দেখেন শুরু হয়েছে পতন: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখেন ১ হাজারটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। দেখেন শুরু হয়েছে পতন। এই ১ হাজারটার মধ্যে অর্ধেকের বেশিতে হেরে গেছে আওয়ামী লীগ।’
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আজকের পত্রিকায় দেখেন ১ হাজারটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। দেখেন শুরু হয়েছে পতন। এই ১ হাজারটার মধ্যে অর্ধেকের বেশিতে হেরে গেছে আওয়ামী লীগ।'

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, 'আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়। বিশেষ করে আমার তরুণ ছাত্র-যুব ভাইদের কাছে অনুরোধ জানায়, তরুণ এবং যুবকদের ছাড়া এই দেশে কোন পরিবর্তন হয়নি। তরুণ এবং যুবকদের জেগে উঠতে হবে। তাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। ভেঙে ফেলতে হবে এই শৃঙ্খল। ভেঙে ফেলতে হবে কারাগার। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য, দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমাদের আজ এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আগামী দুএক দিনের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব। সেই কর্মসূচিতে আপনারা সবাই অংশগ্রহণ করবেন এবং আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে বাধ্য করব দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে এবং তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরপক্ষে নির্বাচন দেওয়ার।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে এই দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে মানুষ, তিনি তার জীবনের শুরু থেকেই- চট্টগ্রাম কালুরঘাট কেন্দ্রে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই দিন থেকে এই মহিয়সী মহিলা তার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ শুরু করেছেন। দুই শিশু সন্তানের হাত ধরে তিনি গোপনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন জাহাজে করে। তার কিছু দিন পরেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে এবং ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানি কারাগারে ছিলেন। সেই দিন থেকে তার জীবন শুরু হয়েছে।'

'১৯৮১ সালে যেদিন শহিদ জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের শত্রুরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই দিন আবার তিনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার, স্বতন্ত্রের ও গণতন্ত্রের যে পতাকা সেই পতাকা তিনি তুলে ধরেছিলেন।'

তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এর পরে প্রতিটি পদে পদে তিনি লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এখনো তিনি সংগ্রাম করে চলেছেন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে।'

'আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একদিনের জন্যেও অবসর নেননি। এক দিনের জন্য তিনি বিশ্রাম নেননি।'

ফখরুল বলেন, 'আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, যে চিকিৎসক খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, তিনি নিজে অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। তার কারণ, নেত্রী কমাত্র মানুষ, রাজনৈতিক নেত্রী তিনি কখনো স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করেননি। যিনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি, তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এই দেশের মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সেই কারণে তারা চিন্তিত ছিলেন গতকাল রাতে। আল্লাহর রহমতে আমাদের দেশের চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্ররিশ্রমের ফলে গত দুই দিনের সংকট তারা পার করেছেন। গতকাল রাতেও কিছু সংকট তারা পার করেছেন।' 

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ফখরুল বলেন, 'আজ সকালে ডাক্তার জাহিদকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমাকে জানালেন আজকে তার (খালেতা জিয়া) অবস্থা অনেকটা ভালো। এই ভালো ভালো নয়। তার কারণ তারা পরিষ্কার করে বলেছেন, তার যে অসুক তার চিকিৎসা এখন আর এখানে নেই। তার চিকিৎসা করাতে হলে অবশ্যই বিদেশের উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে করাতে হবে। যেখানে তার কিচিৎসা করানো সম্ভব।' 

'কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কী জাতি আমরা। এমন একটা সরকার পেয়েছি, জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। একজন মন্ত্রী তিনি বলেছেন, ডাক্তার সাহেবদের নাকি বিএনপি যা বলতে বলেছেন তারা তাই বলেছেন। ধিক্কার জানাই আমি সেই মন্ত্রীকে। যে লোক বাংলাদেলের নামি-দামি, শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকদের বিদ্রুপ করে কথা বলেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের সামনে বলছেন আমরা বেগম জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছে। কাদের সামনে বলেছেন কূটনীতিকদের সামনে। বিভিন্ন দেশের রাষ্টদূতদের কাছে। কারণ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন দেশের থেকে ইতোমধ্যে সরকারেরও ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।' 

'তার প্রমাণ আপনারা দেখেছেন, গণতন্ত্রের যে সম্মেলন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। বাংলাদেশ এখন আর গণতান্ত্রিক দেশ নেই। এই শেখ হাসিনার অধিনে, এই সরকারের অধিনে তাদের নির্যাতনে নিপীড়নের কারণে, স্বৈরাচারের কারণে এই দেশ পুরোপুরি একটি কর্তৃত্ববাদী, একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।' 

তিনি বলেন, 'প্রত্যেকটি মানুষ। বাংলাদেশের এমন কোনো মানুষ নেই যে চায় না, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে চিকিৎসা হোক। আজকে মায়েরা রোজা রাখছেন। আমার গ্রামের নদীর ধারের গায়ের বঁধূ তিনি রোজা রাখছেন যে আল্লাহ বেগম জিয়াকে হায়াত বাড়িয়ে দাও। কোটি কোটি মানুষের এই যে আহাজারি, এই যে ফরিয়াদ আল্লার কাছে নিশ্চয় পৌঁছাচ্ছে। আল্লাহতালা নিশ্চয় বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করবেন, আবার আমাদের মাঝে ফিরেয়ে দেবেন।' 

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, 'আপনার কি করেছেন, আপনার মিথ্যা কথা কেন বলেন জনগণের সামনে। জনগণের সামনে প্রতারণা করেন। আপনারা বলেন খালেদা জিয়াকে আইনের কারণে, আইনের বেড়াজালে আমরা তাকে বাইরে যেতে দিতে পারছি না। কেন মিথ্যা কথা বলেন?' 

'এখানে অনেক আইনজীবী আছেন তারা বলেছেন পরিষ্কার করে, ওই ৪০১ ধারায় প্রত্যেকটি ধারার মধ্যে বলা আছে একমাত্র সরকার এবং সরকারই পারে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে। সুতরাং এখন দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা সরকারের। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার কোনো ক্ষতি হয় তাহলে এই দেশের মানুষ কোনদিনই আপনাদেরকে রেহায় দেবে না।' 

'দায় সব আপনাদের। আজকে ছাত্ররা বাসভাড়া কমানোর জন্য এবং তাদের শিক্ষার্থীদেরকে বাস চাপা দিয়ে মারার জন্য আন্দোলন করেছে। তিন-চার দিন আন্দোলন করেছে, সব মেনে নিয়েছে। আবার দেখেন কী রকম বৈষম্য করে তারা। ঢাকার শহরে হাফ পাস দেবে, বাইরে দেবে না।' 

 

     

 

Comments