আ. লীগ লবিস্ট নিয়োগ করেছে, কেঁচো খুঁড়লে সাপ বেরোবে: মোশাররফ

বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
mosharrof.jpg
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আওয়ামী লীগ লবিস্ট নিয়োগ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কেঁচো খুঁড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেড়িয়ে আসবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ অর্থাৎ ১ মিলিয়ন ডলার। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো, সব তথ্য আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, বিএনপি বিভিন্ন নামে ১২টির বেশি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু কে, কার সঙ্গে, কত টাকার চুক্তি করেছে সে সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেননি। অর্থাৎ স্বভাবজাত ফাঁকা আওয়াজ করেছেন। হাজার হাজার গায়েবি মামলা দায়েরের মতো সরকারের এই ২ মন্ত্রী গায়েবি তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে কল্পিত লবিস্ট ফার্মের সংখ্যা এবং ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ফেঁসে গেছেন এবং জনগণের করুণার পাত্র হয়েছেন।

মোশাররফ বলেন, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন বিএনপি নেতারা তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না, প্রকাশ্যে। তারা দেশের জনগণের ওপর সরকারি নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেপ্তার করে সীমাহীন নির্যাতন ও খুন, মৌলিক মানবাধিকার হরণ, সভা-সমাবেশ ও বাক স্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনসহ সব রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে দুর্বল, ভঙ্গুর ও অকার্যকর করার মাধ্যমে বস্তুত দেশকে ৭৫'র মতো একদলীয় স্বৈরশাসনে ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পিত প্রয়াসকে প্রতিহত করে দেশের মালিক জনগণ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অব্যহতভাবে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাদের এসব কার্যক্রমের খবর দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয় এবং দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রগুলোও তারা তাদের বক্তব্য ও অভিমত প্রকাশ্যেই অবহিত করেন।
 পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যেসব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মধ্যে বিলি করেছেন তাতে কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতারা প্রকাশ্যে বলেননি, মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এসব বক্তব্যের কোনোটাই জনগণ কিংবা দেশের স্বার্থ বিরোধী তো নয়ই বরং জনগণ ও দেশের পক্ষে বিএনপির নৈতিক অবস্থান ও দায়িত্বের প্রকাশ। অন্যদিকে এসব বক্তব্য জনগণের কাঁধে অন্যায়ভাবে চেপে বসা সরকারের বিরুদ্ধে হতে পারে এবং সেটাই অনিবার্য, স্বাভাবিক ও অব্যহত রাখার যোগ্য—বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন একটি 'জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান'কে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের পক্ষে সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো-কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসাবে সজীব ওয়াজেদ মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ কি প্রবাসে আওয়ামী লীগ নেতা? দেশবাসী তো তাকে জানে সরকার ও সরকারি দল প্রধানের বহু মূল্য একজন উপদেষ্টা হিসেবে। বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২ দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফি'তে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান 'ফ্রিডল্যান্ডার'কে।

এ ব্যাপারে কেঁচো খুঁড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেড়িয়ে আসবে। এসব চুক্তি সম্পর্কে মন্ত্রীদ্বয় যদি না জেনে থাকেন তাহলে সরকার ও সরকার দলীয় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞ ও গুরুত্বহীন এসব মন্ত্রীর বিজ্ঞের মতো কথা বলা বন্ধ করা উচিত। আর যদি জানেন, তাহলে তথ্য গোপন করার অভিযোগে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রর্থনা করা উচিত, বলেন মোশাররফ।

তিনি আরও বলেন, দেশবাসী সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, বিদেশে প্রথম লবিস্ট নিয়োগকারী সজীব ওয়াজেদের এবং আওয়ামী লীগ ও সরকারের গোপনে স্বাক্ষরিত লবিস্ট নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর তদন্তও এসব সংস্থাই করবে কি না? জনগণের অর্থ ব্যয় করে সরকার ও সরকারি দল লবিস্ট নিয়োগের নামে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে এবং তার উৎস কি তার স্বচ্ছ তদন্ত করে তার রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

7h ago