‘বাকশাল করেও শেষ রক্ষা হয়নি, নির্বাচন কমিশন আইন করেও হবে না’
বাকশাল করেও শেষ রক্ষা হয়নি, নির্বাচন কমিশন আইন করেও হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'বাকশাল: গণতন্ত্র হত্যার কলো দিবস' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, আমার স্থির বিশ্বাস, নতুন প্রজন্ম বাকশাল সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। আওয়ামী লীগ সারাক্ষণ মিথ্যা কথা বলে। সত্যি বলা ওদের অভিধানে নেই। মিথ্যা বলতে গিয়ে সত্য ঘটনাগুলোকে অবলীলায় তারা চাপা দিয়ে দেয়। বাকশাল গঠিত হয়েছিল সংসদে মাত্র ১১ মিনিটে। আমি এই মুহূর্তে খবর পেলাম নির্বাচন কমিশন আইন পাস হচ্ছে। ১৭ তারিখে মন্ত্রিসভায় পাস করা হয়েছে আইনটা। ২৩ তারিখে পার্লামেন্টে দেওয়া হয়েছে। ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল সংসদীয় কমিটিকে, যাচাই-বাছাই শেষে হাউসে উপস্থাপন করার জন্য। ২৪ ঘণ্টাও যায়নি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা হাউসে নিয়ে এসে পাস করে ফেললো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সেদিন বাকশাল করেছিল নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টায়। আজও তারা নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করল, তারা ভাবছে বেঁচে যাবে এই আইনটা করে। সেই আশায় করল। তারা ভুলে গেলেন বাকশাল করেও শেষ রক্ষা হয়নি, নির্বাচন কমিশন আইন করেও তাদের শেষ রক্ষা হবে না। এ ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই আইন পাস করার কোনো এখতিয়ার এই সংসদের নেই। কারণ এই সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ নয়। সুতরাং এই আইন শুধু আমাদের কাছে নয়, পুরো দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর যে আইন মানুষ গ্রহণ করে না সেটা কোনো আইনই নয়।
ফখরুল বলেন, আমরা কিছু মানুষ আছি যারা প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লোক দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের যে চরিত্র এটা আমরা ভুলে যাই কেন! আওয়ামী লীগ কোনো দিন সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতো না। আমরা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, আমরা বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমরা তখন পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উন্নয়নের জন্য কথা বলছিলাম। তখন এই আওয়ামী লীগ পুরোপুরিভাবে আজ যারা তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র, তাদের পক্ষের লোক ছিল।
তিনি আরও বলেন, মার্কিনদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললে তারা চড়াও হতো। সমাজতন্ত্র বলে কোনো শব্দ তারা চিনতো না। লক্ষ্যই তো ছিল একটা নতুন রাষ্ট্র গঠন করার পরে আজকে যেমন করছে ঠিক তেমনই তারা লুটপাট করবে। মানুষের সম্পদ লুটে নেবে এবং নব্য বুর্জোয়াতে পরিণত হবে। সেটা তারা করতে শুরু করেছিল। তাতে প্রধান যে বাধা হয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা একটি বড় অংশ প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিলেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আজ খুব বড় বড় কথা বলেন ইনু সাহেব। একবারও কি নিজের অতীত মনে পড়ে না? আপনারা বেরিয়ে এসেছিলেন শুধু না, সশস্ত্র সংগ্রম শুরু করেছিলেন আর্মস নিয়ে। সেদিন শেখ মুজিবকে সরানোর জন্য আপনারা সব কিছু করতে চেয়েছিলেন। কারণ সেই সময় আপনারা যেটা চেয়েছিলেন, জনগণ যা চেয়েছিল, সত্যিকারের শোষণহীন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা করা, সেখান থেকে আওয়ামী লীগ অনেক দূরে সরে যাচ্ছিল। শেখ মুজিব নিজেই বলেছেন, লোকে পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রেগে গেলেন। তিনি বললেন, আওয়ামী লীগের নামটাই পরিবর্তন করে ফেলা উচিত। এটার নাম দেওয়া উচিত নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি। সেই আওয়ামী লীগ যে ভালো হতে পারে, চরিত্র পাল্টাতে পারে, সেই আওয়ামী লীগ যে তাদের লেজটা সোজা করতে পারবে সেটা মনে করার কারণ নেই। যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে বর্গিতে পরিণত হয়েছে। এরা এ দেশের মানুষ নয়, লুটপাটকারী। এরা যখনই সুযোগ পায় এরা লুট করে নিয়ে চলে যায়।
Comments