‘খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে, জনগণ আ. লীগ সরকারকে রেহাই দেবে না’
খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে জনগণ আওয়ামী লীগ সরকারকে রেহাই দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল এই হুঁশিয়ারি দেন।
এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আপনারা বলেন আইনের কারণে দেশনেত্রীকে বাইরে যেতে দিতে পারছি না। কেন মিথ্যা কথা বলেন। এখানে অনেক আইনজীবী আছেন তারা বলছেন যে ৪০১ ধারাতে বলা আছে, একমাত্র সরকারই পারে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ সরকারের, শেখ হাসিনা সরকারের। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার ক্ষতি হয় এ দেশের মানুষ কোনোদিন আপনাদের রেহাই দেবে না। দায় সব আপনাদেরকে বহন করতে হবে।'
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'গতকালও তার রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে তা বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। গতকাল সোমবার রাতে ১২টায় ডা. জাহিদ আমাকে টেলিফোন করলেন, আপনি এখনই চলে আসুন হাসপাতালে। আমি রাতেই হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি আমাদের যে সব চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করছেন প্রায় ১০ জন, তারা বসে আছেন। প্রত্যেকের মুখ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন-চিন্তিত। তারা বললেন, আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, যেটা ভয় পাচ্ছিলাম আমরা বলেছিলাম যে কোনো সময় আবার রক্তক্ষরণ হতে পারে, কালকে আবার রক্তক্ষরণ হয়েছে।'
'আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের সেই চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গত ৩টা সংকট যেভাবে পার হয়েছে, গতকাল রাতেও তারা সেই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। একজন সংগ্রামী মহিলা দেশনেত্রী তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, অসুখের সঙ্গেও পাঞ্জা লড়ছেন,' যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আল্লাহর অশেষ রহমত সকালে উঠে আমি আবার ডা. জাহিদকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি আমাকে জানালেন, ম্যাডাম এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো।'
'এই ভালো, এই ভালো নয়। ডাক্তাররা পরিস্কার করে বলেছেন যে, তার যে অসুখ সেই অসুখের চিকিৎসা এখন আর এখানে নেই। এই চিকিৎসা করতে হলে তাকে অবশ্যই বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে, যেখানে উন্নত চিকিৎসা সম্ভব,' যোগ করেন তিনি।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড অবিলম্বে তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ইতিমধ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তবে সেই আবেদনের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে আমরা বেগম জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কাদের সামনে বলেছেন? কূটনীতিকদের সামনে, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের সামনে। কেন বলেছেন? বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা, রাষ্ট্রদূতরা ইতোমধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে সরকারের ওপরে যে বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠাও চিকিৎসার জন্য।'
'তার প্রমাণ আপনারা দেখেন। গণতন্ত্র সম্মেলন হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। কেন? বাংলাদেশ এখন আর গণতন্ত্রের দেশ নেই। শেখ হাসিনার অধীনে, এই সরকারের অধীনে নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে, তাদের কর্তৃত্ববাদের, স্বৈরাচারের কারণে আজকে এই দেশ পুরোপুরি একটা কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে,' বলেন তিনি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সম্পর্কে সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কি জাতি আমরা, আমরা এমন একটা সরকার পেয়েছি জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। একজন মন্ত্রী বলছেন, ডাক্তাররা সাহেবকে বিএনপি যা বলতে বলেছে তারা তাই বলছেন। ধিক্কার দেই, ধিক্কার দেই আমি সেই মন্ত্রীকে। যিনি এভাবে বিদ্রূপ করে কথা বলেন।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ চায় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা হোক। আমাদের এখানে যে সব লোকজন আসছেন, আমার ডানে একজন রোজা রাখছে, নামাজ পড়ছে যে আল্লাহ তার হায়াত বাড়িয়ে দাও তিনি যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন। এই যে কোটি কোটি মানুষের আহাজারি, এই যে কোটি কোটি মানুষের ফরিয়াদ আল্লাহ কাছে নিশ্চয় পৌঁছাচ্ছে। তিনি নিশ্চয়ই বেগম খালেদা জিয়াকে সুস্থ করবেন, আবার আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন।'
সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। বিশেষ করে আমার তরুণ ছাত্র যুবক ভাইদের কাছে আহবান করতে চাই, এ দেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া। তোমাদের জেগে উঠতে হবে, তোমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমাদেরকে সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরাবো এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করব।'
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুর দেড়টায় সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ হয়। 'মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই' শ্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে। সমাবেশে ৪টি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।
Comments