ধ্বংসস্তূপ থেকে দিগ্বিজয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছেন একটিমাত্র স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এবং তা হলো ‘সোনার বাংলা’ নামে একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও বৈষম্যবিহীন দেশ-সমাজ গঠনে। অগণিত বাঁধা-বিপত্তি জয় করে তিনি জাতিকে সেই প্রতিশ্রুত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে পরিচালিত করেছেন। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছেন একটিমাত্র স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এবং তা হলো 'সোনার বাংলা' নামে একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও বৈষম্যবিহীন দেশ-সমাজ গঠনে। অগণিত বাঁধা-বিপত্তি জয় করে তিনি জাতিকে সেই প্রতিশ্রুত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে পরিচালিত করেছেন। 

কিন্তু দেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তাকে এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সোনার বাংলার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্কেচ: অসীম

এই মর্মান্তিক ঘটনার সময় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টগুলোকে নিজের বুকে চেপে রাখেন এবং সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্নকে আবারও জাগিয়ে তোলার দায়িত্বটি নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সে পথে কাজ করতে থাকেন।

সেসময় থেকে এগিয়ে এসে বর্তমানের দিকে দৃষ্টি রাখলে আমরা দেখতে পাই, তিনি দক্ষ হাতে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ভাষায় 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও নারী ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলোতে উন্নয়নের দিক দিয়ে সারাবিশ্বে 'রোল মডেল' হিসেবে বিবেচিত।

বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতার মুখেও তিনি ছিলেন সদা অটল, যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন খাতে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সব কীর্তির মধ্যে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই সম্ভবত সবচেয়ে উজ্জ্বল। 

২১ শতকে বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জকে স্বীকার করে নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে 'রূপকল্প ২০২১ (ভিশন ২০২১ নামেও পরিচিত)' নামে উন্নয়নের রোডম্যাপ সংযুক্ত করেন। ভিশন-২০২১ এর বেশ কিছু অঙ্গীকারের সফল বাস্তবায়নের পর তিনি ২০১৪ সালে 'ভিশন ২০৪১' প্রস্তাব করেন, যেটি বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণে সহায়তা করবে।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। তিনি দেশের সব প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে এই পদ ধারণ করছেন।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় তার জন্ম।

তিনি শৈশব কাটিয়েছেন টুঙ্গীপাড়ায় এবং সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের শুরু। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তারা সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন।

কলেজে পড়ার সময় শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং তিনি ১৯৬৬ সালে ২ বছর মেয়াদে ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজের (বর্তমানে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে) ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।

একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনেও অংশ নেন, যার মাধ্যমে আইয়ুব খানের শাসনামলের অবসান ঘটে।

১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ১৫ আগস্টের রক্ত ঝরানো তাণ্ডব থেকে বেঁচে যান। তারা তখন তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।

দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকার পর তিনি ১৯৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফেরেন।

তারপর থেকে তাকে হত্যা করার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, যারমধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে। সেদিন আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গ্রেনেড হামলা করা হলেও দৈবক্রমে প্রাণে বেঁচে যান প্রধানমন্ত্রী।

১৯৮১ সালে ভারতে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। 

সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন। বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বেশ কয়েকজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী কার্যকর হয়। এ ছাড়াও, তার নেতৃত্বে বিতর্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করা হয়।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সন্দেহাতীতভাবে শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের পথে দক্ষ হাতে পরিচালিত করছেন।

তবে অন্য যেকোনো নেতার মতো, তিনিও কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে বিতর্কের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ আছে, তার মেয়াদে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও আইনের শাসন নিয়ে জনগণের মনে ভরসা কমে গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা কমে যাওয়া, গণমাধ্যমের সীমাবদ্ধতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং একটি কার্যকর সংসদের অভাবের অভিযোগও এসেছে।

আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাত্র ২ বছর আগে টানা ৩ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত শেখ হাসিনার সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা।

শুধু একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারবে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মেলবন্ধন নিশ্চিত করতে।

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Small businesses, daily earners scorched by heatwave

After parking his motorcycle and removing his helmet, a young biker opened a red umbrella and stood on the footpath.

24m ago