‘বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এমন বক্তব্য সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'পদ্মাসেতু থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফেলে দেওয়া কখনোই স্বাভাবিক ব্যাপার হতে পারে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এমন অরাজনৈতিক ও অশালীন বক্তব্যে আমি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাকে নিয়ে এমন বক্তব্য সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।'
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'পদ্মাসেতু থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ফেলে দেওয়া কখনোই স্বাভাবিক ব্যাপার হতে পারে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এমন অরাজনৈতিক ও অশালীন বক্তব্যে আমি বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। বেগম খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। তাকে নিয়ে এমন বক্তব্য সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।'

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি বিস্মিত হয়েছি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি যেভাবেই ক্ষমতায় আসুক না কেন এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না।'

তিনি বলেন, 'এ রকম অরাজনৈতিক, অশালীন বক্তব্য কেউ কখনো আশা করতে পারে না। কিন্তু উনার (শেখ হাসিনা) স্বভাবই এটা। উনি এভাবেই কথা বলেন এবং এভাবেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় কথা বলেন আক্রমণ করেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।'

'তাকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় এ ধরণের উক্তি করলে আইনের যদি কোনো বিষয় থাকে, তা আমরা খতিয়ে দেখবো,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের দুর্ভাগ্য যে এ ধরনের একটি নেতৃত্ব জাতি আজকে সহ্য করছে। তিনি ইদানিং যে সব কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছেন, এটা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, স্বাধীনতা সবকিছুর বাহিরে, ভদ্রতার বাহিরে কথাবার্তা বলছেন। এই কথাটা বলার অর্থই হচ্ছে তিনি একটি হুমকি দেওয়ার মতো। এটা কল্পনাও করা যায় না।'

তিনি বলেন, 'ড. ইউনূস সম্পর্কেও শেখ হাসিনা যেটা বলেছেন এটা পুরোপুরিভাবে আমি মনে করি যে সব রকমের রাজনৈতিক শিষ্টাচার, শালীনতা, ভদ্রতা, সবকিছুর বাইরে তিনি (শেখ হাসিনা) এ ধরনের কথা বলেছেন।'

'এসব কথা বলার অর্থই হচ্ছে একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি, এটা বলা যায় জীবনের ওপর একটা হুমকি। এটা কল্পনাও করা যায়না, এটা আমরা যারা সুস্থ চিন্তাভাবনা করি, সাধারণ মানুষরা সুস্থভাবে এটা চিন্তা করতে পারে না,' বলেন তিনি।

বিদেশিদের সঙ্গে বিএনপি যোগাযোগ করে ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা উনারা সবসময়ই বলে থাকেন, কারণ তারা তো নির্বাচন লুট করে নিয়ে যান। গত দুটো নির্বাচন তারা চুরি করে, ডাকাতি করে নিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে ভোট দিতে দেননি, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনও ঘটতে দেননি। এটা তারা করেনি এবং তারা উল্টো বিরোধীদলের উপর দোষ চাপান।'

বিদেশিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যোগাযোগ করে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'তারা আমেরিকায় গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন আপনারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার ব্যাপারে সাহায্য ও সহযোগিতা করুন। এটা পরিষ্কার সব জায়গাতেই এটা এসেছে। আমরা বিদেশিদের সঙ্গে এ ধরনের যোগাযোগ করার চিন্তাও করিনি, কখনো করিও না। আওয়ামী লীগই বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।'

ফখরুল বলেন, 'আমরা মনে আছে ওয়ান ইলেভেনে সামরিক সমর্থন নিয়ে যে একটা সরকার ক্ষমতায় এসেছিল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের একটা বেআইনি সরকার। এর পেছনেও আওয়ামী লীগ ছিল। তার প্রমাণ হচ্ছে সেদিন তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন তিনি অখুশি নন। এছাড়াও শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারকে তিনি সব ধরনের বৈধতা দেবেন। আর এগুলোর রেকর্ড আছে এবং তাদের সব কাজকে শেখ হাসিনা বৈধতা দেবেন এবং করেছেনও তাই, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তিনি নেননি। পুরোপুরি ভাবে এটা অসাংবিধানিক ব্যাপার ছিল।'

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি না। নির্বাচন কীভাবে হবে আমরা এখন সেই চিন্তা করছি। অর্থাৎ আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আমরা বলেছি এই আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, একটা নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে জনগণের ভোট দেওয়ার অবস্থা তৈরি করতে হবে, যেন জনগণ ভোট দিতে পারে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।'

এসব দাবি সরকার যদি না মানে তাহলে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, 'সরকারকে আমাদের দাবি মানাতে বাধ্য করাবো, কারণ এটা তো জনগণের দাবি।'

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা কি ভুল ছিল, বিএনপি এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিএনপি কখনো ভাবে না গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ভুল ছিল। নির্বাচনে যাওয়ায় ভুল ছিল না, নির্বাচন বয়কট করাটাও ভুল ছিল না। দুটোই সঠিক ছিল। এজন্যই তখন নির্বাচন বয়কট করেছিলাম। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে আর পরবর্তীতে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছি এটা প্রমাণ করতে যে আওয়ামী লীগের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না এবং এটাই প্রমাণিত হয়েছে।'

আলেমদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে গণকমিশন গঠন করা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা আরেকটা চক্রান্ত বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে এটা আরেকটা চক্রান্ত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে চিহ্নিত মানুষগুলো দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য এবং বাংলাদেশের মানুষের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্ম সম্পর্কে তাদের যে ধারণা ও অনুভূতি আছে সেগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে এতদিন পরে এসব অভিযোগ নিয়ে আসার অর্থই হচ্ছে দেশে একটা ধর্মকে কেন্দ্র করে তারা (আওয়ামী লীগ) একটা সমস্যা তৈরি করবে।'

বিএনপি সবসময় সরকারের পদত্যাগ দাবি করে, কিন্তু বর্তমান সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যরা কবে পদত্যাগ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, 'যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করবেন।'

'ক্ষমা চেয়ে পদ্মাসেতুতে বিএনপি যেন ওঠে' তথ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, 'পদ্মাসেতু কারও বাবার টাকায় তৈরি করা নয়। পদ্মাসেতু বাংলাদেশের মানুষের টাকায় তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পুরোপুরিভাবে তাদের ট্যাক্সের টাকা ও বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়ে পদ্মা সেতু করা হয়েছে। সেই টাকাও আওয়ামী লীগ লুট করেছে, ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকায় ব্যয় বেড়েছে।'

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল জব্বার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাহাদত হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments