটি আইসিইউ বেডের জন্য কতজনের দরজায় না গেলাম। কিন্তু, কোনো লাভ হয়নি। অবশ্য আমার মতো অনেকেই একটি আইসিইউ বেডের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন। সেসব রোগীদের অনেকের অবস্থা আমার ফুপার চেয়েও খারাপ ছিল,’ বলেন সেলিম রেজা।

চিকিৎসকের অভাবে আকবর আলীর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে রামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়। হাসপাতালে রোগী এলে অবশ্যই চিকিৎসক থাকতে হবে। এটাই নিয়ম। এর বিপরীত করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আকবর আলী কেন চিকিৎসক পাননি তা খোঁজ নেব।’

তবে, রামেকের পরিচালক হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংকটের কথা স্বীকার করেছেন।

‘বেশিরভাগ রোগী শেষ মুহূর্তে আসছেন। তখন চিকিৎসকদের কিছু করার থাকছে না। এমন রোগী আসছেন যাদের জ্বর হয়েছিল, আবার সেরেও গিয়েছিল। করোনা পরীক্ষাও করেননি। কিন্তু, তিন বা চার সপ্তাহের মাথায় হঠাৎ তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে গেলে হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। তখন তাদেরকে উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন দিয়েও লাভ হচ্ছে না,’ বলেন পরিচালক।

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সাধারণ স্টাফরা ছুটিতে আছেন। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত দুইজন করে নার্স বেশি দেওয়া হয়েছে।’

শামীম ইয়াজদানি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বেশিরভাগ করোনা রোগীর পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আবারও বাড়ানো হয়েছে। এখন করোনা ইউনিটের ১৪ টি ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ৫১৩। জুলাই মাসে মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।’

বুধবার এই প্রতিবেদক অন্তত সাতজন রোগীদের পরিচারকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যাদের তিন জন বলেছেন, ঈদের আগের রাতে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি। বাকি তিন জন বলেছেন, ঈদের দিন সকাল থেকে রোগীদের আলাদা যত্ন নেওয়া হয়েছে।

সবুজ নামের একজন বলেন, তার করোনা আক্রান্ত ছোটবোন সাথী (২৫) চিকিৎসাধীন। গত ১৮ জুলাই থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

সবুজ বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে ডাক্তার নার্স রোগীদের ভালোভাবে দেখাশোনা করেছেন। সময় মতো ওষুধ সরবরাহ করেছেন, খাবার সরবরাহ করেছের। অনেক ডাক্তার এসে রাউন্ডে রোগীদের দেখে গেছেন।’

বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের করোনা এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে জুলাই মাসের ২১ তারিখ সকাল পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬৭ জন। গত জুন মাসের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৫৪ জন।

Comments

The Daily Star  | English

Faridpur bus-pickup collision: The law violations that led to 13 deaths

Thirteen people died in Faridpur this morning in a head-on collision that would not have happened if operators of the vehicles involved had followed existing laws and rules

35m ago